জকিগঞ্জের গন্ডারগড়ে রাস্তা নিয়ে বিরোধ : পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

Daily Inqilab জকিগঞ্জ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা

২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২০ এএম

জকিগঞ্জের কসকনকপুর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ গন্ডারগড় গ্রামের সংযোগ রাস্তা নিয়ে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সনাতন ধর্মের বেশীরভাগ মানুষের বসবাস এই গন্ডারগড় গ্রামে। অতীতে দুই গ্রামের মানুষ মিলেমিশে উত্তর গন্ডারগড়ে অবস্থিত কালীমন্দিরে একত্রে সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যকলাম পরিচালনা করত। প্রায় ২দশক পূর্বে দুই গ্রামের মন্দির নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলে দক্ষিন গন্ডারগড়বাসী নতুন একটি মন্দির করে পৃথক হয়ে যান। ফলে দক্ষিনের মানুষ আর উত্তরে যাওয়ার প্রয়োজন কমে আসে। দুই গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি রাস্তা নিয়ে এখন বিরোধ চরমে। রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ গণ্যমান্যরা একাধিকবার বিষয়টি আপোষ মিমাংসায় ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন উভয়পক্ষ।

উত্তর গন্ডারগড় গ্রামের বাসিন্দাদের দাবী, যুগযুগ ধরে এই রাস্তা ব্যবহার করে তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াতসহ সোনাসার বাজার, জকিগঞ্জ বাজার ও পল্লীশ্রী বাজারে যাতায়াত করে আসছে, দক্ষিণ গন্ডারগড় গ্রামের লোকজনও আগে এই রাস্তা দিয়ে কালীমন্দির সহ কালীগঞ্জ বাজারে আসা যাওয়া করত। এটি ছিল দুই গ্রামের সেতুবন্ধন। কয়েকবছর আগে দক্ষিণ গন্ডারগড়ের আরেকটি মন্দির নির্মিত হলে তারা আর উত্তরে আসার প্রয়োজন কমে যায়। কিছুদিন পর দক্ষিণ গন্ডারগড়ের মৃত সুধির বিশ্বাসের বাড়ির লোকজন তাদের বাড়ির সীমানায় রাস্তাটির অন্তর্ভুক্ত করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা পরিকল্পিত ভাবে রাস্তাটি বন্ধের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছেন। রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাস্তায় গাছ লাগলো থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফলে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে অসুবিধে হচ্ছে। কাগজপত্রে এই জায়গাটি রাস্তা হিসেবে উল্লেখ থাকলেও দক্ষিণের লোকজন জোরপূর্বক রাস্তাটি দখলে নেয়।

এদিকে দক্ষিণ গন্ডারগড়বাসীর দাবি এটি তাদের নিজস্ব মালিকানা জায়গা, উত্তর গন্ডারগড়ের লোকজন জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করছেন। কিছুদিন পূর্বে তাদের বাড়ীর জায়গার গাছ কর্তন ও ঘরবাড়ী ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। বিষয়টি তারা প্রসাশনকে জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, দুই গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় উভয় গ্রামের শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী গর্দিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করে। গর্দিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সোনাসার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ সোনাসার ও জকিগঞ্জ বাজারে উত্তরের লোকজন যাতায়াত করতে অতীতে এই রাস্তা ব্যবহার করে আসছিল।

সাবেক ইউপি সদস্য অবণ্য বিশ্বাস বলেন, এই জায়গা বাড়ীর অংশ। এখানে কোনোদিন রাস্তা ছিল না। অতীতে উত্তর গন্ডারগড় বাসী সুধীর বাবুর বাড়ীর মধ্য দিয়ে মাঝে মধ্যে যাতায়াত করতো। যদি কাগজপত্রে এটি রাস্তা হিসাবে প্রমানিত হয়, তবে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

বর্তমান ইউপি সদস্য তাজ উদ্দিন বলেন, বিগত সরকারের আমলে সাবেক এমপি হাফিজ মজুমদারের নিকট হতে বরাদ্ধ এনে এই রাস্তায় একাধিক সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। রাস্তাটি দুই গ্রামের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা রাস্তার সমস্যা নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

এদিকে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে রাস্তা নিয়ে উত্তেজনা থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক।
কসকনকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মঈন বলেন, আমরা এই রাস্তাটি নিয়ে উভয় গ্রামের মানুষদের মধ্যে আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করছি। উত্তর গন্ডারগড় গ্রামের পক্ষ থেকে জামানত রাখলেও দক্ষিণ গন্ডারগড়ের লোকজন এখনও কোনো সাড়া দেয় নি। তারপরেও বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির জন্য প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছুটা ভর্তুকি দিয়ে হলে আমরা মানুষের চলাচলের ব্যবস্তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।

জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাবেদ মাসুদ বলেন, দুই গ্রামের রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভূমি অফিস তাদের কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছে। উভয় গ্রামের পক্ষ থেকে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কাগজপত্র যাচাইবাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ জনসাধারণের দুর্ভোগ ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যদের উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।

 


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

রঙচটা বাস চলছেই

রঙচটা বাস চলছেই