ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আল কুরআনের দৃষ্টিতে তাওবা ও ইস্তিগফারের গুরুত্ব ও ফজিলত-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল হাকীম

১১ মার্চ ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম

তাওবা ও ইস্তিগফার মুমিন ও মুত্তাকী বান্দাদের এক বিশেষ গুণ। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদত-বন্দেগী ও তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ যেহেতু শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করে বসে, আল্লাহ তায়ালার মর্জি মোতাবেক চলার ক্ষেত্রে ভুল করে থাকে, তাই আল্লাহ তায়ালা তার সে ভুল বা গুনাহ থেকে মুক্তিদানের জন্য তাওবা ও ইস্তিগফারের ব্যবস্থা রেখেছেন।

এই তাওবা ও ইস্তিগফার একজন মুমিনকে দান করে নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ জীবন। মুমিনকে সর্বদা গুনাহমুক্ত জীবনের প্রতি করে অনুপ্রাণিত। মুমিনকে নিয়ে যায় ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে উন্নতি ও মর্যাদার সুউচ্চ শিখরে। তাই তাওবা ও ইস্তিগফার মুমিনের জীবনের এক অপরিহার্য বিষয়। তাকওয়াপূর্ণ ও গুনাহমুক্ত জীবন লাভ করতে যা একান্ত জরুরি।

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে মুত্তাকীদের গুণাবলির বর্ণনা দিয়ে বলেন : এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনো ভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আল্লাহ ছাড়া কেইবা আছে, যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে। আর তারা জেনে শুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৫)।

তাওবা ও ইস্তিগফার নবীদের সুন্নত : নবী-রাসূলগণ নিজেরা যেমন আপন রবের কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করেছেন, উম্মতকেও তাওবা ও ইস্তিগফার করতে আদেশ করেছেন। তাওবা-ইস্তিগফার শিক্ষা দিয়েছেন। যদিও নবী-রাসূলগণের তাওবা-ইস্তিগফার ও উম্মতের তাওবা ইস্তিগফারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কারণ নবী-রাসূলগণ মাসূম ও নিষ্পাপ। তাঁদেরকে আল্লাহ গুনাহ থেকে রক্ষা করেন।

কিন্তু তাঁদের উম্মত তো মাসূম ও নিষ্পাপ নয়। তাই নবীগণের তাওবা ও ইস্তিগফার হয়ে থাকে কেবলমাত্র নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। আর উম্মতের তাওবা ও ইস্তিগফার তো কখনো নিজেদের গুনাহের ক্ষমার জন্য, আবার কখনো নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য হয়ে থাকে।

নবীগণের তাওবা ও ইস্তিগফার : নবীগণও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করেছেন। তাদের তাওবা ও ইস্তিগফারের ঘটনা ও ভাষা কুরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে। আমরা এখানে কুরআন থেকে কয়েকজন নবীর তাওবা ও ইস্তিগফারের বর্ণনা তুলে ধরছি।

হযরত আদম (আ.)-এর বক্তব্যে তাওবা ও ইস্তিগফার : হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যাব। (সূরা আরাফ : ২১)।

হযরত নূহ (আ.)-এর বক্তব্যে তাওবা ও ইস্তিগফার : হে আমার রব! আপনি আমাকে আমার পিতা-মাতাকে এবং আমার ঘরে যারা ঈমানের সঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং মুমিন নর-নারীদেরকে ক্ষমা করুন। আপনি জালেমদেরকে ধ্বংস করুন। (সূরা নূহ : ২২)।

হযরত মূসা (আ.)-এর বক্তব্যে তাওবা ও ইস্তিগফার : হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমি আমার প্রতি জুলুম করেছি। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। তাই তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি বড় ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সূরা কাসাস : ২৪)।

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্যে তাওবা ও ইস্তিগফার : হযরত আগার ইবনে ইয়াসার আলমুযানী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। কেননা আমি দিনে একশত বার তাওবা করি। (সহীহ মুসলিম : ২৭০২)।

এখানে এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, নবী ও রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার নির্বাচিত বান্দা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের গোটা জীবন আল্লাহ তায়ালার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। তাই তারা যাবতীয় গুনাহ থেকে দূরে থেকে জীবনযাপন করেন। তাদের থেকে কখনও সগীরা বা কবীরা গুনাহ সংঘটিত হয়নি। এজন্যই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সর্ববাদী আকীদা হলো, নবী ও রাসূলগণ মাসূম ও নিষ্পাপ।

তাই আম্বিয়া (আ.)-এর মুখে তাওবা ও ইস্তিগফার উচ্চারিত হওয়ার অর্থ কখনোই এ নয় যে, তারা তাদের গুনাহের জন্য বা নবুওতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য তারা তাওবা ও ইস্তিগফার করে থাকেন; বরং তারা তো তাওবা ও ইস্তিগফার করেন আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বা তাঁদের থেকে অধিক উত্তম কাজের তুলনায় কম উত্তম কাজ সংঘটিত হওয়ার কারণে এবং সঙ্গে সঙ্গে উম্মতকে তাওবা ও ইস্তিগফার শিক্ষা দেওয়ার জন্য।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে

আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে

মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস

শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস

চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স

চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স

৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু,  কমেনি যানজট

৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট

খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত

খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত

ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া

ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া

সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২

সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২

সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা

সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা

শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা

শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য

বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য

নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী

নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী

পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার

পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন

সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন

বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া

বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া

যৌক্তিক সমালোচনা মানতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের নতুন কোচের

যৌক্তিক সমালোচনা মানতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের নতুন কোচের

সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ

সেনাবাহিনী যেতেই রাস্তা ছেড়ে পালালেন রিকশাচালকরা!

সেনাবাহিনী যেতেই রাস্তা ছেড়ে পালালেন রিকশাচালকরা!

Veet