অল্পেতুষ্টি : যেখানে নিহিত প্রকৃত সুখ ও সফলতা-২
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম

একজন মানুষের একটি নিরাপদ নিবাস, সুস্থ দেহ আর পুরো দিনের খাবার-আর কী চাই! শৈশবের কোমল বয়স থেকেই যে সাহাবীগণ ইসলাম এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পরশ লাভে ধন্য হয়েছিলেন, তাদের অন্যতম উমর-পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ (রা.)। বুদ্ধি, মেধা ও বিচক্ষণতা যেমন ছিল, তেমনি প্রিয় নবীজী (সা.)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল বেশ। সম্পর্কে তো ছিলেন উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা (রা.)-এর ছোট ভাই, মানে প্রিয় নবীজীর শ্যালক! ইসলামের শিক্ষাকে আত্মস্থ করে তিনি বলেছেন : সন্ধ্যায় উপনীত হওয়ার পর সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার অপেক্ষা করবে না আর সকালে উপনীত হওয়ার পর অপেক্ষা করবে না সন্ধ্যার। সুস্থতা থেকে অসুস্থতার জন্যে এবং জীবন থেকে মরণের জন্যে পাথেয় সঞ্চয় করো। (সহীহ বুখারী : ৬৪১৬)
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনের দিকে লক্ষ্য করুন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন কেমন ছিল তাঁর সংসার জীবন এবং জীবন ও জীবিকার রূপ : রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ একই দিনে যায়তুনের তেল দিয়ে পেট ভরে দুইবার রুটি খেয়ে যাননি। (সহীহ মুসলিম : ২৯৭৪) তাহলে কি এতটুকু সম্পদ থাকলেই উপার্জন ছেড়ে দিতে হবে? না, সেটাও নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তো এমনও বলেছেন : তুমি তোমার ওয়ারিশদেরকে অসহায়-মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছে- এই অবস্থায় রেখে যাওয়ার চাইতে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া ভালো। (সহীহ বুখারী : ১২৯৫)
বোঝা যাচ্ছে, সন্তানকে ভিখারিবেশে রেখে যাওয়ার চাইতে বিত্তবান রেখে যাওয়া ভালো। তাই যদি হয়, তাহলে তো উপার্জনও করতে হবে এবং সেটাও দিন এনে দিন খাওয়ার মতো নয়, আরো বেশি। বাহ্যত এ সংঘাত নিরসনের জন্যে আমরা আরেকটি হাদিস উল্লেখ করছি। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : হে মানুষেরা, আল্লাহকে ভয় করো আর রিজিক অন্বেষণে সহজতা অবলম্বন করো। কারণ কেউ তার জন্যে নির্ধারিত রিজিক পূর্ণরূপে গ্রহণ করার পূর্বে কিছুতেই তার মৃত্যু হবে না। তাই আল্লাহকে ভয় করো এবং জীবিকা অন্বেষণে সহজতা অবলম্বন করো। যা কিছু হালাল তা গ্রহণ করো আর যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২১৪৪)
জীবিকা উপার্জন, আয় রোজগার, অল্পেতুষ্টি ইত্যাদি সব বিষয়েই এ হাদিসটিকে আমরা মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। হাদিসের নির্দেশনা তো স্পষ্টÑ আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে যার জন্যে যতটুকু রিজিক নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা সে পাবেই। নবীজী (সা.) তাগিদ ও দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, নির্ধারিত এ রিজিক পূর্ণরূপে পাওয়ার আগে কারো কাছেই মৃত্যু আসবে না। এটাই আল্লাহর ফয়সালা।
আমাদের কর্তব্য, সহজভাবে সাধ্যমতো সেই জীবিকার জন্যে চেষ্টা করে যাওয়া। এ চেষ্টা করার আদেশ আল্লাহ তাআলাও দিয়েছেনÑ ‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যেন তোমরা সফল হতে পারো।’ (সূরা জুমুআ, ১০) অর্থাৎ চেষ্টা আমাদের করে যেতে হবে। রিজিক নির্ধারিত এবং তা আসবেই এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্যÑ রিজিক যার জন্যে যতটুকু নির্ধারিত সে ততটুকুই পাবে, এর চেয়ে বেশি নয়। কিন্তু তাই বলে ঘরে বসে থাকা যাবে না। সাধ্যানুপাতে চেষ্টা করে যেতে হবে। সে চেষ্টার রূপ কেমন হবে তাই উপরের হাদিসটিতে নির্দেশিত হয়েছে, ‘জীবিকার অন্বেষণে সহজতা অবলম্বন করো।’
নিজের জন্য, নিজের পরিবার-পরিজন সন্তান-সন্ততির জন্য, বর্তমানের জন্য এবং ভবিষ্যতের জন্য উপার্জন করে যেতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই হালাল পন্থায়, বৈধ উপায়ে। ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে অবৈধ ও হারাম উপার্জনের যাবতীয় আহ্বানকে। এটাই অল্পেতুষ্টি। এ গুণে যে গুণী হবে, দরিদ্রতার মাঝে থেকেও সে পাবে বাদশাহির স্বাদ। অন্যের সম্পদ দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হবে না তার হৃদয়। আর যদি সে সচ্ছল হয় তাহলে সে তার সচ্ছলতা ও ক্ষমতায় ভর করে অন্যের দিকে যুলুমের হাত বাড়িয়ে দেবে না। অধীনস্থদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করবে না। তাদের পাওনা আদায়ে বিলম্ব করবে না।
মোটকথা, সম্পদ বৃদ্ধির সব অন্যায় পন্থাকেই সে এড়িয়ে চলবে। নবীজী (সা.)-এর দীপ্ত ঘোষণা : সেই সফল, যে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে, প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক পেয়েছে আর আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা দিয়েই তিনি তাকে তৃপ্ত রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম : ১০৫৪) অল্প সম্পদে তুষ্ট থেকে যদি কেউ এভাবে সফল হতে চায় তার জন্যে প্রয়োজন আল্লাহপাকের প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস, প্রয়োজন দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্বের স্মরণ। এ গুণ অর্জন করতে পারলে শুধু দুনিয়ার সসীম জীবনে নয়, পরকালের অনন্ত অসীম জীবনেও সফলতা পদচুম্বন করবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’, নিরাপত্তার বলয়ে সমাবেশস্থল

'বরবাদ' ছবি কীভাবে প্রদর্শনের অনুমতি পায়?

‘স্যার’ হচ্ছেন জেমস অ্যান্ডারসন

'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচিতে ঢুকে নাশকতা চালাতে পারে আ'লীগ, গোয়েন্দা তথ্যে আশঙ্কা

স্ত্রী চলে যাওয়ায় দুধ দিয়ে গোসল করলেন স্বামী, ভিডিও ভাইরাল

ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক মালদ্বীপের ৫৪টি সংগঠনের

চারুকলায় আগুনে পুড়ল আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো ফ্যাসিস্ট হাসিনার মোটিফ

চেন্নাইকে লজ্জার রেকর্ড উপহার দিল কলকাতা

গাজার মানুষ না খেয়ে আছে, চিকিৎসা পাচ্ছে না : ডব্লিউএইচও

ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশে গৃহস্থালি পানির বিধিনিষেধ বাতিল

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ২৮ বস্তা টাকা

‘মার্চ ফর গাজা’র জন্য প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী, লাখো মানুষের ঢলের অপেক্ষা

গাজা-সিরিয়ায় ইসরাইলের আক্রমণ নিয়ে এরদোগানের সতর্কবার্তা

বিতর্কিত ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল ভারতের মুর্শিদাবাদ

এশিয়ার তিন দেশ সফর করবেন শি জিনপিং

জুলাই গণঅভ্যুত্থান উজ্জীবিত আশার প্রতীক: মেক্সিকোতে স্বাধীনতা দিবসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মুশফিক

গাজা ‘পৃথিবীর দোযখে’ পরিণত হয়েছে, সংকট চরমে

উত্তাল কলকাতা, মোদি-অমিত শাহের কুশপুত্তলিকা দাহ

হার দিয়ে পিএসএল শুরু রিশাদের দলের

শেরাটন ভবনের মালিকানা বিতর্কের অবসান, হিস্যা বুঝে নিল ডিএনসিসি