ইসরাইলকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে বিপাকে জার্মানি
০৭ জুন ২০২৪, ১০:০৯ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ১০:০৯ এএম
ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি জার্মানির নিঃশর্ত সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের চরম দুর্দশা ও দুর্ভোগের ব্যাপারে বার্লিনের দ্বৈত নীতি পশ্চিম এশিয়ায় জার্মান সরকারের প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করে দেয়ার চেষ্টা করে এসেছে জার্মানি। আর এর মাধ্যমে ইউরোপের এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নিজের প্রভাব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে এবং বহুদিন ধরে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভালো মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
কিন্তু এখন পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে; আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ফ্রন্টের প্রতি সমর্থন বেড়ে গেছে এবং আরব দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনকে ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইসরাইলের প্রতি জার্মানির নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে ইউরোপীয় দেশটির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে
জার্মানি হচ্ছে সেই দেশ যেটির ওপর কথিত হলোকাস্টের প্রেতাত্মা ভর করে রয়েছে। নিজের নামের পাশ থেকে সেই কলঙ্ক মুছে ফেলার জন্য দেশটি শুরু থেকে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও এটিকে টিকিয়ে রাখার কাজে সাহায্য করেছে। সেইসঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন চালানোর পর থেকেই ওই হামলাকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে জার্মানি।
আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর গাজা যুদ্ধের ব্যাপারে জার্মানির মানবতাবিরোধী সমর্থন বিশ্বব্যাপী বার্লিনের গ্রহণযোগ্যতা আগের চেয়েও কমিয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস এক বক্তৃতায় গাজা যুদ্ধের ব্যাপারে তার দেশের নীতি সুস্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে জার্মানি শুধুমাত্র ইসরাইলের পাশে থাকতে চায়।”
চ্যান্সেলরের ওই ঘোষণার পর জার্মানি ইসরাইলের কাছে নিজের অস্ত্র রপ্তানি প্রায় ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর প্রয়োগ করার জন্য আমেরিকার পর ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি সমরাস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে জার্মানি।
ইসরাইলের প্রতি জার্মানির এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আরব দেশগুলোর জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। উত্তর আফ্রিকার আরব দেশ তিউনিশিয়ায় জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা শিশু হত্যাকারী ইসরাইলের প্রতি জার্মানির অকুণ্ঠ সমর্থনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
গত বছরের অক্টোবরে তিউনিশিয়ার রাজধানী তিউনিসে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার প্রোগল যে বক্তব্য দেন তার বিরুদ্ধে তিউনিশিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই অনুষ্ঠানে তিউনিশিয়ার শিক্ষামন্ত্রী ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এরপর জার্মান রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। ওই ঘটনা তিউনিশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে জার্মান দূতাবাসের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং বিক্ষোভকারীরা জার্মান রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
ইসরাইলের প্রতি জার্মানির সমর্থনের কারণে পশ্চিম এশিয়ায় তৎপর জার্মানির বহু প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জনগণের রোষাণলে পড়েছে। পশ্চিম এশিয়ার পাঁচটি দেশে তৎপর জার্মানের ছয়টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নয়জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন। এসব কর্মী তাদের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতি জার্মানির সমর্থনের কারণে স্থানীয় জনগণের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তারা প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা একথা স্বীকার করেন যে, জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ওপর ইসরাইলি দখলদারিত্ব বর্ণবাদের শামিল। তারা আরো বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের ব্যাপারে জার্মানি যে নীতি গ্রহণ করেছে তা বাস্তবতা বিবর্জিত। এসব কর্মী আরো বলেন, তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার সময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলি আচরণকে ‘বর্ণবাদ’ এবং ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ বলে উল্লেখ করেন।
অথচ জার্মান সরকার ইসরাইলের ব্যাপারে বর্ণবাদ কিংবা জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের মতো পরিভাষাগুলো ব্যবহার করতে নারাজ এবং বার্লিন বরং উল্টো এসব পরিভাষাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে মনে করে। জার্মানির জিআইজেড নামক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ফরেন পলিসিকে বলেছেন, গাজা যুদ্ধে জার্মানি ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে জার্মান সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে।
এদিকে পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত বহু জার্মান সংস্থা তাদের স্থানীয় কর্মীদেরকে জনরোষের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বহু অনুষ্ঠান বাতিল করেছে, অনেক প্রতিবেদন প্রকাশের কাজ স্থগিত রেখেছে এবং ইসরাইলের সমর্থনে গৃহিত প্রকল্পগুলো থেকে নিজেদের লোগো সরিয়ে ফেলেছে।
২০২০ সালে ওয়াশিংটন অ্যারাবিক সেন্টারের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ আরব নাগরিক জার্মানির পররাষ্ট্রনীতিকে ইতিবাচক বলে মনে করেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দোহা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গাজা যুদ্ধের পরিপেক্ষিতে ১৬টি আরব দেশের শতকরা ৭৫ ভাগ উত্তরদাতা জার্মানির পররাষ্ট্রনীতির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সূত্র: পার্সটুডে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা
অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়
হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট
কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০
দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার
বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ
রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী
অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা
শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে
চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার
ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে
মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না
ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত
পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন
শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি
আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ
ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে
রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়
উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব