ঢাকা   রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ কার্তিক ১৪৩১

১০৩ স্বজন হারানো ফিলিস্তিনির আহাজারি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় স্ত্রী-সন্তানসহ ১০৩ জন স্বজনকে হারিয়েছেন আহমাদ আল-গুফেরি নামের এক ব্যক্তি। পরিবারের সদস্যরা যখন অকাতরে প্রাণ দিচ্ছেন, তখন অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহর জেরিকোতে আটকে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরে গিয়ে যে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের কাউকেই আর দেখতে পাবেন না, সেটি হয়তো কখনো কল্পনাও করেননি আহমাদ। তার সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। গত বছরের ৭ অক্টোবর হঠাৎ করেই হামাস যখন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ করে, তখন দেশটির রাজধানী তেল আবিবে একটি নির্মাণক্ষেত্রে কাজ করছিলেন আহমাদ। ওই দিনই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ইসরাইলি সেনাদের বাধার মুখে গাজায় রেখে যাওয়া স্ত্রী আর তিন মেয়ের কাছে ফিরতে পারেননি তিনি। তখন থেকে ফোনে সংযোগ পেলেই স্ত্রী-সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতেন আহমাদ। তিনি জানান, প্রাণ হারানোর শঙ্কা থেকে তার স্ত্রী শিরিন বার বার তার কাছে কোনো ভুল করে থাকলে মাফ চাইছিলেন। আহমাদ বলেন, সে জানতো সে মারা যাবে। কখনো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকলে তার জন্য সে বার বার তাকে মাফ করে দেয়ার কথা বলতো। আমি তাকে বলেছিলাম, এসব বলার প্রয়োজন নেই। সেটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আহমাদের চাচার বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এতে তিনি তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে তালা, লানা ও নাজলাকে হারান। হামলায় তার মা, চার ভাই, তাদের কয়েকজন চাচা-চাচী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা নিহত হন। আহমাদ বলেন, একশ জনের বেশি (তার পরিবারের) মানুষ মারা গেছে। হামলার পর দুই মাস কেটে গেছে। এখনো বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে কারও কারও লাশ চাপা পড়ে আছে। গত সপ্তাহে ছিল আহমাদের ছোট মেয়ে নাজলার দ্বিতীয় জন্মদিন। আহমদ এখনও চেষ্টা করছেন এত বড় ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে। তিনি তার সন্তানদের মৃতদেহ স্পর্শ করার বা কবর দেয়ারও সুযোগ পাননি। এখনো মেয়েদের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না আহমাদ। তিনি বলেন, আমার মেয়েরা আমার কাছে ছোট্ট পাখির মতো। আমার মনে হয় আমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি। আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কান্নাভেজা চোখে তিনি আরও বলেন, গাজায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমি এখন কার জন্য গাজায় ফিরে যাবো? আমাকে কে বাবা ডাকবে? আমার স্ত্রী বলতো আমি তার জীবন। এখন আমাকে কে এসব বলবে? সেদিনের হামলায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন প্রতিবেশীর কাছে থেকে আমহাদ ঘটনার বিবরণ শুনেছেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন প্রথম একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের বাড়িতে প্রবেশের ফটকে আঘাত হানে। আমার বাড়ির লোকজন দৌড়ে কাছেই আমার চাচার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ১৫ মিনিট পর বিমান থেকে চাচার বাড়িতেও বোমা ফেলা হয়।’ হামলা শুরু হওয়ার পর যে কয়েকজন পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যেতে পেরেছিল, কেবল তারাই বেঁচে গেছে। যারা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা সবাই মারা গেছে। হামিদ বলেন, ১০ মিনিট পর পর আমাদের আশপাশের আরও চারটি বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে হাতেগোণা কয়েকজন ছাড়া সবাই নিহত হন। গুফেরি পরিবারের নিহত সদস্যদের মধ্যে ৯৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা থেকে শুরু করে মাত্র ৯ দিন আগে জন্ম নেয়া একটি শিশুও ছিল বলে জানিয়েছেন আহমাদ। বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত

প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি

প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি

নোয়াখালীতে গাছের ঢাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু

নোয়াখালীতে গাছের ঢাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু

প্রেসিডেন্ট অপসারণ: ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত’

প্রেসিডেন্ট অপসারণ: ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত’

ডিএমপিতে যুক্ত হচ্ছে ভারতের মাহিন্দ্রা গাড়ি

ডিএমপিতে যুক্ত হচ্ছে ভারতের মাহিন্দ্রা গাড়ি

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

গাজী ছিলেন একজন আপোষহীন সাংবাদিক নেতা - সিকৃবি ভিসি ড. মো. আলিমুল ইসলাম

গাজী ছিলেন একজন আপোষহীন সাংবাদিক নেতা - সিকৃবি ভিসি ড. মো. আলিমুল ইসলাম

মারাত্মক শব্দদূষণ

মারাত্মক শব্দদূষণ

তারেক রহমানের ঐতিহাসিক দায়

তারেক রহমানের ঐতিহাসিক দায়

দলে গণতন্ত্র চর্চা অপরিহার্য

দলে গণতন্ত্র চর্চা অপরিহার্য

বিএনপি এখন সংশোধিত -জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি

বিএনপি এখন সংশোধিত -জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি