ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

লজ্জাশীলতা : পূর্ণ ঈমানের জন্যে যা অনিবার্য-১

Daily Inqilab শিব্বীর আহমদ

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

কথায় বলে, লজ্জা নারীর ভূষণ। লজ্জাশীলতার গুণ নারীর চরিত্রে যোগ করে এক ভিন্ন মাত্রা। এ গুণ তাকে পাইয়ে দেয় পবিত্র ও সুন্দর জীবনের স্বাদ। পবিত্র কুরআনের কাহিনী। ফেরাউনের রাজপরিষদ একবার নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সংবাদ পেয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ফেরাউনের এলাকা ছেড়ে। চলে গেলেন মাদয়ানে, আরেক নবী হজরত শুয়াইব আলাইহিস সালামের এলাকা সেটি। তিনি দেখলেন, মাদয়ানবাসীরা একটি কূপ থেকে তাদের পশুকে পানি খাওয়াচ্ছে। কূপের পাশে রাখাল-জনতার ভিড়।

আর একটু দূরে নিজেদের পশু আগলে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন দুই নারী। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাদের কাছে দূরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলেন। তারা জানালেন, ‘আমাদের বাবা অতিশয় বৃদ্ধ। তাই পশুগুলোকে পানি খাওয়ানোর জন্য আমাদের আসতে হয়েছে। কিন্তু রাখালেরা এখান থেকে চলে যাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের পশুদের পানি খাওয়াতে পারি না।’ তারা দুজন ছিলেন হজরত শুয়াইব আলাইহিস সালামের কন্যা। তাদের এ কথা শুনে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাদের পশুকে পানি খাইয়ে দেন। এরপর তারা চলে যায়। তিনিও সেখান থেকে চলে আসেন এক গাছের ছায়ায়...।

এরপর তাদের একজন তার কাছে আবার ফিরে আসে। কুরআনের ভাষায়Ñ ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত চরণে তার নিকট এল এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর প্রতিদান দেয়ার জন্য।’ (সূরা কাসাস-২৫) এই যে রাখালদের ভিড় ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, আর বাবার পক্ষ থেকে অচেনা এক পুরুষের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেয়ার সময় নিজেকে লজ্জায় আবৃত করে রাখাÑ এগুলো চিরাচরিত সেই প্রবাদকেই মনে করিয়ে দেয়।

সৃষ্টিগতভাবেই নারীর চরিত্রে লজ্জাশীলতা একটু বেশি। এই লজ্জাশীলতা নারীর অহঙ্কার। রূপ-সৌন্দর্যে পিছিয়ে থেকেও এ গুণে নিজেকে গুণান্বিত করে কোনো নারী হয়ে উঠতে পারে সবার প্রিয়, চোখের মণি। আর চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নিয়েও যদি কেউ এ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সে হয়ে পড়ে ধিকৃত, নিন্দার পাত্র।

প্রচলিত প্রবাদে এ লজ্জাশীলতা যদিও নারীর অলঙ্কার, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা নারী-পুরুষ সবার জন্যই অপরিহার্য। লজ্জা একটি মানবিক গুণ। এর পরিচয় হিসেবে বলা যায়, ভালো-মন্দ যেকোনো কাজ করার, যেকোনো পথ বেছে নেয়ার সুযোগ ও সক্ষমতা প্রতিটি মানুষেরই আছে। এ সুযোগ ও সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যারা ভালো পথ বেছে নেয়, ভালো কাজ করে, তারা দুনিয়াতেই পুরস্কৃত হয়, অভিনন্দিত হয় কিংবা প্রশংসিত হয়। আর যারা মন্দ পথ ও মন্দ কাজ বেছে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়, শাস্তি পায়, অন্তত নিন্দিত ও ধিকৃত তো হয়ই।

