‘বুড়ো’তেই বাজিমাত বরিশালের
০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম
বাংলাদেশের অনেক অর্জনের সাক্ষি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিপিএলটাই ছিল অধরা। অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটারকে তাই এবারের বিপিএল শিরোপা উৎসর্গ করেছেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক ও তাদের দীর্ঘ দিনের জাতীয় দলের সতীর্থ তামিম ইকবাল। গতপরশু বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম শিরোপা জেতে বরিশাল। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিরতণী অনুষ্ঠানে বিজয়ী দলের অধিনায়ক তামিম নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সময় মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে বিশেষভাবে স্মরণ করে তাদেরকে ট্রফি উৎসর্গ করেন। মাইক্রফোন হাতে তামিম বলেন, ‘আমি এখানে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ আসতে বলব।’ দুজনেই সেখানে যাওয়ার পর তামিম ট্রফিটা মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে উৎসর্গ করার ঘোষণা দেন।
কেন দেশের এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে নিয়ে তামিমের এমন অনুভুতি পরে তাও ব্যখ্যা করেন, ‘অবশ্যই যে কোনো ট্রফি দারুণ। কিন্তু এবার একটু ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ আমাদের দলে এমন কয়েকজন ছিল, কিছু তরুণ খেলোয়াড় বা মিরাজ বলুন বা সৌম্য... দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার রিয়াদ ভাই, মুশফিক... তারা দেশকে অনেকদিন ধরে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু ওরা এই ট্রফিটা এখনও পায়নি। আমার নিজেরই একটা ইচ্ছা ছিল যে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে এই ট্রফি দেয় (ট্রফি), তাহলে এই ট্রফি তাদের উৎসর্গ করব। আমি জানি মিরাজ, সৌম্য, তাইজুল... তাদের সামনে অনেক সময় আছে অনেক ট্রফি জেতার। আমি জানি না রিয়াদ ভাই ও মুশফিক ভাই (কতদিন খেলবে)...। যেভাবে তারা পারফর্ম করছন, হয়ত চালিয়ে যাবেন। অন্যদের মতো এতটা নয়। এই কারণেই প্রেজেন্টেশনের সময় ওদের নিয়ে গিয়েছি। আমি সত্যিই তাদেরকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলাম। কয়েকবার তারা খুব কাছাকাছি গিয়েছে, কিন্তু জিততে পারেনি। চ্যালেঞ্জিং ছিল, কিন্তু আমি খুশি।’
বিশেষ করে মুশফিকের দারুণ পারফরম্যান্স দলকে শিরোপার কাছে নিয়ে গেছে বলে মনে করেন তামিম, ‘আমরা অনেক সময় কৃতিত্ব সবাইকে ঠিকভাবে দেই না। যার যতটুকু প্রাপ্য, কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। এই টুর্নামেন্ট যখন শুরু হয়, তখন আমি মুশফিককে গিয়ে বলি, “তুই কি মাঠের ব্যাপারগুলি দেখতে পারবি? বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং, এসব দেখবি”। এটা আমাকে দম ফেলার সুযোগ দিয়েছে, কারণ আমি বাইরের ব্যাপারগুলি দেখছিলাম- কোন ক্রিকেটার আসছে, কোন ক্রিকেটার যাচ্ছে, কী হচ্ছে না হচ্ছে, এসব। মুশফিক অসাধারণ ছিল। ও এই কাজ করাতে আমার ওপর চাপ অনেক কমে গেছে। নিজের ক্রিকেট ও ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পেরেছি। আপনারা খেয়াল করে থাকলে দেখেছেন, ওর সম্পৃক্ততা অনেক ছিল। তাকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। এই ট্রফি আমার চেয়ে কারও বেশি প্রাপ্য থাকলে সেটা মুশফিক। কারণ অনেক ভালো কিছু সে করেছে।’
পঞ্চপা-বের এই ত্রয়ী থাকাতে বরিশালকে বলা হচ্ছিল ‘বুড়োদের দল’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। অথচ তাদের পারফরম্যান্সের ‘ফরচুনে’ ভর করেই নিজেদের প্রথম শিরোপার স্বাদ পেয়েছে বরিশাল। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এইচডি অ্যাকারম্যান এক পর্যায়ে মুশফিকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কাউকে কোনো অসম্মান না করেই বলছি, এই বুড়োদের মধ্যে এখনও লড়াইয়ের মানসিকতা বাকি আছে...।’ মুশফিক জবাব দেন, ‘আমি সেটাই আশা করি। আমরা ভবিষ্যতেও আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ তার কথা শেষ হতে না হতেই তামিম যোগ করেন, ‘বুড়ো, কিন্তু এখনও নট আউট।’
