ঢাকা   শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮ কার্তিক ১৪৩১

ক্লিনটনের ‘হামাসের দোষ’ বক্তব্যে তোলপাড়

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের কারণেই ইসরায়েল গাজায় বেসামরিক লোকদের হত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও, ‘ফিলিস্তিনিদের আগেই ইসরায়েলিরা এই পবিত্র ভূমিতে (মধ্যপ্রাচ্যে) ছিল’ বলে মন্তব্য করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ও আরব আমেরিকান সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
বুধবার মিশিগানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সমর্থনে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করেন ক্লিনটন। তিনি বলেন, মিশিগানে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুটি জটিল। এখানকার তরুণ ফিলিস্তিনি ও আরব আমেরিকানরা গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন।
তিনি এ সময় বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, হামাস ইসরায়েলিদের হত্যা করতে এবং ইসরায়েলকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে চেয়েছিল। গাজায় তারা বেসামরিক লোকদের দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে ইসরায়েলি সেনারা হামাসের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে সেখানকার বেসামরিক লোকদেরকে হত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে।
এই অঞ্চলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদেরও আগে থেকে অবস্থান করছিল উল্লেখ করে ক্লিনটন আরও বলেন, এ কারণেই ইসরায়েলিরা অধিকৃত পশ্চিম তীরকে উল্লেখ করতে গিয়ে জুডিয়া ও সামারিয়ার মতো নাম ধরে ডাকে।
ক্লিনটনের এসব বক্তব্য অনলাইনে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করে। আরব ও মুসলিম সম্প্রদায় তার বক্তব্যকে বর্ণবাদী, গণহত্যা, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এবং শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ প্রত্যাখ্যানকারী হিসাবে ব্যাখ্যা করে। সাংবাদিক গিদা ফাখরি তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, তিনি মানবতার প্রকৃত দুঃখ এবং মানুষের ক্ষোভকে দেখতে পাননি। তিনি মিথ্যা একটি আখ্যানকে সবার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। তিনি তার শ্রোতাদের দেখিয়েছেন, তিনি আসলে তাদের জন্য নন, বরং তিনি অন্য কারো অনুমোদনের জন্যই সেখানে এসেছেন এবং বক্তব্য দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি লেখেন, এই ডেমোক্রেটিক পার্টিও আসলে রিপাবলিকান পার্টির মতো একই ধরনের বর্ণবাদ, অবিচার, সহিংসতা ও নিপীড়নে জড়িত। তবে তারা রিপাবলিকানদের চেয়ে কিছুটা মার্জিত উপায়ে তা প্রকাশ করে থাকে।
আরেক সাংবাদিক মেহেদি হাসান এই মুহূর্তে ক্লিনটনকে মিশিগানে পাঠানোর ডেমোক্রেটিক দলের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, যেখানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী-শিশুদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন এটাকে ‘হামাসের দোষ’ উল্লেখ করে মুসলমানদের সামনে বক্তৃতা করতে হাজির হয়েছেন তিনি। তার এই বক্তব্য এই মুহূর্তে মিশিগানে ডেমোক্রেটিক পার্টির পরাজয়ের পেছনে অবদান রাখবে।
মিশিগানের ডিয়ারবর্নের মেয়র আবদুল্লাহ হাম্মুদ ডেমোক্র্যাটিক নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, এখানকার সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধা বা সম্মান নেই, এমন প্রতিনিধি পাঠানো বন্ধ করুন। কারণ এর মাধ্যমে আপনি কেবল দলের আরও ক্ষতি করছেন।
আমেরিকার বৃহত্তম আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের আবাসস্থল মিশিগানে নির্বাচনী জরিপে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে একই অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করতে যে কোনো প্রার্থীর জন্য এ রাজ্যে জয় পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এ হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে অভিযুক্ত করেছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র বিরামহীনভাবে তাদের সার্বিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সূত্র : আনাদোলু।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কন্যার নাম প্রকাশ করলেন রণবীর-দীপিকা দম্পতি,দিয়েছেন মিষ্টি ছবি

কন্যার নাম প্রকাশ করলেন রণবীর-দীপিকা দম্পতি,দিয়েছেন মিষ্টি ছবি

তুরস্কে বিজয়ী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজকে অভিনন্দন জানালেন পীর সাহেব চরমোনাই

তুরস্কে বিজয়ী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজকে অভিনন্দন জানালেন পীর সাহেব চরমোনাই

সিলেট মহানগর ‘বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

সিলেট মহানগর ‘বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

শেরপুরে তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু

শেরপুরে তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু

কাঁচা সড়কে জনদুর্ভোগ

কাঁচা সড়কে জনদুর্ভোগ

দেরি করে ভাত দেওয়ায় হত্যা

দেরি করে ভাত দেওয়ায় হত্যা

গ্রামে প্রবেশের সড়ক নেই

গ্রামে প্রবেশের সড়ক নেই

বন্য হাতি হামলা

বন্য হাতি হামলা

পলো বাওয়া উৎসব

পলো বাওয়া উৎসব

গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী হাটে ময়লার স্তূপ

গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী হাটে ময়লার স্তূপ

কুয়াকাটায় ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরছে

কুয়াকাটায় ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরছে

গারো পাহাড়ে কলার আবাদ

গারো পাহাড়ে কলার আবাদ

সেতুর পনেরো শতাংশ কাজ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

সেতুর পনেরো শতাংশ কাজ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

ডেঙ্গুতে ১০ মাসে মৃত্যু ৩০০

ডেঙ্গুতে ১০ মাসে মৃত্যু ৩০০

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা

স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করতে হবে

স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করতে হবে

অনন্য চিন্তক-দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ

অনন্য চিন্তক-দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

বিদ্যুৎ সংকট আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে

বিদ্যুৎ সংকট আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে

শার্শায় আফিল জুট উইভিং ফ্যাক্টরি শ্রমিক নিহত

শার্শায় আফিল জুট উইভিং ফ্যাক্টরি শ্রমিক নিহত