হারিয়ে যাচ্ছে কাশ্মীরের জাফরান, বাঁচাতে বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ
২০ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
বিরিয়ানি-কোরমার মতো অনেক পদই জাফরানের ছোঁয়ায় বিশেষ রং ও গন্ধে বাড়তি মাত্রা পায়। অত্যন্ত দামী সেই উপকরণের ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে।
যতদূর চোখ যায়, উজ্জ্বল বেগুনি রংয়ের সম্ভার। কাশ্মীরের পাম্পোর গোটা বিশ্বে জাফরানের শহর হিসেবে পরিচিত। সেখানে ‘জাফরান ক্রোকাস' বা আঁশ প্রায় ৩০,০০০ পরিবারের আয়ের উৎস। বহু প্রজন্ম থেকে সেই ঐতিহ্য চলে আসছে।
ফিরোজ আহমাদের পরিবারও সেই কাজ করে। শরৎকালে ক্রোকাস ফসল তোলার সময়ে তাঁর ছোট মেয়েও সাহায্য করে। ফিরোজও নিজের বাবা-মাকে সেই কাজে সাহায্য করতেন। কিন্তু তিনি ‘কেসর' নামে পরিচিত জাফরানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আজ উদ্বিগ্ন। ফিরোজ বলেন, ‘‘২০০৩, ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী এক কানাল বা শূন্য দশমিক এক দুই একর জমি থেকে এক কিলো কেসর পাওয়া যেতো। আর এখন এক কিলো পেতে ১৫ কানাল জমি লাগে। ফলে বুঝতে পারছেন, বিগত বছরগুলিতে কতটা অবনতি ঘটেছে।''
একই পরিমাণ জাফরান উৎপাদন করতে আরো বেশি জমির প্রয়োজন পড়ছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনেও সে বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
গবেষক হিসেবে নাশিমান আশরফ কাশ্মীরে জাফরানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। সেই পাহাড়ি এলাকায় এই মশলা শুধু কোনো সাংস্কৃতিক সম্পদ নয়, মানুষের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসও বটে। ড. আশরফ বলেন, ‘‘গত ১৩ বছর ধরে আমি স্যাফরন বায়োলজির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছি। চাষিদের ফিডব্যাক অনুযায়ী জাফরান উৎপাদনের অবনতির তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত উচ্চ মানের রোপণের উপাদানের অভাব রয়েছে। দ্বিতীয় কারণ কর্ম-রট রোগ। তৃতীয় কারণ সেচের ব্যবস্থার অভাব।''
দশ বছরেরও বেশি আগে তিনি এক বড় জিন তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টি করেছিলেন। তাতে ৬০,০০০-এরও বেশি জাফরান ক্রোকাসের সিকুয়েন্স জমা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে, এমন গাছ সৃষ্টি করাই সেই উদ্যোগের লক্ষ্য। ড. নাশিমান আশরফ জানান, ‘‘আমরা জিনগুলি শনাক্ত করেছি। এখন আমরা উন্নত স্মার্ট জাফরান সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। খরা এবং অন্যান্য অ্যাবায়োটিক চাপ সামলাতে এবং কম রট রোগও প্রতিরোধ করতে পারবে সেই জাফরান।''
ইরানের পর ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাফরান উৎপাদনকারী দেশ। ফুলের মধ্য থেকে জাফরানের উপকরণ বার করার জন্য অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজন। এক কিলো খাঁটি জাফরান পেতে হলে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুলের প্রয়োজন হয়। সে কারণে জাফরানের আকাশছোঁয়া দাম। এক কিলোর দাম প্রায় দুই হাজার ইউরো হতে পারে।
নাশিমান আশরফ কাশ্মীরের উত্তরে ইয়ারিখাহ তাংমার্গ অঞ্চল পরিদর্শন করছেন। তাঁর টিম সেখানকার খেতের জন্য ল্যাবে ক্রোকাস টিউবার চাষ করেছে। সেগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে সক্ষম।
এবার দীর্ঘ খরা বা আচমকা প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটলেও সেই গাছ টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে এই গাছ কুখ্যাত ‘কর্ম রট' প্রতিরোধ করতে পারবে। ড. আশরফ বলেন, ‘‘আমরা দশটি জেলাতেই সফলভাবে জাফরান চাষ করতে পারি। তবে এবার আমরা সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারণের কথা ভেবেছি। আমরা এখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে জম্মুতে আমাদের স্থাপনায় সেগুলির মান বিশ্লেষণ করবো। এখানে উৎপাদিত জাফরানের মধ্যে খাঁটি জাফরানের সমান পরিমাণ কম্পাউন্ড আছে কিনা, তা পরীক্ষা করবো।''
এখানে বহুকাল কোনো জাফরান চাষ হয় নি। কিন্তু জলবায়ু-প্রতিরোধী নতুন ফুলগুলি কিন্তু ভালোভাবে বেড়ে উঠছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গাদের দেশের মাটিতে পা রাখতে দিল না ইন্দোনেশিয়া
হাসিনার অবস্থান জানিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন
সুবিদ আলী ভুইয়া ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল চায় ইসলামী ফ্রন্ট
যশোর আদ্-দ্বীন নার্সি ইনস্টিটিউটে নবীন বরণ ও গুনিজন সংবর্ধনা
নোয়াখালীতে মাদরাসা থেকে ফেরার পথে নসিমন চাপায় ছাত্রের মৃত্যু
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে আনন্দ মিছিল
আকিজ বেকারিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ থেকে বাঁচতে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহŸান পীর সাহেব চরমোনাই’র
প্রেসিডেন্টের অপসারণ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হলো উপদেষ্টা পরিষদে
সাতকানিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলারী আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
'কেটে গেছে সকল শংকা, নিশ্চিত হয়েছে ভেন্যু, উন্মুখ দর্শক,আতিফের অপেক্ষা'
টয়লেটের কাজ সেরে সঙ্গে সঙ্গে অজু করা প্রসঙ্গে।
বরিশাল অঞ্চলে ‘জরায়ুমুখ ক্যন্সার’ প্রতিরোধে ৫ লাখ কিশোরীকে ‘এইচপিভি’ টিকাদান কর্মসূচী শুরু
সাহিত্যসমাজে অবক্ষয়
যৌতুক
কবিতার বাঁক বদল এবং নতুন ধারা
মানুষের বিবর্তন
বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবহেলা
তারেক রহমানের স্টেট রিফরমেশন : দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