নিজের ফিটনেস নিয়ে অতটা সন্তুষ্ট না থাকলেও রিয়াদ-মুশফিকদের মাঠের নিবেদন আর পারফরমেন্স দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারেন বলে বলে করেন তামিম, ‘তারা দুর্দান্ত পেশাদার ক্রিকেটার। বাংলাদেশে কাউকে যদি আদর্শ মানতে চান ক্রিকেটার হিসেবে, সেটা শুধু মাঠের পারফরম্যান্সে নয়, পারফরম্যান্সের আগে একজন কীভাবে প্রস্তুত হয়, সেখানে মুশফিকের চেয়ে ভালো কেউ নেই। এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তার নিবেদনও আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি, বিশ্বকাপে তিনি কেমন পারফর্ম করেছেন, বিশ্বকাপের আগে যতকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তার পরও সেখান থেকে ফিরে রান করেছেন। কোনো তরুণ ক্রিকেটারের যদি শেখার থাকে, ওরা নিজেরাই শিখে নেবে। কারণ তাদের সামনে উদাহরণ আছে।’
বিপিএলের প্রথম আসর থেকে নিয়মিত খেলেও দলীয় সাফল্যের ঝুলি শূন্য ছিল মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর। আগে দুবার ফাইনালে নেমেও হতাশার আগুনে পুড়তে হয়েছিল তাদেরকে। তৃতীয় দফায় এসে বরিশালের হয়ে এবার একসঙ্গে আক্ষেপ ঘুচিয়ে কাক্সিক্ষত শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন তারা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুশফিক বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় ফাইনাল। তামিম ও রিয়াদ ভাইয়ের পাশে থেকে প্রথমবারের মতো জিতে চ্যাম্পিয়ন হলাম। এটা আমার জন্য ভীষণ আনন্দের। সব কৃতিত্ব আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট, সকল খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের। তারা প্রচুর পরিশ্রম করেছে।’ মাহমুদউল্লাহ অনুভূতি জানান এভাবে, ‘সত্যিই খুব ভালো লাগছে। প্রথমেই তামিমকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এখানে আমাদেরকে কথা বলতে ডাকার জন্য। এটা ছিল সম্মিলিত দলীয় প্রচেষ্টা।... এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফিট থাকার চেষ্টা করছি। যেখানেই খেলি না কেন নিজের সেরাটা খেলতে চাই।’
দীর্ঘ দিন পর মাহমুদউল্লাহ এবার শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল দিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। মুশফিক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে এবারের বিপিএলের ফাইনালে ওঠার পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইঙ্গিত দেন, সেই অবসর স্বেচ্ছায় ছিল না। মুশফিক যদি অবসর ভেঙে ফেরেন এই সংস্করণে, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপকার হবে বলে মনে করেন তামিম, ‘সে নিজে যদি সিদ্ধান্ত নেয় ফেরার... এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যে কিংবদন্তি ক্রিকেটাররাও অবসর থেকে ফিরে খেলেছে। যেভাবে সে ব্যাট করছে, সে যদি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের তাতে উপকারই হবে। এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।’
এবারের বিপিএলে ৪৯২ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা তামিম। ৩৮০ রান করে শীর্ষ পাঁচের তালিকায় রয়েছেন মুশফিক। লোয়ার মিডলঅর্ডারে কার্যকর ছিলেন মাহমুদউল্লাহও। ২৯.৬২ গড়ে তার রান ২৩৭।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে
অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?
জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক
ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা
রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা
বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস
পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ
সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র
চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী
পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম
ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি
সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা