ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্রে জাতিসংঘের স্কুলে ইসরাইলি হামলা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ জুন ২০২৪, ০৯:৫০ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ০৯:৫০ এএম

অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারও জাতিসংঘের একটি স্কুলে হামলা করেছে জায়নবাদী ইসরাইল। বৃহস্পতিবার সে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় অন্তত ৪৫ জন হত্যার শিকার হয়েছেন।

আলজাজিরা জানায়, হামলায় আহত হয়েছেন ৭০ জনেরও বেশি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরাইল এ হামলা চালিয়েছে বলে সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নৃশংস এ হামলা চালানো হয়। শরণার্থী শিবিরের স্কুলটি পরিচালনা করে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। আলজাজিরা জানিয়েছে, শত শত বাস্তুচ্যুত লোক জাতিসংঘের ওই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। হামলার সময় স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত অনেকে অবস্থান করছিলেন। আহতদের কাছের আল-আকসা মার্টার্স হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বিবিসিকে বলেছেন, একটা ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে স্কুলটির উপরের তলার শ্রেণিকক্ষে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত ও আহতদের সরিয়ে পাশের হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিধ্বস্ত ক্লাসরুম ও মর্গের সামনে পড়ে থাকা লাশের সারি দেখা যায়। হামলায় আহত এক নারীকে চিৎকার করে ভিডিওতে বলতে শোনা যায় ‘অনেক যুদ্ধ হয়েছে! আমরা অসংখ্যবার উচ্ছেদ হয়েছি। আমার সন্তানরা যখন ঘুমাচ্ছিল তখন তারা তাদের হত্যা করেছে।’

হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরাইলও। ওই স্কুলে হামাসের তৎপরতা ছিল বলে দাবি করেছে তারা। এ দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি সিএনএন। তবে ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা ভিডিও বিশ্লেষণ এবং একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

হামলার ভিডিওটি ধারণ করেছেন সিএনএনের এক সাংবাদিক। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্তত দুটি জিবিইউ-৩৯ এসডিবি বোমার ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা গেছে। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় দুবার যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করল সিএনএন। এর আগে গত ২৬ মে রাফায় আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর মার্কিন অস্ত্র দিয়ে ইসরাইলি হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএনএন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, জাতিসংঘের যে স্কুলে হামলা করেছে সেটি ‘হামাসের কম্পাউন্ড’ হিসেবে গড়ে উঠেছিল। দেশটির ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের যুদ্ধবিমান একটি ‘সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে নুসেইরাত এলাকায় জাতিসংঘের একটি স্কুলের আড়ালে থাকা হামাস কম্পাউন্ডের ওপর।’ বিবৃতিতে বলা হয় তারা সেইসব হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ‘সন্ত্রাসীদের’ মেরেছে।

অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে হামাসের মিডিয়া অফিস ইসরাইলের এ হামলাকে ‘বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিযুক্ত করছে। ইসরাইল যে দাবি করেছে ওই স্কুলে হামাসের অবস্থান ছিল, সেটিকে নাকচ করে দিয়েছেন হামাস মিডিয়া অফিসের পরিচালক ইসমাইল-আল-থাওয়াবটা। ‘দখলদাররা এসব মিথ্যা ও বানানো গল্প ব্যবহার করে, তারা অসংখ্য উচ্ছেদ হওয়া লোকের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর অপরাধ করেছে সেটিকে সঠিক প্রমাণ করতে চায়,’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ইসরাইল হাসপাতাল, জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলসহ বিভিন্ন বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অজুহাত হিসেবে হামাসের উপস্থিতির কথা বলে আসছে শুরু থেকেই। তবে এখন পর্যন্ত এসব দাবির পেছনে কোনো প্রমাণ হাজিরে ব্যর্থ হয়েছে তারা।

এর আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায় যে তারা বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের পূর্বাঞ্চল এবং গাজার কেন্দ্রস্থলে দেইর আল-বালাহ শহরের উপরে ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ’ নিয়েছে এবং সেখানে অসংখ্য ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সেখানকার অধিবাসীরা তীব্র বোমাবর্ষণের কথা জানিয়েছেন এবং দাতব্য সংস্থা মেদেসিন্স সান্স ফ্রন্তিয়েরেস (এমএসএফ) বলেছে যে মঙ্গলবার থেকে অন্তত ৭০টি মৃতদেহ ‘যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু’ একটি স্থানীয় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, তাদের চিকিৎসা দল গাজার কেন্দ্রস্থলে টিকে থাকা একমাত্র কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সংবলিত দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের পরিস্থিতি ‘কল্পনাতীত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা

আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব