দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্তদের বিচার পাওয়ার লড়াই শেষ হচ্ছে না
০১ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম
ভারতের দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে ২০২০ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়েছিল। চার বছর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা ওই দাঙ্গায় মৃত্যু হয়েছিল ৫৩ জনের। চারদিন ধরে চলা দাঙ্গায় জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেকের বাড়িঘর ও দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দিল্লি পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিহতদের ৪০ জন মুসলিম এবং ১৩ জন হিন্দু। এই দাঙ্গার শিকার এবং তাদের পরিবারের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই কিন্তু আজও চলছে। বিবিসি হিন্দি এমনই কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল তাদের লড়াইয়ের বর্তমান পরিস্থিতি জানাতে। দাঙ্গার সময় কর্দমপুরী এলাকা থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ভিডিওতে পুলিশের উর্দি পরা কয়েকজনকে পাঁচটি ছেলেকে লাঠি পেটা করতে দেখা গিয়েছিল। ওই পাঁচজনকে ‘জনগণমন অধিনায়াক’ এবং ‘বন্দে মাতরম’ গাইতে বলছিল তারা। ইন্টারনেটে ওই ভিডিও আজও রয়েছে।
দিল্লি দাঙ্গার এটি অন্যতম প্রধান মামলা যেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ফয়জানও ছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়। কর্দমপুরীর সরু জায়গা পেরিয়ে আমরা ফয়জানের বাড়িতে যান সাংবাদিকরা। তারা জানান, বাড়িতে ফয়জানের মা কিস্মতুন ছিলেন। বাড়ির পরিস্থিতি দেখিয়ে তিনি জানান, ফয়জানের রোজগারে সংসার চলত। তিনি আমাদের সেই জায়গায় নিয়ে যান যেখানে তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেছেন।
কীভাবে ফয়জানের মৃত্যু হয়েছিল এবং সেই মামলা কতদূর পৌঁছেছে, এই প্রশ্নের উত্তরে কিস্মতুন বলেন “চার বছর হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। ঘটনার আকস্মিকতায় আমার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। একদিন পুলিশ এসে বলল, বয়ান বদলে দাও।” কিস্মতুন জানিয়েছেন, ঘটনার পর পুলিশ ফয়জানকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরে এক রাত তাকে জ্যোতিনগর থানাতে রাখা হয়।
পরদিন তাকে ছেলেকে নিয়ে যেতে বলে পুলিশ। ফয়জনের মৃত্যু হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আদালতে পুলিশের দেওয়া নথি অনুযায়ী, ‘ফয়জানের সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি, স্বেচ্ছায় তিনি থানায় ছিলেন।’ চার বছর পেরিয়ে গেলেও এই মামলায় পুলিশি তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ছেলেকে ন্যায়বিচার না পেতে দেখে ২০২০ সালে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কিস্মতুন। এখন তিনি একটাই জিনিস চান, দোষীদের শাস্তি হোক। আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার দিল্লি হাইকোর্টে ওই মামলা লড়ছেন। তিনি বলেন, এই মামলায় গ্রেফতার তো দূরের কথা, পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্তও করা হয়নি।
বৃন্দা গ্রোভার বলেন, "সে তো ভারতে পুলিশের মনোভাব এমন যে তারা সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করে এবং আদালতে পেশ করে বলে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাটা ভীষণ প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই মামলায় সবকিছু খুব ঢিলেঢালা। প্রত্যেকবার আদালতের সামনে নতুন গল্প তুলে ধরা হয়।”
তিনি আরও বলেন, "সমস্যা হল এখানে একটি সাধারণ দরিদ্র অংশের মুসলিম ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এবং পুলিশকে তার তদন্ত করতে হবে। সেদিন কারা ডিউটিতে ছিলেন, সেই সমস্ত কাগজপত্র পুলিশের কাছে আছে।"
"আপনি তাদের (পুলিশের) কাছে যাচাই করে দেখতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, এভাবে তদন্ত চলতে থাকলে আগামী ছয় বছরও এই তদন্ত চলতে থাকবে। এর জন্য বিশেষ তদন্তকারী টিম গঠন করা দরকার।”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী থানায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা বাধ্যতামূলক। তবে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলছেন, পুলিশ জানিয়েছে, ওই সময় থানায় সিসিটিভি কাজ করছিল না। ফয়জানের বাড়ি থেকে একটু দূরে কউসর আলীর বাড়ি। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাদের মার খেতে দেখা গিয়েছিল তাদের মধ্যে একজনের নাম কউসর আলী। তিনি জানিয়েছেন, সেদিনের কথা ভাবলে আজও শরীরে কাঁটা দেয়।
কউসর আলী বলেন, “সেদিনের ঘটনার পর আমি এখনও পুলিশকে ভয় পাই। মনে হয় যেন ওরা আমাকে আবার তুলে নিয়ে যাবে। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।” আসলে ওই ভিডিওতে যারা মারধর করছিলেন ফয়জন, কউসর আলী-সহ বাকিদের, তারা পুলিশের লোক।
উল্টে দিল্লি পুলিশ হাইকোর্টে শুনানির সময় জানিয়েছিল ভিডিওতে যাদের দেখা গিয়েছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। এই মামলায় আদালতে আক্রান্ত পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এখন পুলিশকে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে হবে। এই বিষয়ে তদন্ত কতটা এগিয়েছে তা জানতে আমরা দিল্লি পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।
আইপিএস অফিসার রাজেশ দেও যিনি দিল্লি দাঙ্গার তদন্তে গঠিত এসআইটির প্রধান ছিলেন, মামলাটি আদালতে রয়েছে বলে কথা বলতে অস্বীকার করেন। দাঙ্গা নিয়ে দিল্লি পুলিশের পরিসংখ্যান কী বলছে আমরা সেটা বোঝারও চেষ্টা করেছি।
পুলিশের পরিসংখ্যান
দিল্লি পুলিশ সূত্র থেকে বিবিসি যে তথ্য পেয়েছে তা বলছে, দাঙ্গার সাথে সম্পর্কিত মোট ৭৫৮টি এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। এই পর্যন্ত মোট ২৬১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৯৪ জন জামিনে রয়েছেন।আদালত এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং ১৮৩ জনকে খালাস করেছে।
একই সঙ্গে ৭৫ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের মামলা বাতিল করেছে আদালত। নিউজ ওয়েবসাইট 'দ্য প্রিন্ট'-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লি দাঙ্গায় নিহতদের মৃত্যু সংক্রান্ত ৫৩টি মামলার মধ্যে ১৪টি মামলা এখনও তদন্তাধীন। এরকম একটি ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। কিন্তু মোট কতগুলি মামলার তদন্ত এখনও চলছে সে বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
সিসিটিভি ভেঙেছিল যে ‘পুলিশকর্মীরা’
অন্য একটি ঘটনায়, উত্তর-পূর্ব দিল্লির খুরেজিতে সিএএ প্রতিবাদস্থলের কাছে পুলিশের পোশাক পরা একদল লোককে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙতে দেখা গেছে। এই ভিডিওটিও বেশ ভাইরাল হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
এই প্রশ্নে দিল্লি দাঙ্গায় আক্রান্ত পক্ষের আইনজীবী মেহমুদ প্রাচা বলছেন, “দিল্লি পুলিশের নাম রয়েছে এমন মামলাতেও তাদের (অভিযুক্ত পুলিশকর্মী) বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সে অর্থে জনস্বার্থ মামলার আওতায় যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ ছিল, সেটাও হয়নি।” ওই দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক পরিবারের হয়ে মামলা লড়ছেন মি প্রাচা। বিবিসি দিল্লি পুলিশের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চাইলেও এখনও তাদের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি।
রতন লাল-অঙ্কিত শর্মা মামলায় যা ঘটেছিল
তবে সব মামলাতেই যে দিল্লি পুলিশি তদন্ত ধীর গতিতে চলছে তেমনটা নয়। দিল্লি দাঙ্গায় কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হেড কনস্টেবল রতন লালের মামলায় দিল্লি পুলিশ এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে, যার মধ্যে ১০ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর রতন লাল মামলায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে মণিপুর ও বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই মামলায় পুলিশ পাঁচটি চার্জশিট দাখিল করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও বিচার শুরু হয়নি। একই সঙ্গে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কর্মী অঙ্কিত শর্মা খুনের ঘটনায় বর্তমানে ১১ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি চাঁদবাগের একটি নর্দমা থেকে অঙ্কিত শর্মার দেহ উদ্ধার হয়।চার্জশিট অনুযায়ী, তার শরীরে ৫১টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মামলার এক অভিযুক্তকে ২০২২ সালের অক্টোবরে তেলেঙ্গানা থেকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। গত বছরের মার্চে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল এবং এখন আদালতে সাক্ষীদের বয়ান শোনা হচ্ছে।
উমর খালিদ এবং এফআইআর নং ৫৯
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল অ্যান্ড ক্রাইম ব্রাঞ্চ বলছে দিল্লি দাঙ্গার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। এর সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৯ সালে সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময়। এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এফআইআর নম্বর ৫৯/২০২০-তে যার তদন্ত করছে ক্রাইম ব্রাঞ্চের স্পেশাল সেল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইনে একটি সংশোধন পাশ করে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টান ও শিখ) মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে ওই সংশোধিত আইনে।
এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আদালত বলছে এখনও পর্যন্ত ৫৯ নম্বর এফআইআর-এ ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এই মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদকে দিল্লি দাঙ্গার মাস্টারমাইন্ড বলে মনে করছে দিল্লি পুলিশ। তিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে জেলে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে সন্ত্রাসবাদ, দাঙ্গা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইউএপিএ আইনে জামিন পাওয়া সহজ নয়। উমর খালিদের জামিনের আবেদন দু'বার খারিজ করে দিয়েছে দুটি পৃথক আদালত। তার জামিনের আবেদন ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ছিল, কিন্তু এই মামলায় এখনও সওয়াল-জবাব শুরু হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে তার জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করেছেন উমর খালিদ এবং জানিয়েছেন তিনি এখন নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হবেন। উমর খালিদের বাবা সৈয়দ কাসিম রসুল ইলিয়াস বলেন, ১৫-২০ দিন আগে ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়।
উমর খালিদের মামলার বিচারে দেরি হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনারা ভেবে দেখুন, বিনা বিচারে সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেছে। চার বছরেও মামলা শুরু হয়নি। এটা যদি উৎপীড়ন না হয়, তাহলে কী? নিম্ন আদালতে দেড় বছর ধরে জামিন নিয়ে সওয়াল জবাব হয়। এরপর আমরা হাই কোর্টের শরণাপন্ন হই।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, "জামিনের আবেদনকে কেন্দ্র করে ছয় মাস ধরে সওয়াল জবাব চলে এবং তারপর আদেশটি চার মাসের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে তালিকাভুক্ত হয়। মোট ১৪বার তালিকাভুক্ত হয়েছে ওই আবেদন কিন্তু প্রতিবারই স্থগিত হয়েছে।”
“আমি মনে করি পুরো মামলাটাই মনগড়া। মামলা কাঠগড়ায় উঠলে পুলিশ কী ভাবে এর সমর্থনে তথ্য প্রমাণ দেবে সে বিষয়ে কোনও ধারণা নেই।” তবে উমর খালিদের বাবা জানিয়েছেন, দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
এই চার বছরে, আদালতের শুনানির সময় বহুবার আদালত দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেছে এবং তাদের তদন্তকে দুর্বল বলেও বর্ণনা করেছে। দয়ালপুর থানায় ২০২৩ সালের আগস্ট সাসে দায়ের করা এফআইআর নং ৭১/২০ তে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগে।
সেই মামলার শুনানি সময় বিচারক পুলসত্য প্রমচালা বলেছিলেন, "এই ঘটনাগুলি সঠিকভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়নি। শুরুতে করা ভুলগুলো ঢাকতে পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুলভাবে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।” তিনজনের বিরুদ্ধে পাথর ছোঁড়া, গাড়িতে আগুন লাগানো, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
একই সময়ে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, দিল্লির কারকারডুমা আদালতে, বিচারক বিনোদ যাদব এই তিনজনকে খালাসের সময় মন্তব্য করেছিলেন, "ইতিহাস যদি স্বাধীনতার পর দিল্লির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে তাকায়, তবে তদন্তকারী সংস্থাগুলির ব্যর্থতার বিষয়টি চোখে পড়বে গণতন্ত্রের রক্ষাকারীদের।”
