গাফিলতি বা অবহেলা অন্তরকে অন্ধ করে দেয়
০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম
গাফলতি, অবহেলা, অন্যমনস্কতা ও উদাসীনতা এমন সব ভুল ও ক্ষতিকর স্বভাব, যা ব্যক্তি মানুষের উপকারী ও পুণ্যশ্রেয়ী কার্যক্রম গ্রহণ করতে এবং ক্ষতিকারক ও নিন্দনীয় বস্তুসমূহ বর্জন করতে অন্তরকে অন্ধ করে দেয়। এই অবহেলার কারণে মানুষ সৎ ও উপকারী কার্যক্রমের প্রতি অগ্রসর হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে এবং অন্তর দুর্বল ও কমজোর হয়ে যায়। অধিকাংশ অন্যায়ের মূল কারণ হলো গাফলতি বা অন্যমনস্কতা, তারপরও এই স্বভাবটি মানুষের মাঝে অধিক প্রসার ও বিস্তার লাভ করে আছে। মহান রাব্বুল আলামীন এতদ সম্পর্কে আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : আর প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ মানুষ আমার উপদেশাবলি হতে উদাসীন রয়েছে। (সূরা ইউনুস : ৯২)।
মোটকথা, গাফলতি ও অন্যমনস্কতা এমন মারাত্মক ও ভয়াবহ একরোগ যা থেকে আল্লাহপাক মানুষকে সাবধান করেছেন এবং এর অনুসারীদের সোহবত বা সানিধ্য গ্রহণ করা থেকে হুঁশিয়ার করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্পষ্টতই ইরশাদ করেছেন : হে নবী। আপনি এ ব্যাপারে উদাসীন ও গাফিল হতেন না। (সূরা আরাফ : ২০৫)। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরও ইরশাদ করেছেন : যার অন্তরকে আমি আমার যিকিরে অমনোযোগী করে দিয়েছি, সে তার খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে তুমি তার অনুসরণ করো না। (সূরা কাহফ : ২৮)।
অতএব একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, গাফলতি বা অবহেলা অন্তরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করা থেকে এবং অন্তরের উপকার, উন্নয়ন, বিকাশ, সুন্দর ও সংশোধন করা থেকে মানুষকে অমনোযোগী ও ভুলিয়ে রাখে। আজ সমাজের সর্বত্র এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং চিন্তা-চেতনা ও সতর্কতা লোপ পেতে চলেছে। তাই, এহেন অবস্থা হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা এবং সকল প্রকার মাধ্যম ও উপকরণ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেগুলো ছাড়া তা থেকে উত্তরণের কোন পথ খোলা নেই।
কারণ, অন্তরের সততা নির্মলতা, মুক্তি এবং নিষ্কৃতির জন্য এমন সব উপায় ও উপকরণ গ্রহণ করা অবশ্যই দরকার যা ছাড়া উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব নয়। তাই যে ব্যক্তি এ সকল মহা আপদ থেকে মুক্তি পেতে চায় তার উচিত, আল্লাহকে ভয় করা। আল কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহপাক তার সমস্যা সমাধান সহজ করে দিবেন। (সূরা তালাক : ৪)। এর জন্য আল্লাহর যিকিরে নিমগ্ন থাকা দরকার। তিনি তোমার সকল অবস্থায় রক্ষক হবেন এবং আল্লাহর দ্বীনের হেফাযত করা অত্যাবশ্যক।
তাহলে আল্লাহর রহমতের নিদর্শনাবলি নিজের সামনে প্রত্যক্ষ করা সহজতর হবে। এতদ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসীতে এসেছে, হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাক বলেন : বান্দাহ আমার দিকে যখন এক বিগত (অল্প পরিমাণ) অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। এবং বান্দাহ যখন আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। এবং বান্দাহ যখন আমার কাছে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌঁড়ে অগ্রসর হই। (সহীহ বুখারী : ৭৪০৫)। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা, সাধনা, সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করবো। (সূরা আনকাবুত : ৬৯)।
তাই বান্দাহ সমস্ত রোগ ও আপদ থেকে অন্তরকে বিমুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই দৃঢ় সংকল্পবন্ধ থাকতে হবে এবং সদা সর্বদা সজাগ ও সচেতন হতে হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, চিরসত্যবাদী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহপাক এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি। যে, তার আরোগ্যর জন্য ঔষধ নাযিল করেননি। (সহীহ বুখারী : হাদিস নং-৫৬৭৮)।
সুতরাং যে ব্যক্তি গাফলতির নিদ্রা থেকে সাবধান থাকতে চায় এবং আশা করে যে, কিয়ামতের দিন সফল ও কৃতকার্যদের অন্তভর্‚ক্ত হবে, সে যেন তার অন্তর রক্ষার বা হেফাজতের যাবতীয় মাধ্যম ও উপায় জানার জন্য সাবধান ও সতর্ক থাকে এবং অন্তরের চিকিৎসার জন্য পথ-ঘাট জানার চেষ্টা করে। এর জন্য তাকে অবশ্যই জ্ঞানী ও আল্লাহভীরু ও সত্যনিষ্ঠ লোকদের সঙ্গ লাভে ধন্য হতে হবে। জনৈক দরদী কবি যথার্থই বলেছেন : সোহবতে সালেহ তোরা সালেহ কুনাদ, সোহবতে তালেহ তোরা তালেহ কুনাদত। অর্থাৎ সৎ সঙ্গ তোমাকে সৎ ও নির্মল করে তুলবে এবং অসৎ সঙ্গ তোমাকে অসৎ ও পাপীর কাতারে দাঁড় করাবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম