ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ছে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৫ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম

বিদেশী সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের ওপর নিম্ন আয়ের দেশগুলোর নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুদ ও আসল ফেরত দেয়ার চাপ। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রভাবিত অর্ধশত দেশকে প্রাক-মহামারী সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে যাবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা ডেট জাস্টিস জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সরকারি রাজস্বের বড় একটি অংশ খরচ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে। বর্তমানে এ হার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা কভিড-১৯-এর আগে ছিল ৮ শতাংশ কম। এছাড়া ২০১০ সালে সরকারি রাজস্বের মাত্র ৪ শতাংশ খরচ হতো বিদেশী ঋণ পরিশোধে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডাটা ব্যবহার করে উল্লিখিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে ডেট জাস্টিস। সংস্থাটি বলছে, দেশগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঋণ ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ ধরনের সহায়তা পেলে দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আরো বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে।

ডেট জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক হেইডি চাউ বলেন, ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর রেকর্ড ঋণ জলবায়ুজনিত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে। ঋণ বাতিল করে টেকসই স্তরে নিয়ে আসতে দ্রুত ও কার্যকর সাহায্য প্রয়োজন। বেসরকারি ঋণদাতাদের আন্তর্জাতিক ঋণ ত্রাণ চুক্তিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভূমিকা রাখতে পারে।’

প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যানুযায়ী, ঋণের ৩৮ শতাংশই বিদেশের বেসরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া। ৩৫ শতাংশ ঋণ এসেছে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের মতো বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান থেকে। বাকি ঋণের মধ্যে ১৪ শতাংশে রয়েছে চীনের অবদান। ১৩ শতাংশ দিয়েছে অন্যান্য দেশের সরকার।

ঋণ পরিশোধের জটিলতা দূরের পদক্ষেপ নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ও পরের দশকের মাঝামাঝি দুই দফা সাহায্য পেয়েছে ঋণে জর্জরিত নিম্ন আয়ের দেশগুলো। ফলে ওই সময় দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা তীব্রভাবে কমে আসে। এরপর ২০১০-এর দশক থেকে ধারাবাহিক গতি বজায় থাকলেও চলতি দশকে এর ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

নতুন এ ঋণ সংকটের পেছনে বেশকিছু কারণ দেখিয়েছে ডেট জাস্টিস। এর একটি হলো মহামারীকালে ঋণদাতারা কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু মহামারী-পরবর্তী সে সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। এখন স্থগিত হওয়া ঋণ পুনরায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। এছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতি দেশগুলোর অর্থনীতির স্থবিরতা তৈরি করেছে।

২০১০-এর দশকে বৈশ্বিক সুদহার ছিল একদম সর্বনি¤œ পর্যায়ে। কিন্তু বর্তমানে সুদহারের বৃদ্ধি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন ডলারের তুলনায় বেশির ভাগ মুদ্রার বিনিময় হার দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকে কঠিন করে তুলেছে। বেশির ভাগ বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের মাধ্যম হলো ডলার।

বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান করে নিয়েছে। গতকাল সোমবার জার্মানির বনে ১০ দিনের একটি সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে জলবায়ু অর্থায়ন ও টেকসই ঋণের মাত্রাসহ জলবায়ু কর্মসূচিতে অর্থায়নে দেশগুলোর সক্ষমতা। এ উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডেট জাস্টিস। এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য উদাহরণ হিসেবে খরাপীড়িত জাম্বিয়াকে সামনে এনেছে সংস্থাটি।

সাড়ে তিন বছরের আলোচনার পর সম্প্রতি জাম্বিয়ার সরকার ঋণদাতাদের সঙ্গে পুনর্গঠন চুক্তি করেছে। এ চুক্তি অনুসারে, দেশটির অর্থনীতি যদি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করে, তবে ঋণ পরিশোধে অর্থের অংক বাড়ানো যাবে। অর্থাৎ দ্রুত হারে ঋণ শোধ হবে। কিন্তু খরার মতো ধাক্কার ক্ষেত্রে কিস্তির অংক কমানোর সমতুল্য কোনো ধারা নেই। ঋণ চুক্তির শর্তানুসারে, জাম্বিয়াকে চলতি বছর বন্ডহোল্ডারদের ৪৫ কোটি ডলার দিতে হবে।

এ বিষয়ে ডেট জাস্টিসের নীতিবিষয়ক প্রধান টিম জোনস বলেন, ‘জাম্বিয়ার ঋণদাতাদের চুক্তির শর্ত আপত্তিকর। তারা এমন একটি চুক্তির দাবি করেছে যেখানে অর্থনীতি প্রত্যাশামতো প্রবৃদ্ধি অর্জন করলে ঋণ পরিশোধের আকার বাড়বে। কিন্তু জাম্বিয়া যদি খরার মতো বিপর্যয়ের শিকার হয় তবে ঋণদাতার কোনো ক্ষতি নিজেদের ওপর নেবে না। অথচ এ ৪৫ কোটি ডলার দেশটি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবহার করতে পারবে।’ সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা চীনের শীর্ষ ধনী

টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা চীনের শীর্ষ ধনী