“এটাও চোখে পড়বে কীভাবে তদন্তকারী সংস্থাগুলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেনি।” এর আগে ২০২২ সালে ভারতের চারজন সাবেক বিচারপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে একটি তথ্য-অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন।
সেই প্রতিবেদনে দিল্লি পুলিশের তদন্ত নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, দিল্লি সরকার এবং সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও কড়া মন্তব্য করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে লিখেছেন পাটনা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি অঞ্জনা প্রকাশ।
তিনি বলেন, “অনেক সাক্ষীর জবানবন্দি দেরিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন অভিযুক্তদের বয়ানের সঙ্গে এই বয়ানকে (সাক্ষীদের) মেলানোর চেষ্টা করছে দিল্লি পুলিশ। কল্পনা করুন একটি মাকড়সার জাল রয়েছে। মাকড়সার জাল কিন্তু সঠিকভাবে রাখাটা কঠিন বিষয়। এক প্রান্ত ছিঁড়ে গেলে পুরো জালটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”
ওই একই তথ্যানুসন্ধানী রিপোর্টে কপিল মিশ্রের মতো বিজেপি নেতাদের দেওয়া ভাষণ সম্পর্কে বলা হয়, তিনি মানুষকে উস্কে ছিলেন, যা হিংসায় ইন্ধন দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। সমাজকর্মী হর্ষ মন্দার দিল্লির পাতিয়ালা আদালতে পিটিশন দাখিল করে বলেছেন, কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা উচিত। সেই আবেদন এখনও আদালতে বিচারাধীন।
২০২০ সালের জুলাই মাসে দিল্লি পুলিশ দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছিল যে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র এবং অন্যান্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এমন কোনও প্রমাণ নেই যা থেকে বলা যায় তার বক্তৃতা দাঙ্গায় উস্কানি দিয়েছে।
পুলিশ কী বলছে?
দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ও মামলার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে বিবিসি। দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা রঞ্জয় অত্রিশ্য বিবিসিকে বলেন, “এখন পর্যন্ত যে তদন্ত হয়েছে তা আইন মেনেই হয়েছে। তদন্ত শেষ করে আমরা বেশ কয়েকটি মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দায়ের করেছে।”
“যেহেতু মামলাটির বিচার এখনও চলছে, সেহেতু এটি মহামান্য আদালতের আওতাধীন। যেসব মামলায় তদন্ত চলছে, সেগুলিতে আমরা চূড়ান্ত রিপোর্ট দায়ের করব। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যেই হোক না কেন।”
এই দাঙ্গায় বহু মানুষের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে কিন্তু নিহতদের পরিবারের ন্যায়বিচারের লড়াই শেষ হচ্ছে না। কীভাবে দাঙ্গা উস্কে দেওয়া হয়েছিল এবং কারা তাদের প্ররোচনা দিয়েছিল? দাঙ্গা, তার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ওঠা সওয়াল এবং সেই অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে- এমন একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। এগুলোর উত্তর এখনও মেলেনি। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪
এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম
বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ
জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা
সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর
গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত
প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি
নোয়াখালীতে গাছের ঢাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু
প্রেসিডেন্ট অপসারণ: ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত’
ডিএমপিতে যুক্ত হচ্ছে ভারতের মাহিন্দ্রা গাড়ি
অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
গাজী ছিলেন একজন আপোষহীন সাংবাদিক নেতা - সিকৃবি ভিসি ড. মো. আলিমুল ইসলাম
মারাত্মক শব্দদূষণ
তারেক রহমানের ঐতিহাসিক দায়
দলে গণতন্ত্র চর্চা অপরিহার্য
বিএনপি এখন সংশোধিত -জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি
রফতানির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা
মাওবাদীদের আত্মসমর্পণে আল্টিমেটাম দিলো মোদি সরকার