ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর কথা বলে বিপাকে ম্যাখোঁ
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সোমবার ইউক্রেনে পশ্চিমা সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনার উল্লেখ করলেও জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ তার বিরোধিতা করেছে। এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন আরো জমি হারাচ্ছে। সোমবার ইউক্রেন সংক্রান্ত সম্মেলন আয়োজনের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁখো বলেছিলেন, যে প্রয়োজনে ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশের সেনা পাঠানো যেতে পারে। তিনি রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনের জন্য কোনো ধরনের সহায়তার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে চান নি। কিন্তু তার এমন ‘বেলাগাম’ মন্তব্যের পর ন্যাটোর একাধিক দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রথমে জার্মানি ও পোল্যান্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, যে সেই দুই দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাচ্ছে না। জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস বলেন, প্যারিস সম্মেলনের অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ইউরোপ বা ন্যাটোর স্থলবাহিনী বা সৈন্য না পাঠানোর বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। মধ্য ইউরোপের একাধিক দেশও সেই অবস্থান নিচ্ছে। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গও বলেন, সামরিক জোটের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়াতে এখনো পর্যন্ত এমন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। একমাত্র ৩১টি সদস্য দেশ সম্মিলিতভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিলে তবেই ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানো সম্ভব। সংবাদ সংস্থা এপি-কে স্টলটেনবার্গ আরো বলেন, ন্যাটো সদস্যরা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনকে অভূতপূর্ব সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র এড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংগ্রামের জন্য ইউক্রেনে মার্কিন সৈন্য না পাঠানোর বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে আসছেন। রাশিয়া ম্যাঁখোর মন্তব্য সম্পর্কে পশ্চিমা জগতকে সতর্ক করে দিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেকসভ বলেন, ন্যাটো ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠালে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত অপরিহার্য। তার মতে, এমনটা ঘটলে ন্যাটো ও রাশিয়ার সংঘাতের ‘সম্ভাবনা’ দেখা দেবে না, সেই সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হবে।
ঘরে-বাইরে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার মাঝে ফ্রান্স ম্যাঁখোর মন্তব্যের ‘সঠিক প্রেক্ষাপট’ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ঁ লোকোমু বলেন, প্যারিস সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো ঐকমত্য অর্জিত হয় নি। তাছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর কথা হয় নি। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান সেজুর্ন বলেছেন, মাইন অপসারণ, অস্ত্র উৎপাদন বা সাইবার অপারেশনের মতো কাজের জন্য পশ্চিমা সৈন্য পাঠানো যেতে পারে।
এদিকে, চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রবল হামলার মুখে আভদিভকা শহর থেকে ইউক্রেনের সৈন্যরা সরে আসার পর মঙ্গলবার আরো দুটি গ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। পশ্চিমা সহায়তায় টান পড়ার কারণে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ কমে আসছে। ফলে বাধ্য হয়ে পালানোর পথ বেছে নিচ্ছেন সেনা কর্মকর্তারা। মার্কিন সংসদে ইউক্রেনের জন্য ৬,০০০ কোটি ডলার অংকের সামরিক সহায়তার প্রস্তাবের জট ছাড়াতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মঙ্গলবার দুই দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
গ্রীষ্মকালীন আক্রমণে ২০টিরও বেশি লেপার্ড ট্যাঙ্ক ধ্বংস : ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালীন পাল্টা আক্রমণেই ২০টিরও বেশি জার্মান-তৈরি লেপার্ড ট্যাঙ্ক হারিয়েছে, তাদের মধ্যে ৭টি-রাবোটিনো বসতির কাছে, জার্মানির সংবাদমাধ্যম সুয়েডুয়চে জেইতুং-এর একটি নিবন্ধ বলা হয়েছে। সংবাদপত্রের মতে, জার্মানি ইউক্রেনে পাঠানোর আগেই লেপার্ড ট্যাঙ্কগুলোকে একটি ‘বিস্ময়কর অস্ত্র’ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন, সেই ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য ‘প্রায় একটি সমস্যা’ হয়ে উঠেছে।
