ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

মমতার সামনে দারুণ হিসাব

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৫ জুন ২০২৪, ১০:৩২ এএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ১০:৩২ এএম

বেশি দিন নয়, মাত্র বছর খানেক আগের কথা। তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় দলের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে বিজেপি বলেছিল, তৃণমূল কেবলই এখন আঞ্চলিক শক্তি। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তাদের কোনও মূল্যই নেই।

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সেই তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গেই শুধু জিতলই না, বিজেপিকে ধরাশায়ী করে স্যুইপ করল পশ্চিমবঙ্গে। এবং এই সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল মমতাকে ফের প্রাসঙ্গিক করে দিলো জাতীয় রাজনীতিতে। তিনি এখন আর শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নন, পুনরায় বড় চরিত্র হয়ে উঠে এলেন, জাতীয় রাজনীতিতে। তাকে আর উপেক্ষা করা যাবে না।

 

প্রশ্ন হলো কেন?

এর উত্তর ও কার্যকারণ খুবই সহজ। ২০১৪ সাল থেকে ভারতে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। কেবল নামেই জোট তথা এনডিএ সরকার ছিল কেন্দ্রে। বাস্তবে বিজেপির একক বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় শরিক দলগুলোর কোনো গুরুত্বই ছিল না সরকার পরিচালনায়। ভারতে অনেকেই বিশ্বাস করেন, গত ১০ বছর স্রেফ দুজন মানুষ চালিয়েছেন এই দেশ। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ।

২০২৪ সালের এই সাধারণ নির্বাচন সেই ব্যাবস্থারই অবসান ঘটিয়েছে। ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট বিজেপি আর একক বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নয়। সরকার গড়তে হলে তাদের নির্ভর করতে 'তেলুগু দেশম', 'সংযুক্ত জনতা' দলের মতো আঞ্চলিক শক্তির ওপর। প্রায়ই দেখা গেছে, ভারতে অধিকাংশ আঞ্চলিক শক্তিই নির্ভরযোগ্য নয়।

অতীতে বাজপেয়ী জমানায় চন্দ্রবাবু নায়ডু বিজেপি শরিক ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখেই সঙ্গ ছেড়েছিলেন চন্দ্রবাবু। নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল কতবার বিজেপির সঙ্গে জুড়েছেন, কতবার ছেড়েছেন তারও ইয়ত্তা নেই। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে জোট সরকার তৈরি হলেও একটা অস্থিরতার আশঙ্কা থেকেই যাবে। এবং বিজেপিকে আঞ্চলিক শক্তির মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হবে।

মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলও একটি আঞ্চলিক শক্তি। এই নয় যে দরকার পড়লে মমতা তথা তৃণমূল মোদিকে সমর্থন দিয়ে দেবেন বা তাদের জোটে সামিল হয়ে যাবেন। বরং বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির চিন্তা থাকবে অন্য।

জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটে তৃণমূল এখন তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি। কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির পরই তাদের এমপির সংখ্যা। সুতরাং সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিজেপিকে চাপের মধ্যে রাখতে অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারেন মমতা। তাই গত ১০ বছর ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকে বিজেপি যে ধরনের আচরণ করেছে মমতা বা তৃণমূলের সঙ্গে তা এখন চালিয়ে যাওয়া মুশকিল।

 

জাতীয় রাজনীতিতে মমতার প্রাসঙ্গিকতা বাড়ার অন্য কারণও রয়েছে। এটা ঠিক, এই ভোটে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, একে পুরোপুরি কংগ্রেসের 'কাম ব্যাক' বলা চলে না। কংগ্রেসের এই আসন বৃদ্ধি একার ক্ষমতায় পুরোপুরি হয়নি। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ুতে জোটে থাকার সুবিধা কংগ্রেস পেয়েছে। কংগ্রেস সদ্য কর্নাটক ও তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় ফিরেছে। দেখা যাবে, সেখানে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে কংগ্রেসের ফল আশাপ্রদ নয়। বরং সেখানে বিজেপিই অধিকাংশ আসনে জিতেছে। কর্নাটকে ২৮টি আসনের মধ্যে ১৭টিতেই জিতেছে বিজেপি। তেলেঙ্গানায় ১৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৮টি আসনে, কংগ্রেস মাত্র ৬টি আসনে জিতেছে। গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে সবকটি আসনে হেরেছে কংগ্রেস। ছত্তীসগড়েও প্রায় তাই অবস্থা। একমাত্র পাঞ্জাব ও রাজস্থানে কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে কংগ্রেসের।

 

তাই কংগ্রেসকেও বিরোধী শিবিরের অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তালমিল করেই চলতে হবে। সেই বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে 'বিগ ব্রাদারের' ভূমিকা নিতে দেয়ার সম্ভাবনা কম মমতা ব্যানার্জিরও। বরং হতে পারে তিনি নিজেই বিরোধী জোটের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন।

মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের পর ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা এদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি বলেছেন, 'কংগ্রেসকে বলেছিলাম, তোমরা একা পারবে না। ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করো। কংগ্রেস তা করেই ফল পেয়েছে। বাংলাতেও ওদের দুটি আসন ছাড়তে চেয়েছিলাম। ওরা রাজি হয়নি। রাজি হলে অন্তত দুটো আসনে জিতে যেত।'

এখন প্রশ্ন হলো, মোদির নেতৃত্বে বিজেপির আশানুরূপ ফল হলো না কেন? পশ্চিমবঙ্গের আগামী দিনের রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে?

 

এর উত্তরও এতক্ষণে পরিষ্কার। তা হলো, এই লোকসভা ভোটে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ নরেন্দ্র মোদির ‘গ্যারান্টিকে’ প্রত্যাখ্যান করেছে। তার গ্যারান্টিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেনি। উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যাচ্ছে, বারনসি নরেন্দ্র মোদির জয়ের ব্যবধান আগের ভোটের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কারণ, বহু মানুষ মনে করেছেন, 'আচ্ছে দিন' আসেনি। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়নি। বছরে ২ কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হয়নি। শুধু তা নয়, যেভাবে দু’জন মানুষ দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন, তাতেও আস্থা কমে আসছিলো। সমাজে বিভাজনের বিষ ছড়ানোর খেলাও বহু মানুষের নাপসন্দ। তা ছাড়া মহারাষ্ট্রে জনাদেশকে দুমড়েমুচড়ে অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গঠন, ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির অতিসক্রিয়তা, বিচার ব্যবস্থার উপর প্রভাব খাটানোও বিপুল সংখ্যক মানুষ মেনে নিতে পারেনি।

মোদিকে সেই প্রত্যাখ্যানের মেজাজ থেকে পশ্চিমবঙ্গেও বিচ্ছিন্ন ছিল না। লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। আবার কেন্দ্রে এখন মোদি শাহ জুটি দুর্বল। তাই অনেক দিন পর এখন রাজ্যেও কি কিছুটা 'স্বস্তিতে' থাকবেন মমতা ব্যানার্জি? হয়তো এবার কিছুটা হলেও সরকার ও দলকে ভালো করে গুছিয়ে নেবেন তিনি। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা চীনের শীর্ষ ধনী

টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা চীনের শীর্ষ ধনী