ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিশুতোষ পুস্তক প্রণেতা

Daily Inqilab জোবায়ের আলী জুয়েল

২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম

মদন মোহন তর্কালঙ্কার
মদন মোহন তর্কালঙ্কার ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার বিল্ব গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন সেকালে একজন নাম করা কবি ও সমাজ সেবক। তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘চট্টেপাধ্যায়’ হলেও প্রাপ্ত উপাধি তর্কালঙ্কার হিসেবেই তিনি সুপরিচিত। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৮২৯ খ্রিস্টব্দে তিনি কলকাতার কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১খ্রি.) তাঁর সতীর্থ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন, উভয়েই পন্ডিত জয় গোপাল তর্কালঙ্কার ও প্রেম চাঁদ তর্কবাগীশের নিকট সাহিত্য, ব্যাকরণ, অলংকারশাস্ত্র, জ্যোতিষ ও স্মৃতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি হিন্দু ‘ল’ কমিটি থেকে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে জজ পন্ডিতের সার্টিফিকেট লাভ করেন।

মদন মোহন তর্কালঙ্কার প্রণীত শিশু শিক্ষা ও নব ধারাপাত সূদীর্ঘ প্রায় সোয়া’শ বছর ধরে বাংলার ঘরে ঘরে শিশুদের জন্য পঠিত হয়েছে। এমন দীর্ঘায়ু জনপ্রিয় শিশুতোষ পুস্তক তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় আর দ্বিতীয়টি ছিল না। মদন মোহন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করে একে একে হিন্দু কলেজ পাঠাশালা (১৮৪২খ্রি.), ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ (১৮৪৩-১৮৪৫ খ্রি.), কৃষ্ণ নগর কলেজ (১৮৪৬ খ্রি.) ও সংস্কৃত কলেজে (১৮৪৬-১৮৫০ খ্রি.) অধ্যাপনা করেন। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে শেষ জীবনে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মদন মোহন বিদ্যাসাগরের সহযোগীতায় ‘সংস্কৃত-যন্ত্র’ (১৮৪৭ খ্রি.) নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে ভারত চন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যটি সর্বপ্রথম গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়। বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় সহযোগীতা দান করেন। শুধু তাই নয়, নিজ কন্যা ভূষণ মালা ও কুন্দমালাকে তিনি ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হিন্দু ফিমেল স্কুলে (১৮৪৯ খ্রি.) প্রেরণ করেন এবং নিজে বিনা বেতনে ওই স্কুলে বালিকাদের পাঠদান করাতেন। ওই সময় ভারতে মেয়েদের প্রকাশ্য শিক্ষার সুযোগ ছিল না, সমাজ তা ভাল চোখে দেখতো না। মদন মোহন নিজেও মুর্শিদাবাদ ও কান্দিতে বালিকা বিদ্যালয়, ইংরেজি বিদ্যালয়, অনাথ আশ্রম, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। স্ত্রী শিক্ষার সমর্থনে তিনি ‘সর্ব শুভকারী’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় (১৮৫০ খ্রি.) দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। রসতরঙ্গিনী (১৮৩৪ খ্রি.) ও বাসবদত্তা (১৮৩৬ খ্রি.) মদন মোহন তর্কালঙ্কারের মৌলিক কাব্যগ্রন্থ। তিন খন্ডে প্রকাশিত তাঁর শিশুশিক্ষা (১৮৪৯ ও ১৮৫৩ খ্রি.) শিশুদের উপযোগী একটি অনন্য সাধারণ গ্রন্থ, ‘পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল’ শিশু পাঠ্য এই বিখ্যাত কবিতাটি তাঁরই রচনা। এই রচনাটি আজ থেকে ১৬৯ বছর আগের রচনা। আজও বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ও বাংলাদেশের সমাজ সচেতন ব্যক্তি তাঁর এই ছড়াটি আনন্দের সাথে পাঠ করে থাকেন। মদন মোহন তর্কালঙ্কার ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চেয়ে বয়সে মাত্র ৩ বছরের বড় ছিলেন। মদন মোহন ‘সংস্কৃত’ ভাষায় রচিত বেশ কয়েকখানি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সম্পাদন করেন। সেগুলির মধ্যে ‘সংবাদ তত্ত্ব কৌমুদী’ চিন্তামণি দধীতি, বেদান্ত পরিভাষা, কাদম্বরী, কুমার সম্ভব ও মেঘদূত প্রধান। কবি প্রতিভার জন্য ‘সংস্কৃত কলেজ’ থেকে তিনি কাব্য রতœাকর’, এবং পান্ডিত্যের জন্য ‘তর্কালঙ্কার’ উপাধি লাভ করেন। ১৮৫৮ সালের ৯ মার্চ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মদন মোহন তর্কালঙ্কার মৃত্যু বরণ করেন। মদন মোহন তর্কালঙ্কার প্রণীত এই শিশু শিক্ষার ‘প্রভাত’ ছড়াটি আজও বাংলা শিশু সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। শিশুদের মনে আজও এটি নির্মল অনাবিল আনন্দ ও শিহরণ জাগায়। নিচে সেই বিখ্যাত ছড়াটি শিশুদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রভাত
পাখি সব কলে রব রাতি পোহাইল,
কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।
রাখালে গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে,
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।
ফুটিল মালতি ফুল সৌরভ ছুটিল,
পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল।
গগণে উঠিল রবি লোহিত বরণ,
আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন।
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর,
পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির।
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ,
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প
গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : সাহিত্য সংস্কৃতি ভাবনা
প্রার্থনার মূল কাজ সংযোগ স্থাপন
গ্রাফিতি বাংলাদেশ
তোমাকে
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান