সিরিয়ার রক্তাক্ত ইতিহাস , গণহত্যা ক্ষেত্রে শিশুরা খুঁড়ে পেল মানুষের খুলি

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ এএম

সিরিয়ার তাদামুন এলাকায় দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর, এক অন্ধকার ইতিহাস উদঘাটিত হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিলিশিয়াদের হাতে হাজারো নিরীহ মানুষ খুন, ধর্ষণ এবং নির্যাতিত হয়েছে। সম্প্রতি, কিছু শিশু তাদামুনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানবকঙ্কাল উত্তোলন করে, যা এই অঞ্চলের ভয়ঙ্কর অতীতের প্রমাণ। তারা যখন কঙ্কালগুলি বের করছিল, তখন এক শিশু বলেন, “এখানে রক্তের দাগ!” এই ঘটনা তাদামুনের ইতিহাসের এক চরম দিক প্রকাশ করে।

 

২০১১ সালে সিরিয়া গৃহযুদ্ধের মধ্যে তাদামুন ছিল একটি বিদ্রোহী শক্তির কেন্দ্রস্থল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি গণহত্যার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। বাশার আল-আসাদ এবং তার মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। এই এলাকা এখন এক বিভীষিকা, যেখানে স্থানীয়রা বলেন, "এখানে যাদের ধরে আনা হয়েছিল, তারা আর ফিরে আসেনি।" এখানকার মানুষেরা শিকার হয়েছে ভয়াবহ অত্যাচারের, যেগুলি এখন ধীরে ধীরে সামনে আসছে।

 

তাদামুনের "এক্সিকিউশন রোড" নামক রাস্তায় স্থানীয়রা নিজের জীবনের গল্প প্রকাশ করছেন। তারা জানাচ্ছেন, এই এলাকায় তাদের আত্মীয়দের অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এক ব্যক্তি জানান, তার ১৪ জন পরিবারের সদস্য এই এলাকার মিলিশিয়াদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যরা বলেন, তারা নিজেদের সন্তানদের বাঁচানোর জন্য ১০ বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছিল। এমনকি তাদামুনের ভূখণ্ডে এখনো খোঁজা হচ্ছে হাজার হাজার নিখোঁজ ব্যক্তির কবর।

 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টে তাদামুনকে "একটি বৃহৎ অপরাধস্থল" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই এলাকায় অনেকগুলি গণকবর বিদ্যমান বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই খুন-খারাবির জন্য সারা বিশ্বে এখন বিচার দাবি করা হচ্ছে। সিরিয়ার নতুন প্রশাসন এই গণকবরগুলোর তদন্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সহায়তায় কাজ শুরু করতে চায়।

 

২০২২ সালে তাদামুন থেকে একটি হৃদয়বিদারক ভিডিও ফাঁস হয়, যেখানে চোখ বেঁধে ও হাত বাঁধা মানুষদের কাছ থেকে একে একে গুলি করে মারা হচ্ছিল। এই ভিডিওতে ২৮৮ জনের মৃত্যুর চিত্র দেখা যায়, যাদের মধ্যে ৭টি মহিলা এবং ১২টি শিশু ছিল। এমনকি অনেক নির্যাতিত ব্যক্তি এখনও তাদের পৈশাচিক শাসক "মারিও"র নাম মনে করেন, যিনি মহিলাদের সামনে তাদের স্বামীদের হত্যা করতেন। এর ফলে তাদামুনের উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই অত্যাচারের প্রমাণ এখন বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছেছে।

 

আজকের তাদামুনে পরিবারগুলো তাদের ক্ষতিগ্রস্ত জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে বাঁচতে চায়। তারা জানিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীকে তাদের কষ্টের কথা শোনানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদামুনের নির্মম ইতিহাস যেন আর কখনও কোনো জনগণের ভাগ্যে না আসে, এই কামনাই তাদের। তথ্যসূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত
ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি
বিমান বিধ্বস্তের পর টিকিট বাতিলে হিড়িক
বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা
আরও

আরও পড়ুন

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আড়ানী পৌরসভায় ৫০০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ

আড়ানী পৌরসভায় ৫০০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ

হালুয়াঘাটে ধরাছোঁয়ার বাইরে পাচার চক্রের ভারতীয় র'য়ের এজেন্ট সেই শুকান্ত দত্ত

হালুয়াঘাটে ধরাছোঁয়ার বাইরে পাচার চক্রের ভারতীয় র'য়ের এজেন্ট সেই শুকান্ত দত্ত

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে

ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি

ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি

আটঘরিয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান

আটঘরিয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল

ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই : আমিনুল হক

ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই : আমিনুল হক

রাজধানীতে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করছে বিএনপি

রাজধানীতে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করছে বিএনপি

খুলনা-চট্টগ্রাম ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ নাটক

খুলনা-চট্টগ্রাম ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ নাটক

মেহেরপুরে প্রবীণ সাংবাদিক রশিদ হাসান খান আলোর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

মেহেরপুরে প্রবীণ সাংবাদিক রশিদ হাসান খান আলোর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

সুন্দর সমাজ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই সৈয়দপুরে -বেবী নাজনীন

সুন্দর সমাজ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই সৈয়দপুরে -বেবী নাজনীন

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্চায় ব্যস্ত

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্চায় ব্যস্ত

দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে ছাত্রদল নেতা গুরুতর জখম

দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে ছাত্রদল নেতা গুরুতর জখম