‘ইউক্রেন আনুমানিক ২৩০টি লেপার্ড-১ এবং লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক পেয়েছিল, যার মধ্যে ৩৮টি সরাসরি জার্মানি থেকে। যাইহোক, হতাশাজনক গ্রীষ্মকালীন পাল্টা আক্রমণের সময়, তাদের অনেকগুলি রাশিয়ান প্রতিরক্ষায় আটকে গিয়েছিল: ২০টিরও বেশি হয় ধ্বংস বা পরিত্যক্ত হয়েছিল, তাদের মধ্যে রাবোটিনো এলাকাতেই ৭টি ধ্বংস হয়েছে,’ পত্রিকাটি বলেছে। সুয়েডুয়চে জেইতুং-এর মতে, জার্মানি ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাঙ্কের ক্ষয়ক্ষতি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করে। এদিকে, কিছু জার্মান রাজনীতিবিদ নোট করেছেন যে এই মেশিনগুলির মধ্যে মাত্র অল্প সংখ্যকই বর্তমানে যুদ্ধে নিযুক্ত রয়েছে, যার কারণে ইউক্রেনীয়রা তাদের সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে না।
একজন ইউক্রেনীয় কমান্ডার প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়ান ড্রোনগুলি লেপার্ড ট্যাঙ্কের জন্য একটি গুরুতর হুমকি উপস্থাপন করে। উপর থেকে ক্রমাগত হুমকি ক্রুদের ক্লান্ত করে, তিনি বলেন, সংবাদপত্র অনুসারে। ‘এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। অনেক ট্যাঙ্ক চালক ভয় অনুভব করেন,’ তিনি বলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী। রাশিয়া বারবার বলেছে যে, ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্রের চালান শুধুমাত্র সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করবে।
রাশিয়াকে ৬,৭০০ কন্টেইনার অস্ত্র দিয়েছে উত্তর কোরিয়া : দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দাবি করেছেন, ইউক্রেনে মস্কোর ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ তৃতীয় বছরে পরার সাথে সাথে উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধাস্ত্র কারখানাগুলি রাশিয়ার জন্য অস্ত্র এবং গোলা উৎপাদন করতে ‘সম্পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে’। দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক অনুমানটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অত্যন্ত গোপনীয় ভূমিকার বিষয়ে নতুন সূত্র দেয় যে, উত্তর কোরিয়া মস্কোকে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র যোগান দিয়ে সাহায্য করছে যখন ইউক্রেনের অত্যাবশ্যক সামরিক সরবরাহের বিষয়টি ওয়াশিংটনে প্রধানত রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের দ্বারা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শিন ওন-সিক সোমবার বলেছেন, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চালানের বিনিময়ে লাখ লাখ রাউন্ড আর্টিলারি শেল সহ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রাশিয়াকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তার দাবি, আগস্ট থেকে পিয়ংইয়ং রাশিয়ায় প্রায় ৬,৭০০টি কন্টেইনার পাঠিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি ১৫২ মিমি আর্টিলারি শেল ও মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের জন্য ৫ লাখ রাউন্ড ১২২ মিমি গোলা রয়েছে। ‘যদিও উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কারখানা সাধারণত কাঁচামাল এবং বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে ৩০ শতাংশ ক্ষমতায় কাজ করে, কিন্তু রাশিয়ার জন্য অস্ত্র এবং কামানের গোলা তৈরি করতে সেই কারখানাগুলো সম্পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে,’ শিন সাংবাদিকদের সাথে এক বৈঠকে বলেছিলেন। গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তালিকা প্রকাশ করে বলেছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে ১০ হাজারের বেশি কনটেইনার ভর্তি গোলা বা সংশ্লিষ্ট রসদ সরবরাহ করেছে। এর বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া ৯ হাজার কনটেইনার পণ্য পেয়েছে। যার বেশিরভাগই খাবার। শিন ওন বলেন, যা সেখানকার খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, তাস, সিএনএন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা
ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?
হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি
বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪
এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম
বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ
জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা
সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর
গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত
প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি
নোয়াখালীতে গাছের ঢাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু
প্রেসিডেন্ট অপসারণ: ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত’
ডিএমপিতে যুক্ত হচ্ছে ভারতের মাহিন্দ্রা গাড়ি
অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
গাজী ছিলেন একজন আপোষহীন সাংবাদিক নেতা - সিকৃবি ভিসি ড. মো. আলিমুল ইসলাম
মারাত্মক শব্দদূষণ
তারেক রহমানের ঐতিহাসিক দায়
দলে গণতন্ত্র চর্চা অপরিহার্য
বিএনপি এখন সংশোধিত -জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি