হালাল রিজিকের গুরুত্ব
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
৮. দৈনন্দিন জীবনে মানসিক প্রশান্তি: হালাল রিজিকের মাধ্যমে একজন মুসলিম মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। বৈধ উপায়ে উপার্জন করার ফলে মানুষ আভ্যন্তরীণ শান্তি অনুভব করে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। এতে সে পাপের ভয়ে ভীত থাকে না এবং অন্তরে শান্তি ও সুখ বজায় থাকে।
হারাম রিজিক গ্রহণের ফলে একজন মুসলিমের অন্তরে চাপে থাকার মতো অনুভূতি আসে, কারণ সে জানে তার উপার্জন অবৈধ এবং আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই, হালাল রিজিক গ্রহণের মাধ্যমে একজন মুসলিমের জীবনে প্রশান্তি ও স্থায়িত্ব আসে।
৯. জীবনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের জীবনকে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রকম পন্থায় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। কখনো আর্থিক সংকটে রেখে তিনি আমাদের ধৈর্য ও ইমানের পরীক্ষা নেন। হালাল পথে থাকা এবং তার বিধান মেনে চলা এক ধরনের পরীক্ষা, যা একজন মুসলিমকে আখিরাতে সফলতা এনে দেয়।
তাই একজন মুসলিম যখন হালাল রিজিকের পথে থাকে, তখন সে তার জীবনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আখিরাতের জন্য উত্তম প্রতিদান পায়।
১০. আত্মার পবিত্রতা: হালাল রিজিক আত্মাকে পবিত্র ও পরিষ্কার রাখে। হালাল রিজিক থেকে অর্জিত খাদ্য গ্রহণ করলে মানুষের অন্তর ও আত্মা শান্তিতে থাকে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত হতে সহায়তা করে। এটি মানবের নৈতিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে।
১১. সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা: হালাল রিজিক গ্রহণের ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে যায়। কারণ, হারাম রিজিক মানুষের মধ্যে লোভ, হিংসা ও অপরাধের প্রবণতা বাড়ায়। হালাল উপার্জনের মাধ্যমেই সমাজে সুস্থ পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।
১২. পরকালে সফলতা অর্জন: যারা হালাল রিজিক গ্রহণ করেন, তারা আখিরাতে সফলতা লাভ করেন। আল্লাহ তাদের সন্তুষ্ট হন এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক নিকটবর্তী হবে যে ব্যক্তি নিজের হালাল রিজিক উপার্জনের চেষ্টা করেছে এবং নিজেকে হারাম থেকে দূরে রেখেছে।”
হালাল রিজিক গ্রহণের পদ্ধতি
১. সৎ ও বৈধ কাজ করা: নিজের রিজিক উপার্জনে সবসময় সৎ ও বৈধ পেশা অবলম্বন করা উচিত। যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, কৃষিকাজ, বা যে কোনো পেশা যা শরিয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২. জালিয়াতি ও প্রতারণা থেকে দূরে থাকা: ইসলামে প্রতারণা, মিথ্যা বলা, ওজনে কম দেওয়া ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে কোনো কাজেই সততা অবলম্বন করে কাজ করা উচিত।
৩. সুদ ও ঘুষ থেকে বিরত থাকা: ইসলামে সুদ এবং ঘুষ গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। ব্যবসায় বা চাকরির ক্ষেত্রেও সুদ বা ঘুষের লেনদেন থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে।
৪. অন্যের অধিকার সংরক্ষণ: ইসলামিক আইন অনুযায়ী অন্যের সম্পত্তি বা অধিকার হরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রিজিক উপার্জনে সততার সঙ্গে কাজ করলে আল্লাহ তায়ালা তার বরকত দান করেন।
হারাম রিজিকের প্রভাব
১. দুঃশ্চিন্তা ও অশান্তি: হারাম রিজিক গ্রহণ করলে মানুষ মানসিক শান্তি হারায়। আল্লাহ তায়ালা হারাম উপার্জনের কারণে দুঃশ্চিন্তা, বিপদ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন করেন।
২. পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অশান্তি: হারাম রিজিকের কারণে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ঝামেলা দেখা দেয়। হারাম রিজিক পরিবারে কল্যাণ ও বরকত কমিয়ে দেয়।
৩. ইবাদত কবুল না হওয়া: হারাম রিজিক গ্রহণের ফলে মানুষের ইবাদত ও দোয়া কবুল হয় না। আল্লাহ হারাম রিজিক থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
৪. পরকালীন শাস্তি: হারাম রিজিক গ্রহণকারীদের আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ইসলামি আইন অনুযায়ী তারা আল্লাহর নিকট অপ্রিয় হিসেবে বিবেচিত হন এবং আখিরাতে তাদের জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হবে।
উপসংহার: ইসলামে হালাল রিজিক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা শুধু বর্তমান জীবনে নয়, আখিরাতেও সফলতা এনে দেয়। হালাল উপার্জন জীবনে প্রশান্তি ও স্থিতিশীলতা দেয়, মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সাহায্য করে। একজন মুসলিমের উচিত বৈধ পন্থায় উপার্জন করা এবং হারাম থেকে দূরে থাকা। হালাল রিজিকের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে আখিরাতে জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। (সমাপ্ত)
লেখক : প্রভাষক, রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ছাগলনাইয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে সাতটি পিক-আপ জব্দ ও দুইটি এস্কেভেটর অকেজো

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে : মাওলানা আহমদ হাসান ফুলতলী

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় এক দিনে নিহত ২৬ ফিলিস্তিনি

সম্প্রীতির দেশে আগুন লাগাতে চায় এরা কারা

অর্থনীতিতে আমরা স্বস্তির জায়গায় রয়েছি : গভর্ণর

উৎসবের নামে মুসলিমদের শিরকের পথে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

নির্বাচন নইলে আন্দোলন

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে : আমিরাতের প্রেসিডেন্ট

জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নাগরিক কমিটির নেত্রী কারাগারে

কালুরঘাট সেতুসহ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন রেল সচিবের

মডেল মেঘনা কারাগারে

ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে ঐক্য গড়ে তোলার আহবান গণসংহতি আন্দোলনের

আসিয়ান অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থে রোহঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান দরকার :আসিয়ান অঞ্চলের বিশেষজ্ঞদের অভিমত

মানুষের অধিকার আদায়ে যারা রাজপথে লড়াই করে, তাদের নিঃশেষ করা যায় না : নূরুল ইসলাম বুলবুল

কিডনির পাথর অপসারণ বিষয়ে ডা. রফিকের আধুনিক চিকিৎসার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন

মহেশপুরে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে মারল বিএসএফ

হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় নারী নিহত

সেই ‘ক্রিম আপা’ কারাগারে

জলবায়ু ধর্মঘট পালিত

অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই : সেলিমা রহমান