আল কুরআনের দৃষ্টিতে তাওবা ও ইস্তিগফারের গুরুত্ব ও ফজিলত-২
১৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ এএম
হযরত সালেহ (আ.) কতৃর্ক তাঁর উম্মতকে তাওবা ও ইস্তিগফার শিক্ষাদান : আমি ছামুদ জাতির কাছে সালেহকে প্রেরণ করেছি। তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই। তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তোমাদেরকে তাতে বসবাস করিয়েছেন। তাই তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন কর। নিশ্চয়ই আমার রব অতি নিকটে এবং দুয়া কবুলকারী। (সূরা হুদ : ৬১)।
এভাবে সকল নবী উম্মতকে আল্লাহর দরবারে নিজেদের ভুলত্রুটি ও গুনাহের জন্য তাওবা ও ইস্তিগফার করার আদেশ করেছেন এবং নিজেদের জীবনকে শিরকের গুনাহ থেকে শুরু করে সকল গুনাহ থেকে পবিত্র করার জন্য তাওবা ও ইস্তিগফার শিক্ষা দিয়েছেন। তাই দ্বীন ও শরীয়তে তাওবা ও ইস্তিগফারের গুরুত্ব অপরিসীম।
তাওবা ও ইস্তিগফার মুমিনকে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা ও দয়া লাভে সাহায্য করে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা বাকারা : ১৯৯)। তিনি আরও বলেন : তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর কাছে ফিরে আস। নিশ্চয়ই আমার রব অতি দয়ালু ও অধিক মমতাময়। (সূরা হুদ : ৯০)।
তাওবা ও ইস্তিগফারকারীদের প্রতি আল্লাহ শাস্তি প্রেরণ করেন না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় কিছুতেই আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন না। আর তারা ক্ষমা প্রার্থনা করা অবস্থায়ও তাদেরকে শাস্তি দেবেন না। (সূরা আনফাল : ৩৩)।
এমনকি তাওবা-ইস্তিগফারের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো জাতির ওপর শাস্তি আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সে শাস্তিকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে হযরত ইউনুস (আ.)-এর কওমের ঘটনা উল্লেখযোগ্য, যা আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : কেন কোনো জনপদবাসীরা ঈমান আনয়নকারী হলো না? তাহলে তাদের ঈমান তাদের উপকারে আসত। তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতিক্রম। তারা যখন ঈমান আনল তখন আমি পার্থিব জীবনে তাদের ওপর থেকে লাঞ্ছনার আজাব তুলে নিলাম এবং তাদেরকে একটা সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করতে দিলাম। (সূরা ইউনুস : ৯৮)।
হযরত ইউনুস (আ.) তাঁর কওমকে তাওহিদের দাওয়াত দিলেন এবং তাদেরকে বহুভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন; কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিলো না। বরং তাদের অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘনে ডুবে থাকল। তখন তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি আসার প্রতিশ্রুতি শুনিয়ে দিলেন। হযরত ইউনুস (আ.) যেহেতু বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাদের ওপর তো এখন শাস্তি আসা অবধারিত, তাই তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন। তারা হযরত ইউনুস (আ.) কে যখন খুঁজে পেল না তখন তারা বুঝতে পারল যে, এখন তো আমাদের ওপর শাস্তি এসেই যাবে। তাই তারা তাওবা-ইস্তিগফার করতে লাগল। তাদের এ অবস্থা দেখে আল্লাহ তায়ালা আর শাস্তি প্রেরণ করলেন না। এভাবে তারা তাওবা ও ইস্তিগফারের ফলে আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে গেল।
তাওবা ও ইস্তিগফার মুমিনের পার্থিব নিয়ামত, শক্তি সামর্থ্য ও যাবতীয় সমৃদ্ধি লাভে সাহায্য করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আমি বললাম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের প্রতি মুষলধারে বৃষ্টি প্রেরণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে সম্পদ ও সন্তানাদি বৃদ্ধি করে দেবেন। তিনি তোমাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যান ও নদ-নদী সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা নূহ : ১০-১২)।
এভাবে কুরআন মাজীদ তাওবা ও ইস্তিগফারের অনেক ফায়দা ও উপকারের কথা তুলে ধরেছে। তাই আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা, দয়া এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সব দিক থেকে তাঁর সাহায্য লাভ করার জন্য তাওবা ও ইস্তিগফারের বিকল্প নেই।
তাওবা ও ইস্তিগফারের উপকারিতায় রাসূলে কারীম (সা.)-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন : যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল সংকট থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করে দেন, তার সকল পেরেশানী দূর করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সুনানে আবু দাউ : ১৫১৮)।
মোটকথা, তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে একজন মুমিনের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও সফল হয়। এর মাধ্যমে একজন মুমিন লাভ করে উভয় জাহানের সমৃদ্ধি। সর্বোপরি তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহ তায়ালার নিকটতম বান্দায় পরিণত হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সগিরা-কবিরা গুনাহসহ সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ ক্ষমা করেন। এবং আমাদেরকে সব ধরনের গুনাহ থেকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত