আসর
০১ জুন ২০২৩, ০৮:২৮ পিএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৫ এএম

কার বাড়ির ছেলে কে জানে। যুবকই হবে হয়ত সুপুরুষ ছিল কোনো একদিন । মুখ ভর্তি দাড়ি হলুদ দাঁত। গায়ে চিট ময়লা অর্দ্ধনগ্ন একটা পাগল।আমার সাথে তার দেখা হয় রোজ।সকাল বিকাল দেখা হয়। বারান্দায় দাঁড়ালেই সামনের গাড়ি বারান্দায় হয়ত বসে আছে দেখতাম। বা বিড়বিড় করতে করতে পায়চারি করছে গলির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত।আমি বারান্দায় এলেই উঠে দাঁড়াবেই আর দাড়ি ভর্তি মুখে একগাল নিঃশব্দের হাসি হাসবে ।
প্রথম প্রথম অসভ্য মনে হোত। অশান্তিতে কেমন গা ঘিনঘিন করত। বাড়ির লোকজনকে তাড়াবার কথা বলতাম। লোকজন যখন নিশ্চিন্ত হোলো লোকটা সত্যিই পাগল এবং ক্ষতিকর নয় চেপে যেতে বলল। তাছাড়া হাসিটুকু ছাড়া আর কোনো কিছু ছিল বলে মনে হয়না। রাস্তায় সামনা সামনি দেখা হলে কেমন লাজুক মুখে সরে দাঁড়াত। কথা বলার চেষ্টা বা পাগলের মত কামড়ে আঁচড়ে দেবে বলে কোনোদিন মনে হয়নি। ফলে আমারও পাগলের প্রতি ভয়টা কেটে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে।
পরে সয়ে গেলে বুঝলাম সে হাসি কি অমায়িক ছিল।
আমি যেন তার পরম আশ্রয়। ছোট্ট অবোধ শিশু যখন প্রথম প্রথম মা’কে চেনে দেখতে পেলেই হাসে। কারণে অকারণে মায়ের দিকে তাকিয়ে। তেমনই হাসিটা মনে হোতো। আমাকে দেখতে পাওয়াটা যেন তার বিরাট শান্তির। এক আমাকে দেখা ছাড়া পাড়ায় আর তার কোন উপদ্রব নেই। কেউ দেখেনি পাগলের পাগলামী।
বান্ধবীদের বলতাম তারা হাসাহাসি করত। বারান্দা থেকে দেখত আর আমার পিছনে লাগতো। বলত চল চল তোর প্রেমিককে দেখি। আমার পুরুষ বন্ধুটিও এ নিয়ে মজা করতে ছাড়ত না। সুন্দরীর প্রেমে পড়া নিয়ে তার নিত্য কদাকার রসিকতা ছিল।
মোটামুটি আমাদের সকলের প্রিয় মজার খেলা ছিল রোজকার ।
একদিন পাড়ার ছেলেরা দেখলাম পাগলাটার দাড়ি মোছ কমিয়ে ক্লীন শেভে নতুন গেঞ্জি আর একটা পুরনো জিন্সের প্যান্ট পরিয়ে দিয়েছে। ঢোলা হলেও মানিয়েছে ভালো। লম্বা চুল অবিন্যস্ত। চৌকো চোয়ালের পুরুষালীতে একধরণের কেয়ারলেস বিউটি। সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়েছে। পাগলটা গায়ের রং এখন তামাটে হলেও বোঝা যায় ফর্সার দিকেই ছিল কোনো এক সময়।
হাতে আধখাওয়া বন পাউরুটি আর কলা।
পাগলটা সত্যি সুন্দর ছিল, আজ তাকে আরও সভ্য ভব্য আমাদের মত দেখাতে একটু সাহস নিয়ে জিজ্ঞাসা করি অবশ্য পাশে তখন আমার পুরুষ বন্ধুটিও ছিল। কি কেমন আছ? খেয়েছ কিছু? যদিও হাতে বন তবু কথা চালাতে জিজ্ঞাসা করি। দেখলাম মাথা নাড়ল একবার। তারপর একটা দূর্বোধ্য ভাষা আত্মগত স্বরে বলল। একবার বাংলা একবার হিন্দিতে বলল ইয়ে মেরা মকান হ্যায় বলে চৌহদ্দি দেখাল। সব কথাই সে কখনও আত্মগত এবং মুখ নামিয়ে বলছিল তারপর হঠাৎ আমার দিকে মুখ তুলে নিখুত ইংরাজীতে জিজ্ঞাসা করল
উইল ইউ ম্যারি মী বেবি? আমি হকচকিয়ে গেলাম। পাগল বলে কি। ধমকের সুরে বল্লাম পাগলামী হচ্ছে। পাগলটা কেমন আমতা আমতা করে বলে ঐযে গো..তারপর কিছু খুঁজছে হদিশ পায়না বা মনে পড়ছে না ঠিক কারা বলেছে উদভ্রান্ত আত্মগত কন্ঠস্বরে বলে ওরা যে বলল আমি এমনি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, তুমি নাকি আমাকে বিয়ে করবে?
বুঝলাম পাড়ার বন্ধুরা নিশ্চয়ই এইসব বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওকে সাফসুতরা করে এনেছে। ভবি ভোলার নয় । এখন ক্ষ্যাপার হ্যাপা সামলাও।
আমার পাশে তখন দাঁড়িয়ে আমার প্রেমিক কেন জানিনা ক্ষেপে গিয়ে সজোরে পাগলাটার মুখে ঘুসি মেরে বসল। শালা মস্করা পেয়েছ। পাগল সেজে থাক।
মেরে পাগলামী ঘুচিয়ে দেব। সুন্দরী মেয়ে দেখলে বিয়ের শখ তাই না? ওর ঠোঁঠ ফেটে গেল। কেমন যেন অসহায় নির্বিকার দৃষ্টিতে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে রইল কষের রক্ত নিয়ে। দু চার জনের ভীড় জমে যেতেই আমি আমার বন্ধুটিকে টেনে নিয়ে ঘরে চলে এলাম। বন্ধুটি তখন গজরাচ্ছিল। আমার বাড়ির লোকেরাও বন্ধুটিকে মৃদু বকাবকি করল। পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়।
আমি আমার বন্ধুটিকে বললাম এ তুমি কি করলে?
ওর কি কোনো জ্ঞান আছে? যদি তাই থাকত
তোমাকে তো আমার পাশে ও রোজ দেখে তারপরেও একথা বলতে পারে? বরং তুমিই তো ওকে নিয়ে কত মজা কর বাজে বাজে কথা বল জিজ্ঞাসা কর আমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা। হঠাৎ তোমারই বা আজ হোলো কি? আমি তোমার পাগলামীর তো কোনো কারণ বুঝলাম না। কি ব্যাপার আজ কি ভদ্রবেশে ওকে দেখে সত্যি সত্যি নিজের পাশে পাগলটাকে বসিয়ে ফেললে নাকি। সত্যি সত্যি কি আমাকে বিয়ে করতে চাইল আর আমি করে ফেললাম নাকি? তবে যাই বল পাগলটা শুধু সুন্দরই নয় মনে হয় পেটে বিদ্যে আছে। ইংরাজীতে কি রকম ফ্লুয়েন্ট দেখলে। আমি আমাদের মধ্যে গুমোট ভাবটা কাটাতে প্রেমিক বন্ধুটির সঙ্গে রসিকতা শুরু করলাম। কিন্তু দেখলাম সুর কেটে গেছে। জমছে না। সে’ও দেখলাম আর হাসতে পারছে না। কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল। বান্ধবীরা এল আমরা সদলবলে ঘুরতে চলে গেলাম। যাবার সময় দেখলাম ভীড়টা নেই। পাগলটা আমাদের বারান্দার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে দিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি ভ্রুক্ষেপও করল না।
রাতে বাড়ি ফিরে বারান্দা থেকে দেখলাম সামনের গাড়ি বারান্দায় পাগলটা দুহাঁটুর মাঝখানে মাথা গুঁজে বসে আছে। মা’কে বললাম কিছু খাবার আছে কিনা। ফ্রিজে যা ছিল একটা খবরের কাগজে মুড়ে ওকে দিয়ে এলাম। না পাগলটা একবারও মুখ তুলে দেখল না। ওর পাশে রেখে এলাম। একটু ভয় ভয় করছিল। কি জানি পাগলের মন। তবে কেন জানি মন বলছিল পাগলটা কোনদিনই আমার সাথে কোনো অসভ্যতা করবে না।
যতই হোক আমার পাগল প্রেমিক তো। কষ্টের হাসি পেল।
সকালে উঠেই অভ্যাস বশত বারান্দায় এলাম পাগলটাকে দেখতে। দেখলাম কালকের রাতের খবরের কাগজে মোড়া খাবার তেমনি পড়ে আছে। ভাবলাম নিশ্চয়ই এদিক ওদিকে গেছে। এক্ষুণি ফিরে আসবে।
কাল সমস্ত হৈ হট্টগোলের মধ্যে পাগলের কষ বেয়ে রক্ত আমার মন ভীষণ উতলা করে দিয়েছে থেকে থেকে। বিশেষ করে ঐ দৃষ্টি। যে চোখে কোনো ছবি নেই জল নেই নির্বিকার নিস্পৃহ শূন্য দৃষ্টি। অথচ কি গভীর অন্তর্দৃষ্টি ফেলা চাউনি।যেন কত প্রশ্ন অনুযোগ অভিযোগ অথচ না ফোটাতে পারার যন্ত্রণা। সারাক্ষণ সেই চোখ ভেসে উঠেছে আমার মনে। মনে হয়েছে ওর রক্তটা তুলো দিয়ে মুছে দিতে পারলে ভালো হোতো।হয়ত সরি বললে ও বুঝত না। পাগলের কাছে সরি বলাটা কোনো অর্থ হোতো কি? তবু বললে বুকটা হাল্কা হোতো। পাগলটাকে মারাতে আমি অতটা না হলেও কিছুটা পুরুষ বন্ধুটির উপর বিরক্ত। তবে আমাদের সারা ঘোরাফেরার মধ্যে আমি আর তার সাথে এ নিয়ে কোনো কথা বলিনি। দেখেছি সেও কেমন থম মেরে গেছে হয়ত ভিতরে ভিতরে অনুশোচনায় দগ্ধ । ভেবেছি ও বিকেলে এলে বলব যাও একটু পাগলটার সাথে আদর করে কথা বলে এস মনটা ফুরফুরে হবে। আমি সারাদিন আজ অনেকবার কাজে অকাজে বারান্দায় এসেছি। গাড়ি বারান্দায় সেই খাবারের কাগজটা এখন আর নেই। হয়ত সাফাই কর্মীরা তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু সারাদিন পাগলটাকে আর দেখলাম না। বিকেলে বন্ধুটি এলে রসিকতা করলাম তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী তো মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে মনে হয়। আজ সারাদিন দেখছি না তাকে। যদিও আমারও ভিতরে একটা উৎকন্ঠা একটা কেউ চলে যাবার মন খারাপ রয়েছে। হয়ত তার হাত থেকে বাঁচতে নিজেই রসিকতায় মজতে চাইছি। মনের গুমোট কাটাতে বাচালের মত স্বভাব বিরুদ্ধ কথা বলছি। । কিন্তু সুর কাটা কিছুতেই যেন লয়ে ফিরছে না।
আমার প্রেমিকও দেখলাম আজ আর কোনো রসিকতা করতে পারল না। কেমন যেন উদাস গলায় জিজ্ঞাসা করল নেই? আমার যে.... ওর চোখটা কেমন যেন চিকচিক করছে মনে হোলো। এরপর থেকে রোজ বারান্দায় এসে দাঁড়ালেই পাগলটার জায়গার দিকে নজর যাবেই। কেন যে মনে হয় হয়ত একদিন ও সত্যি ফিরে আসবে আবার একগাল হাসি নিয়ে দাঁড়াবে। অমেজকি হাসবে। অজান্তেই আনমনা হয়ে যাই। একটা অব্যক্ত কষ্ট মুচড়ে গলায় দলা পাকায় নাম ঠিকানা না জানা পাগলের জন্য। হয়ত ব্যথায় টনটন করে ওঠে ওর খালি জায়গাটা দেখে কেমন যেন খালি খালি। একটা গড়ে ওঠা অভ্যাস। চোখ সরিয়ে নিয়ে দূর বড় রাস্তার দিকে তাকাই কত গাড়ি কত লোকের চলাচল কি জানি পাগলটা কি হেঁটে যাচ্ছে.... । ধূর আমি কি এতটাই পাগল হোলাম একটা পাগলের জন্য অপেক্ষার গল্প ফাঁদব?
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মোরেলগঞ্জে ১০৩তম বারুনী মেলা ও স্নানোৎসবে লাখো ভক্তের মাঝে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

আন্তর্জাতিক রেসিং ট্র্যাকে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের পূর্ণি আয়মান

ঢাকার বাতাসে পরিস্থিতি অবনতি, ছুটির দিনেও অস্বাস্থ্যকর

ইউনূস সরকারের প্রশংসায় ফ্যাসিস্ট নাজমুল! চোর লম্পট বলল বিপুকে

বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিলেন রিমা

বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে অভিনেত্রী মেঘনা আলম

শুল্ক ছাড়ের আগে অভ্যন্তরীণ তথ্য কাজে লাগিয়েছেন ট্রাম্প, তদন্তের দাবি মার্কিন সিনেটরদের

ট্রাম্পকে যারা দিয়েছিলেন অনুদান, তাদেরই এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বের করে নিচ্ছেন তিনি!

'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নাম পাল্টে নতুন নাম 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

মতলবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ টি দোকান পুরে ছাঁই, নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা

একদিনেই বিশ্বের শীর্ষ ১০ অতিধনীর সম্পদ বেড়েছে ১৩১ বিলিয়ন ডলার

সর্বজনবিদিত মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি

“আমাদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করো না”- উপকূলে জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচি

থানায় সুপারিশ নিয়ে বিপাকে বিএনপি নেতা, ব্যাখ্যা চাইল জেলা কমিটি

মতলব মুন্সীর হাট বাজারে আগুনে পুড়েছে ১৭ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

আর্টেমিস অ্যাকর্ডে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র

দেশের চার অঞ্চলে দুপুরের মধ্যেই ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক বার্তা

সাগরে ডাকাতি: ২ কোটি টাকার মালপত্র লুট, ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলে উদ্ধার

ইসরাইলি অবরোধে অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার ৬০,০০০ শিশু : জাতিসংঘ

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য