নাগরিকত্বের আবেদন করতে চাইছেন মন্ত্রী, বিতর্ক ভারতে
২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯ পিএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯ পিএম
ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সংসদ সদস্য ও জাহাজ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলছেন যে, তিনিও সেদেশের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করবেন। গত সপ্তাহে চালু হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনটি (সিএএ) বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দেয়ার আইন।
ঠাকুর যে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা, তারা পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ। কিন্তু শান্তনু ঠাকুর নিজে বলছেন যে তিনি এমন কি তার বাবা মায়েরও জন্ম ভারতেই। তবে তার দাদী পূর্ব বঙ্গ থেকে ভারতে এসে নথিবদ্ধ করার মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক হয়েছিলেন। সেকারণে তিনি ভারতেরই নাগরিক। বাংলাদেশি অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার আইন অনুযায়ী কেন আবারও তিনি নাগরিকত্বের আবেদন করার কথা ভাবছেন?
বিবিসি বাংলাকে ঠাকুর বলছিলেন, ‘এটা ঠিকই আমি, আমার বাবা মা সবাই ভারতের নাগরিক। তবুও আমি সিএএ অনুযায়ী আবেদন করার পরিকল্পনা করেছি যাতে আমার সমাজে সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে এই আইন অনুযায়ী আবেদন করেন। তাদের সাহস যোগানোর জন্য আবেদন করব আমি।’ তিনি আরও বলছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এবং তৃণমূল কংগ্রেস দল বারবার বলছে সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করলেই সব সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে, নাগরিকত্ব হারাতে হবে।
“মুখ্যমন্ত্রী যে অহেতুক ভয় দেখাচ্ছেন, সেটা প্রমাণ করারও একটা দায়িত্ব আছে আমার। আমি নাগরিকত্বের আবেদন করার পরে দেখি কেমন করে সব সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়, দেখি আমাকে বে-নাগরিক করে দেওয়া হয় কী না। ওরা ভুল বোঝাচ্ছে মানুষকে,” বলছিলেন শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষরা পূর্ব পাকিস্তান বা পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসলেও তারা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করেছেন।
ভারতীয়রা কি আবেদন করতে পারবে?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও শান্তনু ঠাকুর কী করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মতুয়াদেরই একটা অংশের নেতা ও লেখক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস বলছিলেন, “আমি ওদের পরিবারকে বহুদিন ধরে চিনি। ওর জন্ম তো এদেশে। সে কী করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবে? এই আইনে তো সেই সুযোগই নেই।''
“আইনের গোড়াতেই বলা আছে যারা নাগরিক নয়, তারাই একমাত্র নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। যদি তারা আবেদন করেন, তাহলে তো তাকে বলতে হবে তার জন্ম বাংলাদেশে। এফিডেফিটও জমা দিতে হবে যে যা বলছি সত্য বলছি। এফিডেফিটে যদি অসত্য বলা হয়, সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই তিনি আবেদন করতে পারেন না,” বলছিলেন বিশ্বাস।
পূর্ব বঙ্গ এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ভারতে চলে আসা উদ্বাস্তু এবং মতুয়াদের প্রায় দুই কোটি মানুষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পান নি। তবে উদ্বাস্তু এবং মতুয়া নেতারাই স্বীকার করেন যে প্রায় সকলেই কোনও না কোনভাবে ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার কার্ড ইত্যাদি যোগাড় করে নিয়েছেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবী তারা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিলেন। তাই ভারতের বহু মানুষ, এবং অ-বিজেপি দলগুলি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করলেও মতুয়াদের বড় অংশই সিএএ চাইতেন।
তবে তারা চেয়েছিলেন নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। এখন অবশ্য নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য কয়েকটি শর্ত আরোপ করায় তারা আবারও দ্বিধায় পড়েছেন যে নতুন আইনেও কী তারা নাগরিকত্ব পাবেন? যে দেশ থেকে তারা ভারতে এসেছেন, সেখানকার কোনও একটা নথি দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি আসলেই ওই তিন দেশের কোনও একটির নাগরিক ছিলেন। মতুয়াদের একটা অংশ বলছেন, যারা পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছেন, তাদের কাছে কী নথি থাকতে পারে সেদেশের! যদিও মতুয়াদের একটা অংশের মধ্যে উচ্ছ্বাস রয়েছে সিএএ নিয়ে।
মতুয়া কার্ড
সিএএ চালু হওয়ার পর থেকে মতুয়া মহাসংঘের সদস্য কার্ড নেয়ার জন্য প্রচুর ভিড় হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান কেন্দ্রে। ওই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা কথা ছড়িয়েছে যে মহাসংঘের কার্ড থাকলে তারা নাগরিকত্ব পাবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও বলেছেন সেকথা। তিনি বলছিলেন, ‘কারও যদি কোনও নথি না থাকে তবে সেক্ষেত্রে সেলফ ডিক্লারেশন দিতে হবে। আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে বলছি আপনারা মতুয়া কার্ড করুন। এই কার্ড থাকেলে আপনি সংগঠনের একজন সদস্য। আপনার নাগরিকত্ব কেউ আটকাতে পারবে না।’
তবে মতুয়া মহা সংঘের সদস্য বৃদ্ধি তাদের উদ্দেশ্য নয়, এটাও বলেছেন তিনি। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মমতা বালা ঠাকুর বলছেন, ‘মতুয়া কার্ড থাকলেই যে নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কি কিছু বলেছে? শান্তনু ঠাকুর মানুষকে ভাঁওতা দিচ্ছেন। আসলে কার্ড তৈরি করে নিজেদের আয় বাড়াচ্ছেন।’
মতুয়ারা আসলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নমঃশূদ্র গোষ্ঠীর মানুষ। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর এ সম্প্রদায়ের সূচনা করেন। ভারতের স্বাধীনতার পরে তারা নিজেদের বড় সংখ্যক শিষ্যদের নিয়ে ভারতে চলে আসেন এবং উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুরনগরে নিজেদের ধর্মীয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন। মতুয়া সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মগুরুরা স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। এক সময়ের সঙ্ঘাধিপতি প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর ছিলেন কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য। তার ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতিরাও সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন।
একটা সময়ে এই মতুয়ারা প্রায় সবাই ভোট দিতেন বামফ্রন্টকে। ২০১১ সাল থেকে তারা ভোট দিতে শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া মহাসংঘে চিড় ধরল – একটা অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে রইল, যার নেতৃত্বে আছেন দলটির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য মমতাবালা ঠাকুর আর অন্য অংশটির প্রধান শান্তনু ঠাকুর বিজেপির টিকিটে জিতে সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে মতুয়াদের তীর্থস্থান বলে পরিচিত গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে একটি মন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গাদের দেশের মাটিতে পা রাখতে দিল না ইন্দোনেশিয়া
হাসিনার অবস্থান জানিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন
সুবিদ আলী ভুইয়া ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল চায় ইসলামী ফ্রন্ট
যশোর আদ্-দ্বীন নার্সি ইনস্টিটিউটে নবীন বরণ ও গুনিজন সংবর্ধনা
নোয়াখালীতে মাদরাসা থেকে ফেরার পথে নসিমন চাপায় ছাত্রের মৃত্যু
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে আনন্দ মিছিল
আকিজ বেকারিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ থেকে বাঁচতে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহŸান পীর সাহেব চরমোনাই’র
প্রেসিডেন্টের অপসারণ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো উপদেষ্টা পরিষদে
সাতকানিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলারী আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
'কেটে গেছে সকল শংকা, নিশ্চিত হয়েছে ভেন্যু, উন্মুখ দর্শক,আতিফের অপেক্ষা'
টয়লেটের কাজ সেরে সঙ্গে সঙ্গে অজু করা প্রসঙ্গে।
বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু
সাহিত্যসমাজে অবক্ষয়
যৌতুক
কবিতার বাঁক বদল এবং নতুন ধারা
মানুষের বিবর্তন
বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবহেলা
তারেক রহমানের স্টেট রিফরমেশন : দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