ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যুবকরাই ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রধান সৈনিক

Daily Inqilab ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

বিশ্বময় ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে মূলত দাওয়াতের মাধ্যমে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা সারাবিশ্বের জন্য দ্বীন প্রচারক ও মহান শিক্ষকরূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি প্রধানত মানুষকে এক আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করাকে তিনি তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের কাজ বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : বলুন, এটাই আমার পথ যে, আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করি জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা। (সূরা ইউসুফ : ১০৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর বাণী মানবজাতির নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। দ্বীন তথা ঈমান, সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ, জিহাদসহ সমস্ত ফরজ বিধান কায়েম করেছেন। সকল মিথ্যা ইলাহের পতন ঘটিয়ে সত্য একমাত্র ইলাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশ্বাসকে মানুষের মনে গ্রথিত করেছেন। সকল দ্বীনের ওপর আল্লাহর হেদায়েত এবং দ্বীনে হককে বিজয়ী করেছেন। যে কাজটির জন্য আল্লাহ তাকে নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছেন। কোরআনের ভাষায় : তিনিই তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ, সকল দ্বীনের ওপর তাঁকে বিজয়ী করার জন্য। (সূরা সাফ : ০৯)।

আল্লাহর শেষ কিতাবের ধারক এবং শেষ নবুওয়াতের বাহক হিসেবে তিনি মানবজাতির নিকট সত্যদ্বীন, সরলপথ ও কল্যাণকর শরীয়তের দাওয়াত উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এ মহান কাজে তুলনামূলকভাবে যুব সমাজ বেশি সহযোগিতা করেছে। তাই তিনি বলেন : মহান আল্লাহ আমাকে একটি উদার দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন। অতঃপর যুবকরা আমায় সহযোগিতা করেছে আর বৃদ্ধরা সাধারণত করেছেন বিরোধিতা। (বুখারি)। অন্যত্র বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সে যুবকই শ্রেষ্ঠ, যে কথায় ও কাজে তোমাদের প্রবীণদের অনুকরণ করে। (ইমাম সুয়ূতী)।

আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখি, দেখি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ২০ জনের প্রায় সবাই ছিলেন কিশোর, তরুণ, যুবক। মদীনা ও হাবাশায় হিজরতকারী অগ্রবর্তীদল ছিল যুবকদের। মহানবী (সা.)-এর সেনাপতিগণ সবাই বয়সে তরুণ ছিলেন। পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর দক্ষিণে দ্বীন প্রচারে যুবক সাহাবাগণের ভূমিকাই বেশি ছিল। শুধু তাই নয়, যতদিন যুব সমাজ দ্বীনের তা‘লীম, দাওয়াত ও জিহাদে নিয়োজিত ছিলেন ততোদিন ইসলামের গৌরব, শক্তি, শাসন ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অটুট ও অবিসংবাদিত ছিল।

সুতরাং আজও যদি যুব সমাজকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও তারবিয়াত দিয়ে দেশে দেশে বা সমাজে ইসলামের সুমহান শিক্ষা, আদর্শ, নৈতিকতা তথা শরীয়তের অনুশীলন, প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত করা যায় তবে সকল প্রকার অবক্ষয়, অধোপতন ও পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুসলিম জাতি নিরাপদ থাকতে সক্ষম হবে। ইনশা আল্লাহ। ঈমানের সাথে নেক আমল করা এবং ইসলাম প্রচারের কাজটি অনেক মর্যাদা ও সম্মানের। পবিত্র কুরআন ঘোষণা করেছে : তাঁর চেয়ে উত্তম কথা আর কার? যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, সৎকাজ করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি একজন সত্যিকার মুসলিম। (সূরা হামীম সাজদাহ : ৩৩)।

তোমার প্রতিপালকের পথে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশ দ্বারা আহ্বান করো আর যখন তাদের সাথে প্রয়োজনে বিতর্ক করবে সর্বোত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল : ১২৫)। এখানে হিকমত অর্থ কুরআন-সুন্নাহ ও অকাট্য যুক্তি প্রমাণ। মাওয়িজাহ হাসানাহ অর্থ কোন প্রকার স্বার্থহীন শুভেচ্ছামূলক বক্তব্য। অতএব বুঝা গেল, দ্বীন প্রচারকদের এসব শেখানোর প্রয়োজনীয়তা সবার আগে।

আমাদের দেশে অত্যাচারি, স্বৈরশাসকের ফ্যাসিবাদ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য ছাত্র-জনতাকে নিয়ে সম্প্রতি যে গণঅভ্যুত্থান হলো এর নেতৃত্ব দিয়েছে একদল আদর্শবান তরুণ ও যুবসমাজ। আবারো তারা প্রমাণ করেছে যে, সমাজ, সংসার, দেশ বা পৃথিবীতে বৈপ্লবিক কিছু করার জন্য নীতিবান যুব সমাজের প্রয়োজন সর্বাধিক।
বর্তমান বিশে^র সকল অন্যায়, অবিচার, অনাচার-পাপাচার প্রতিরোধ করে নৈতিকতা ও আদর্শ প্রচারের জন্য যুব সম্প্রদায়কে ইসলামের শিক্ষা ও দাওয়াতি কার্যক্রমে সংযুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। সমস্ত অজ্ঞতা, অন্ধকার, সংশয়, দুঃখ ও গ্লাণির পথ ছেড়ে আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ, সুন্নাহ ও আখলাকের পথে যুব সমাজকে আহ্বান জানানোর দায়িত্বও আমাদের। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি মুসলিমের বাড়ি-ঘর, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, পাঠাগার, ইসলামিক সেন্টার বা গবেষণা কেন্দ্রে যুবকদের জন্য পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহ, আরবি ভাষা, সীরাত ও ইসলামের দাওয়াতি ইতিহাস পাঠদান করা। সম্ভাব্য সকল স্থানে দ্বীন শিক্ষার এসব কোর্স চালু করে ব্যাপক চর্চার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

পাশাপাশি কিশোর-তরুণ, যুবক ও যুব মহিলাসহ সমাজের সাধারণ শিক্ষিত মানুষদেরকে ইসলামের সুযোগ্য দাঈ তথা প্রচারক হিসেবে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, ইসলামের আলোকে সমাজ সংস্কার, বৈষম্যমূলক সকল ব্যবস্থার অপনোদন, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সমস্ত নীতির পরিবর্তন, দেশের সব সেক্টরে শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়ন, সর্বত্র ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিদগ্ধ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সুযোগ্য দায়িত্বশীলগণের সহযোগী রূপে যুব সমাজের ভূমিকা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুশিক্ষিত ও চরিত্রবান যুবক-তরুণরাই সর্ব সাধারণের নিকট ইসলামি সমাজ-ব্যবস্থা তথা কুরআনি শাসনকে জনপ্রিয় করতে সক্ষম।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা

উত্তরায় মা ও শিশুর গায়ে এসিড ছুড়ে স্বর্ণালংকার লুট

উত্তরায় মা ও শিশুর গায়ে এসিড ছুড়ে স্বর্ণালংকার লুট

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ, ট্রলারসহ ১৬ ভারতীয় জেলে আটক

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ, ট্রলারসহ ১৬ ভারতীয় জেলে আটক