উত্তরাধিকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পরিণতি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

উত্তরাধিকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পরিণতি
সাধারণত দেখা যায় বিভিন্ন বিধানের শুধু মূলনীতিটা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলে দিয়েছেন। তার শাখাগত খুঁটিনাটি বিধান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন। কিন্তু মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের শাখাগত প্রায় সকল খুঁটিনাটি বিধানসমূহ মহান আল্লাহ নিজে কুরআন মাজীদে বর্ণনা করেছেন। আত্মীয়ের নাম নিয়ে নিয়ে বলে দিয়েছেন কে, কতটুকু পাবে। মৃতের সম্পদ বণ্টনের নিয়ম বর্ণনার পর মহান আল্লাহ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘উহা (মৃতের সম্পদ বণ্টনের এ নীতমালা) আল্লাহর সীমানা। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে (আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মৃতের সম্পদ বণ্টন করবে) তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে নদ-নদী প্রবাহিত। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। উহা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে, আল্লাহর (ওই) সীমানা লংঘন করবে (মৃতের সম্পদ আল্লাহর আইন মতো বণ্টন না করে, নিজের খেয়াল-খুশি মতো বণ্টন করবে) আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সে তাতে চিরকাল থাকবে। উহা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ [সূরা নিসা: ১১-১৩]
কারো ন্যূনতম অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করলে কিয়ামত দিবসে তারও হিসাব হবে
কোনো মুসলমান মারা গেলে তাকে কবরস্থ করার পর পর তার আত্মীয়দের প্রথম কর্তব্য হলো- তার সম্পদের বিষয়ে পারিবারিক পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। অনেক পরিবারে দেখা যায় বিশ বছর-ত্রিশ বছর হয়ে গেছে তাও সম্পদ বণ্টন করা হয়নি। সবচেয়ে নির্মম ও নির্লজ্জ জুলুম হলো, আমাদের অধিকাংশ পরিবারে মা-বোন ও যে কোনো নারীর উত্তরাধিকার সম্পত্তি প্রদানে কার্পণ্য ও টালবাহানা করার মানসিকতা। কারো ন্যূনতম অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করলে কিয়ামতের দিবসে তারও হিসাব হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই তোমরা কিয়ামত দিবসে হকদারদের নিকট তাদের প্রাপ্য আদায় করবে। এমনকি শিংবিশিষ্ট ছাগল হতে শিংহীন ছাগলের বদলা নেওয়া হবে।' (মুসলিম, হাদিস ২৫৮২) অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামত দিবসে সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।' (মুসলিম,হাদিস: ১৬১০, বুখারি, হাদিস: ৩০২৬)
নিঃস্ব কে
উত্তরাধিকার সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন না করে আত্মসাৎকরা হলে এতে ‘হাক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার হক নষ্ট করা হয়। যা কখনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। দুনিয়াতে এর কোনো বিহিত না করলে আখিরাতে নেকি দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? সবাই বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি যার কোনো টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে সালাত-সিয়াম-জাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সঙ্গে ওই সব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারো ওপর অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ওই সব পাওনাদারকে ওই ব্যক্তির নেকি থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তখন ওই সব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির ওপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস :২৫৮১)
মৃতের সম্পদ বণ্টনের প্রচলিত কিছু ভুল-ত্রুটি
আমাদের সমাজে মৃতের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। যা উত্তরাধিকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার শামিল।
ভুলগুলো হলো- ১. বোন, ফুফুদের জমির অংশ না দেওয়া। নামে কিছু দিলেও কিনে রাখা হয়, আবার সঠিক বাজারমূল্যও দেওয়া হয় না। নামমাত্র পরিমাণে অনেক অনেক কম মূল্য দেওয়া হয়। ২. বোন, ফুফুরা পিতার ওয়ারিশ দাবি করলে খারাপ নজরে দেখা হয়। তাদের মন্দ ভাবা হয়। অথচ এটা তাদের হক। আল্লাহ প্রদত্ত পাওনা। নিজের পাওনা দাবি করা কি কোনো অন্যায়? ৩. বোন, ফুফু ওয়ারিশ দাবি করলে তাদের ওয়ারিশ দিয়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করা হয়। অথচ ওয়ারিশ দিয়ে দেওয়া ফরজ আবার সম্পর্ক রক্ষা করাও ফরজ। ওয়ারিশ দেওয়ার পরেও বোন-ফুফুর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতেই হবে। ৪. স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী যদি অন্যত্র বিবাহ বসে তবে তাকে তার মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ দেওয়া হয় না। অথচ এটা বড়ো জুলুম। মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ পাওয়ার জন্য তো মহান আল্লাহ অন্যত্র বিয়ে না করার শর্ত জোড়ে দেননি। তাই অন্যত্র বিবাহ বসলেও সে তার পূর্বের মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ পুরোপুরিই পাবে। ৫. স্থাবর সম্পদ ভাগ করা হলেও অস্থাবর সম্পদ ভাগ করা হয় না। আগে থেকে যার দখলে যেটা ছিল সে সেটা রেখে দেয়। সম্পদ বণ্টনের পরামর্শ সভায় সবকিছু উপস্থিত করতে হবে। স্থাবর সম্পদের মতো অস্থাবর সম্পদও আল্লাহর আইন অনুযায়ী ভাগ হবে। সে বস্তু ভাগ করা যায় না, বা ভাগ করলে তা ব্যবহার উপযোগী থাকে না সেই বস্তু ওয়ারিশদের ভেতরে বা বাইরে বিক্রি করে যে পরিমাণ মূল্যই পাওয়া যাবে তা-ই ভাগ করতে হবে। ৬. মৃতের ব্যবহারের জিনিষপত্র ভাগ না করে কাউকে দান করা হয় বা স্মৃতি/বরকত হিসেবে কেউ রেখে দেয়। মৃতের সম্পদের সামান্য-বেশি কোনোঅংশই কাউকে দান করা যাবে না, স্মৃতি রক্ষার জন্য, বরকত হাসিলের জন্য কাউকে দেওয়া যাবে না। সব ভাগ করতে হবে। ভাগে যিনি পাবেন তিনি ইচ্ছে হলে দান করবেন বা অন্য কিছু করবেন। ৭. ওয়ারিশদরর মধ্যে শিশু থাকলে তার ভাগ আলাদা করা হয় না। বড়োরা নিজের মতো করে ভোগ করতে থাকে। ৮. মেয়েকে ঠকানোর জন্য পিতা ছেলেদের নামে সম্পদ লিখে দেয়।
লেখক: মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলূম, তালতলা মোমেনশাহী।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ছাগলনাইয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে সাতটি পিক-আপ জব্দ ও দুইটি এস্কেভেটর অকেজো

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে : মাওলানা আহমদ হাসান ফুলতলী

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় এক দিনে নিহত ২৬ ফিলিস্তিনি

সম্প্রীতির দেশে আগুন লাগাতে চায় এরা কারা

অর্থনীতিতে আমরা স্বস্তির জায়গায় রয়েছি : গভর্ণর

উৎসবের নামে মুসলিমদের শিরকের পথে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

নির্বাচন নইলে আন্দোলন

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে : আমিরাতের প্রেসিডেন্ট

জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নাগরিক কমিটির নেত্রী কারাগারে

কালুরঘাট সেতুসহ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন রেল সচিবের

মডেল মেঘনা কারাগারে

ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে ঐক্য গড়ে তোলার আহবান গণসংহতি আন্দোলনের

আসিয়ান অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থে রোহঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান দরকার :আসিয়ান অঞ্চলের বিশেষজ্ঞদের অভিমত

মানুষের অধিকার আদায়ে যারা রাজপথে লড়াই করে, তাদের নিঃশেষ করা যায় না : নূরুল ইসলাম বুলবুল

কিডনির পাথর অপসারণ বিষয়ে ডা. রফিকের আধুনিক চিকিৎসার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন

মহেশপুরে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে মারল বিএসএফ

হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় নারী নিহত

সেই ‘ক্রিম আপা’ কারাগারে

জলবায়ু ধর্মঘট পালিত

অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই : সেলিমা রহমান