তিন পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস

ধ্বংস হয়েছে গাজার ‘অর্ধেক’ ভবন

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

গত অক্টোবরে হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের প্রতিশোধ অভিযান শুরুর পর থেকে গাজার অর্ধেকের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক বিশ্লেষণে। নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যামন ভ্যান ডেন হোয়েক ওই অভিযানের আগে এবং পরে গাজার স্যাটেলাইট ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
বিবিসি লিখেছে, ডিসেম্বরের শুরু থেকে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলের বোমাবর্ষণ কীভাবে তীব্র হয়েছে, খান ইউনিস কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওই বিশ্লেষণে তা উঠে এসেছে। গাজাজুড়ে আবাসিক এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে; আগে যেখানে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা ছিল, সেখানে এখন ধ্বংসস্তূপ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কৃষিজমিগুলোতে যেন চালানো হয়েছে খনন কাজ। গাজাবাসীকে ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য’ বারবার দক্ষিণে সরে যেতে বলছে ইসরাইল। গৃহহীন লাখো মানুষকে আশ্রয় দিতে গাজার দাক্ষিণ অংশে গড়ে উঠেছে তাঁবুর শহর।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইল অভিযান শুরু করার পর প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা গাজার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি। বাস্তুহারা এই মানুষগুলোর অর্ধেক এখন গাদাগাদি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণ প্রান্তে। বিবিসি লিখেছে, ইসরাইলের অভিযানে কৃষিজমিও যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তার মাত্রা স্পষ্ট হয়েছে তাদের বিশ্লেষণে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে যখনই প্রশ্ন করা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ বলেছে, ‘হামাস যোদ্ধা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো’- এ দুটোই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য। সেজন্য তারা কীভাবে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লষণে।
বিবিসি লিখেছে, পুরো গাজায় ১ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, যা গাজার মোট ভবনের ৫০ থেকে ৬১ শতাংশের মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইলের অভিযানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিস। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৩৮ হাজার বা ৪৬ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। গত দুই সপ্তাহেই ধ্বংস করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি ভবন। শহরের কেন্দ্রস্থলের ১৬ তলা আবাসিক ভবন আল-ফাররা টাওয়ার ছিল গাজার সবচেয়ে উঁচু ভবন। আগের এবং পরের ছবি মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, গত ৯ জানুয়ারি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে ভবনটি। আশপাশের ভবনেরও মোটামুটি একই পরিণতি হয়েছে ইসরাইলের বোমা বর্ষণে।
বিবিসি লিখেছে, ইসরাইলি আগ্রাসন এবং বোমাবর্ষণে গাজার কৃষিজমিগুলো দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চিত্র তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। গাজা যদিও আমদানি করা খাদ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল, তারপরও এ এলাকার ফিলিস্তিনিদের খাদ্য চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিজস্ব কৃষিজমি থেকে মিটত। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার অর্ধেক মানুষ এখন অনাহারে ভুগছে।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তিন পর্যায়ের একটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইল সরকারের কট্টরপন্থী সদস্যরা হুমকি দিয়ে বলেছেন, পছন্দসই চুক্তি না হলে তারা জোট ভেঙে দেবেন। হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া গতকাল মঙ্গলবার নিশ্চিত করেন, যুদ্ধ বন্ধসহ ইসরাইল-ফিলিস্তিনি বন্দী-জিম্মি বিনিময়ের লক্ষ্যে গত সপ্তাহান্তে প্যারিসের বৈঠক থেকে আসা প্রস্তাবটি তিনি পর্যালোচনা করছেন।
ইসমাইল হানিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, তারা যেকোনো আন্তরিক ও বাস্তব উদ্যোগ বা ধারণা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে শর্ত হলো, তা যাতে আগ্রাসনের সর্বাঙ্গীণ সমাপ্তি ঘটাতে পারে। হামাস আরও বলেছে, পরিকল্পনায় অবশ্যই গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে। ইসমাইল হানিয়া বলেন, চুক্তির ব্যাপারে একটি সমন্বিত দৃষ্টিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মিসরের কায়রোয় অনুষ্ঠেয় আলোচনায় আমন্ত্রণ পেয়েছে হামাস। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

রঙচটা বাস চলছেই

রঙচটা বাস চলছেই