উপরন্তু ভালো-মন্দ সব কিছুতেই রয়েছে পরকালীন প্রতিদানÑ বেহেশত কিংবা দোজখ। প্রাথমিক সুযোগ ও সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কেউ যখন কোনো মন্দ পথে পা বাড়ায়, সেটি হতে পারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মন্দ, কিংবা সামাজিক বা নৈতিক যেকোনো দিক থেকে, তখন যার মাঝে যতটুকু মানবিক বোধ থাকে এবং কাজটিকে সে যতটুকু মন্দ বিবেচনা করে, সে চায় তার এ মন্দ কাজটা ততটাই গোপন থাকুক। অন্য কেউ তার এ মন্দ কাজের কথা না জানুক। কেউ যদি দেখে ফেলে কিংবা জেনে যায় তাহলে সে মনে মনে সঙ্কুুচিত হয়। এ সঙ্কোচবোধের নামই লজ্জা।

লজ্জাশীলতা যে কেবল একটি মানবিক বিষয়, এমন নয়। হাদিসের ভাষ্য অনুসারে তা ঈমানের অংশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানের সত্তরোর্ধ কিংবা ষাটোর্ধ্ব শাখা রয়েছে। এর মাঝে সর্বোত্তম হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, আর সর্বনি¤œটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা।’ (সহিহ মুসলিম-৩৫) শুধুই কি ঈমানের শাখা? এ লজ্জাশীলতাকে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্বীন ইসলামের মূল চরিত্র হিসেবেই অভিহিত করেছেন, ‘প্রতিটি দ্বীনেরই একটি চরিত্র রয়েছে। ইসলামের চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৪১৮১)

লজ্জাশীলতা যার মাঝে যতটুকু থাকে, প্রকাশ্যে কোনো অন্যায় করতে সে ততটাই সঙ্কোচ বোধ করে। এর ফলে সহজেই সে বেঁচে যায় বহু অন্যায় কাজ থেকে। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, এ লজ্জাশীলতার কারণে তখন বাধ্য হয়েই মন্দ কাজ আর মন্দ পথ পরিহার করে চলতে হয় সুন্দর ও ন্যায়ের পথে। প্রিয় নবীজী (সা.) এর কী অর্থপূর্ণ সরল বাণী, ‘লজ্জাশীলতা কেবলই কল্যাণ নিয়ে আসে’। (সহিহ বুখারি-৬১১৭)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-২
ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-১
বিনয় : মুমিনের এক অপরিহার্য গুণ-২
বিনয় : মুমিনের এক অপরিহার্য গুণ-১
যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে সে যেন জবানের হেফাজত করে-২
আরও

আরও পড়ুন

সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন টেটা বৃদ্ধ, আহত ১০

সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন টেটা বৃদ্ধ, আহত ১০

হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?

হাসিনাকে কি বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হবে?

জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সেবা সহজীকরণ অনুষ্ঠান

জকিগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের সেবা সহজীকরণ অনুষ্ঠান

লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া

লাকসামে বিএনপির আজিম-কালাম গ্রুপ মুখোমুখি: ককটেল বিস্ফোরণ, অস্ত্রের মহড়া

ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

ভুয়া পেইজে ঢাবি প্রশাসনসহ অনেকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এডমিন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূ‌র্তে নির্বাচন হ‌লে বিএন‌পি ৯০ শতাংশ ভোট পা‌বে: ফজলুর রহমান

ইটনায় বিএনপির স্বাধীনতার বিজয় উৎসবে নেতাকর্মী ও জনতার ঢল এই মুহূ‌র্তে নির্বাচন হ‌লে বিএন‌পি ৯০ শতাংশ ভোট পা‌বে: ফজলুর রহমান

ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও

ব্যান্ড সঙ্গীত ও বাইকপ্রেমীদের জন্য সুজুকি ও আর্টসেলের নতুন মিউজিক ভিডিও

বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স

বিএনপি সকল ধর্ম -বর্ণ-গোত্রের দল : প্রিন্স

বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।

বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'

`আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে'

সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!

‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!

ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু

ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু

লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার

লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল

দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে:   মেজর হাফিজ

দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে:   মেজর হাফিজ

শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক

শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক

দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন

দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন