নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস
২৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
রমজান মাসে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। হামাসকে বন্দিমুক্তির কথা বলা হলো। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর প্রায় ছয় মাস পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রস্তাব পাস হলো। এ প্রস্তাবের পক্ষে ১৪টি ভোট পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবে ভোট না দিলেও আগের মতো আর ভেটো দেয়নি। এর আগে এ বিষয়ে চারটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তিনবার যুক্তরাষ্ট্র এবং একবার রাশিয়া ও চীন এর বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছিল।
জাতিসংঘের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ীযুদ্ধবিরতির দিকে যাওয়া দরকার। প্রস্তাবে অবশ্য গত ৭ অক্টোবর আক্রমণের পর হামাস যাদের যুদ্ধবন্দি করে রেখেছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। আগামী ৯ এপ্রিল রমজান মাস শেষ হচ্ছে। তার মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক সাহায্য বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। গাজায় প্রবেশের ক্ষেত্রে যে সব বাধা তৈরি করা হয়েছে, তা-ও অবিলম্বে তুলে নেয়ার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এ প্রস্তাব জাতিসংঘে আলজেরিয়া, আরব ব্লকের প্রতিনিধিরা সমর্থন করেছে।
এছাড়া সেøাভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, জাপান, গায়ানা, মাল্টা, মোজাম্বিক, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিরিয়া লিওনের মতো অস্থায়ী সদস্যরাও সমর্থন করেছে। জাতিসংঘে আলজেরিয়ার দূত বেন্ডজামা বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষ গত পাঁচ মাস ধরে ভয়ংকর কষ্ট সহ্য করেছে। দীর্ঘসময় ধরে সেখানে রক্ত ঝরছে। আমাদের দায়িত্ব হলো, অবিলম্বে এটা বন্ধ করা। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ দায়িত্ব নিয়েছে।’ ফিলিস্তিনের দূত বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব একটা বড় ভূমিকা নেবে। এর ফলে যেন গাজার মানুষের উপর আঘাত বন্ধ হয়।’ তবে ইসরাইল ও হামাস এই প্রস্তাব মানবে কিনা এবং এই প্রস্তাব রূপায়ণ করবে কিনা, সেটা অন্য বিষয়। হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য ও অন্য কয়েকটি সংগঠন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে মনে করে। তারা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, তারা দুই পক্ষের মধ্যে বন্দিবিনিময়ে রাজি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান পরিবর্তনে বেশ ক্ষুদ্ধ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ ঘটনার পর তিনি ওয়াশিংটনে একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পরিকল্পিত সফর বাতিল করেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আগের অবস্থান থেকে পিছু হটে গেছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে তাদের নীতি থেকে সরে গেছে। দুঃখজনকভাবে তারা নতুন প্রস্তাবনাতে ভেটো দেয়নি। যে প্রস্তাবনায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জিম্মি মুক্তির শর্তসাপেক্ষে নয়। এতেই স্পষ্ট হয়, গাজায় যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান ছিল তা থেকে তারা সরে গেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় হামাস মনে করবে যে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল জিম্মিদের মুক্তি ছাড়াই যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে। আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতি থেকে সরে গেলে এবং ক্ষতিকর প্রস্তাবনায় ভেটো না দিলে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলি প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল করবেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসংঘ প্রস্তাবনা পাসের আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পরিবর্তন করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইসরাইলেই থাকবে।’
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চাওয়ায় ইউরোপের ৪ দেশকে হুমকি ইসরাইলের : ইসরাইল সোমবার চারটি ইউরোপীয় দেশকে বলেছে যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা একটি ‘সন্ত্রাসবাদের জন্য পুরস্কার’ গঠন করেছে যা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাবনা হ্রাস করবে। স্পেন শুক্রবার বলেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য, তারা ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে আয়ারল্যান্ড, মাল্টা এবং সেøাভেনিয়ার সাথে সম্মত হয়েছে।
‘৭ অক্টোবরের গণহত্যার পর একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির কাছে একটি বার্তা পাঠায় যে ইসরাইলিদের উপর হত্যাকারী সন্ত্রাসী হামলা ফিলিস্তিনিদের প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়া হবে,’ ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এক্স-এ বলেছেন। ‘সংঘাতের একটি সমাধান কেবলমাত্র পক্ষগুলির মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব হবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে যে কোনও নিযুক্তি শুধুমাত্র একটি সমাধানে পৌঁছানোর জটিলতা এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়ায়।’ কী ধরনের রেজোলিউশন তার মনে আছে তা তিনি উল্লেখ করেননি। ইসরাইল, যার শাসক জোটে বসতিপন্থী উগ্র-ডানপন্থী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্ব বাতিল করেছে। তারা এটিকে পশ্চিমা শক্তির সাথে বিবাদে ফেলেছে যারা হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যকে সমর্থন করে কিন্তু যুদ্ধোত্তর কূটনৈতিক নীলনকশা চায়।
ইসরাইলের যুদ্ধ শেষ করার সময় হয়েছে : হামাসের ৭ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর হামলার পর ইসরাইল যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তিনি হলেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখাতেন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে। তাই ইসরাইলের গাজা যুদ্ধ শেষ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ইসরাইলের একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরো বলেন, ‘হামাস যেভাবে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তা এখন পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনার একটি। তবে আমি বলবো, আপনাকে আপনার এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই এটা শেষ করতে হবে, এটার অবসান ঘটাতে হবে।’ ইসরাইল হায়ম সোমবার ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকারের ভিডিও পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। পত্রিকাটি থেকে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হামাসের নজিরবিহীন ওই হামলায় নিজের পরিবারের সদস্যরা নিহত হলে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হতো?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আপনারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আমিও অনেকটা তেমন প্রতিক্রিয়াই দেখাতাম। আপনাকে তখন সাহস দেখাতেই হতো। একমাত্র বোকারাই ওমনটা করবে না। ওটা ছিল ভয়ঙ্কর হামলা। তাই আমি যখন দেখি লোকজন ৭ অক্টোবর নিয়ে কথা বলছে না বরং ইসরাইল কতখানি আক্রমণাত্মক শুধু সেটা নিয়ে কথা বলছে, তখন আমার বিরক্ত লাগে।’ গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১২শ মানুষকে হত্যা করে। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরো প্রায় ২৫০ জনকে। তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সেইদিন থেকেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল। গাজা যুদ্ধের বয়স ছয় মাস হতে চলেছে। ইসরাইল বলেছে, গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত তারা অভিযান অব্যাহত রাখবে।
ইসরাইল এখন গাজার দক্ষিণ প্রান্তের মিশর সীমান্তবর্তী শহর রাফাহ তে স্থল অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে এবং সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাফাহ তে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে। যারা যুদ্ধ থেকে প্রাণে বাঁচতে গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। রাফাহ তে স্থল অভিযান পরিচালনা নিয়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় মিত্র জো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে ইসরাইল। বাইডেন বলেছেন, রাফাহ তে স্থল অভিযান পরিচালনা করলে সেটা ‘ভুল’ হবে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গাদের দেশের মাটিতে পা রাখতে দিল না ইন্দোনেশিয়া
হাসিনার অবস্থান জানিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন
সুবিদ আলী ভুইয়া ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল চায় ইসলামী ফ্রন্ট
যশোর আদ্-দ্বীন নার্সি ইনস্টিটিউটে নবীন বরণ ও গুনিজন সংবর্ধনা
নোয়াখালীতে মাদরাসা থেকে ফেরার পথে নসিমন চাপায় ছাত্রের মৃত্যু
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে আনন্দ মিছিল
আকিজ বেকারিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ থেকে বাঁচতে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহŸান পীর সাহেব চরমোনাই’র
প্রেসিডেন্টের অপসারণ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো উপদেষ্টা পরিষদে
সাতকানিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলারী আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
'কেটে গেছে সকল শংকা, নিশ্চিত হয়েছে ভেন্যু, উন্মুখ দর্শক,আতিফের অপেক্ষা'
টয়লেটের কাজ সেরে সঙ্গে সঙ্গে অজু করা প্রসঙ্গে।
বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু
সাহিত্যসমাজে অবক্ষয়
যৌতুক
কবিতার বাঁক বদল এবং নতুন ধারা
মানুষের বিবর্তন
বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবহেলা
তারেক রহমানের স্টেট রিফরমেশন : দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