২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার
০২ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৫১ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম
২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। নিঃসন্দেহে তামাক মহামারী রোধ করতে এই উদ্যোগটির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রশ্ন হলো, এই লক্ষ্য অর্জন করা কী সম্ভব?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীর সংখ্যা আনুমানিক ৬.২ মিলিয়ন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি তামাকবিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যা ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জনসাধারণের চলাচলের স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধকরণ, ১৮ বছরের নিচে কারও কাছে তামাক বিক্রয় বন্ধ, মোড়কের গায়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি সমন্বিত ছবি প্রদর্শন এবং তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধে নীতিমালা। এছাড়াও, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার রোধে এসব পণ্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করা হয়েছে।
তবে অনেক বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা গৃহীত থাকা সত্ত্বেও ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনও লক্ষ লক্ষ মানুষ নিকোটিন গ্রহণ করছে। এই অবস্থা নিরসনে এমন নতুন কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যা তামাকজনিত ধূমপানের এই অভ্যাস ও ক্ষতি কমানোর চেষ্টায় কাজ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের তামাকমুক্ত ভবিষ্যত গড়তে এবং মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যে এখনই উপযুক্ত সময় তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে এর বিকল্প ব্যবহার বের করা।
কম ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প পণ্যগুলোর লক্ষ্য হলো ক্ষতিকারক টক্সিনের মাত্রা হ্রাস করে ব্যবহারকারীকে পর্যাপ্ত নিকোটিন সরবরাহ করা। বাজারে চলমান সিগারেটগুলো থেকে নতুন এই বিকল্প ধরণগুলো যথেষ্ট নিরাপদ যা ধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। গতানুগতিক সিগারেটের তুলনায় নিরাপদ এই বিকল্প ধরণগুলো ৯০-৯৯% কম ক্ষতিকারক বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো তামাক, তবে, যে কেউ চাইলেই এটি এড়াতে পারে। নিকোটিন যদিও আসক্তির উদ্রেক করে, তবে এটি ক্যান্সার তৈরি করে না। ধূমপানের ফলে এই স্বাস্থ্যঝুঁকি মূলত আগুনে পোড়া তামাকের ধোঁয়া থেকে আসে। এর ফলে বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে। যদি এই প্রক্রিয়া থেকে কোনোভাবে তামাক পোড়ানো অপসারণ করা যায়, তাহলে এটির ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে আনা যাবে। এই বিকল্প ধরণগুলো দ্বারা প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের গতানুগতিক ধূমপানের ধারা থেকে বের করে এনে ক্ষতিকারক পদার্থের দ্বারা স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, একটি জলন্ত সিগারেট ৮৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা তৈরি করতে পারে। এই ধরনের উচ্চ তাপমাত্রা ৬০০০টিরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং কার্সিনোজেনিক কণার একটি জটিল মিশ্রণ তৈরি করে যা বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। কিছু অভিনব ও নিরাপদ বিকল্পগুলো তাপমাত্রা খুব নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে দহন ও দহনের ফলে তৈরি উপজাতগুলো ছাড়াই কাজ করে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। যেসব ধূমপায়ীরা এই অভ্যাস পরিত্যাগে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা এই বিকল্পগুলো ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
তাই, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, তামাকজাত দ্রব্যের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি কমানোর জন্য নিরাপদ বিভিন্ন বিকল্পগুলো একটি কার্যকর পথ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইডেনের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত নিরাপদ এই বিকল্পগুলো গ্রহণ করে ধূমপানের ঘটনা হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, জাপানে ধূমপানের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যেখানে প্রতি দশজন জাপানি ধূমপায়ীর মধ্যে প্রায় তিনজন সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সুইডেনে গত ১৫ বছরে দেশব্যাপী ধূমপানের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমে মাত্র ৫.৬ শতাংশ হয়েছে এবং ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ দেশটি তামাকমুক্ত হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইইউতে সর্বনিম্ন শতাংশ তামাকজনিত রোগ এবং ৪১ শতাংশ ক্যান্সারের ঘটনা রেকর্ড করেছে সুইডেন।
এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে এই কৌশলগুলোর বোধগম্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রচার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা তামাকের আসক্তির সাথে লড়াই করছেন এবং এটি ছেড়ে দেওয়া কঠিন বলে মনে করছেন তারা দুটি পথের মধ্যস্থানে অবস্থান করে, একটি ছেড়ে দেওয়া, আরেকটি মৃত্যু। এই বিকল্পগুলো স্থাপন করার মাধ্যমে সরকারের জন্য নিরাময়ের পরিবর্তে প্রতিরোধের করে জীবন বাঁচানোর একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি হয়। নিঃসন্দেহে, এটি সরকারকে আরও বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, নিরাপদ এই বিকল্পগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।
বাংলাদেশকে তামাক মহামারীর সাথে লড়াই করার এবং জনস্বাস্থ্যের সার্বিক দৃশ্যকে পুনর্নির্মাণ করার জন্যে নিরাপদ বিকল্পগুলো একটি সুযোগ তৈরি করেছে। একটি তামাকমুক্ত ভবিষ্যতের নির্মাণ কেবল নিয়ন্ত্রণই নয় বরং উদ্ভাবন এবং যথাসম্ভব ক্ষতি হ্রাস করাও প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যটি সফল হলে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সামনে একটি রোল মডেল হয়ে উঠবে। একইসাথে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং জনস্বাস্থ্য নীতিকে একত্রিত করে ২০৪০ সালের মধ্যে একটি তামাকমুক্ত ভবিষ্যত গড়ার জন্য একটি বিশাল কৃতিত্ব অর্জন করতে পারে।
মাহাবুবা আফরিন
লেখক: ডক্টরাল শিক্ষার্থী, হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান