ঢাকা   শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শঙ্কা ও ভয় : ঈমানের আরেক সঙ্গী-১

Daily Inqilab শিব্বীর আহমদ

১৪ মার্চ ২০২৩, ১১:১০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৫৭ পিএম

হযরত সাহল ইবনে সাদ সাঈদী (রা.)-এর বর্ণনা, একবার মুশরিকদের সঙ্গে এক যুদ্ধ হলো। যুদ্ধের এক পর্যায়ে উভয় দল নিজেদের ছাউনিতে চলে গেল। এমন সময় নিজেদের পক্ষে বীরবিক্রমে লড়াই করা এক ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে তো জাহান্নামী। এ কথা শুনে উপস্থিত একজন তাকে অনুসরণ করল। যখন সেই লড়াকু লোকটি যুদ্ধের জন্য বের হলো, তখন এ অনুসরণকারীও তার সঙ্গে বের হলো। একজন যখন দৌড়ায় তখন অপরজনও দৌড়ায়। একজন দাঁড়ালে অপরজনও দাঁড়িয়ে যায়। এভাবেই সে তাকে অনুসরণ করছিল।

একপর্যায়ে লড়াকু লোকটি ভীষণভাবে আক্রান্ত হলো। আঘাতের তীব্রতায় টিকতে না পেরে সে মাটিতে নিজের তরবারি রেখে তা দিয়েই আত্মহত্যা করল। তা দেখে অনুসরণকারী ছুটে গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট। বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন-কী বিষয়? সে বলল, একটু আগে আপনি যে লোকটিকে জাহান্নামী বলেছিলেন আর অন্যরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না, আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আমি তোমাদের হয়ে তার বিষয়টি দেখছি। এরপর আমি তার পেছনে পেছনে বেরিয়ে পড়ি।

যুদ্ধের একপর্যায়ে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়ে। তখন নিজের তরবারি দিয়েই নিজেকে সে শেষ করে দেয়। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : কাউকে দেখে মনে হয়, সে জান্নাতীদের মতোই আমল করে যাচ্ছে, অথচ সে জাহান্নামী। আবার কাউকে দেখে মনে হয়, সে জাহান্নামীদের মতো কাজ করে যাচ্ছে, অথচ সে জান্নাতী। (সহিহ বুখারি : ৪২০১)।

এ হাদিসের এক মর্ম তো এমন-মৃত্যুর সময় যে ঈমান নিয়ে যেতে পারবে, আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখে সেই সুখী হবে। আর সারা জীবন ভালো ভালো আমল করেও যদি মৃত্যুর সময় ঈমান কারও খোয়া যায়, তাহলে যন্ত্রণাদায়ক জাহান্নামই হবে তার স্থায়ী ঠিকানা। এর পাশাপাশি এ হাদিসটি আমাদেরকে আরেকটি মহাসত্যের নির্দেশ করছে-দুনিয়ার এ জীবনে বাহ্যত একটু ভালো কাজ করেই, কিছুটা নেক আমল করেই পরকালীন শাস্তি থেকে মুক্তির বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।

একটু একটু নেক আমলের পাশাপাশি মরণটাও যদি ঈমানের সঙ্গে হয়, তাহলেই চিরসুখের নিশ্চয়তা। কিন্তু মৃত্যুর সময়টি কার কেমন যায়-কে জানে? ঈমান হারানোর আশঙ্কা তো পদে পদে। চলার পথের প্রতিটি বাঁকে শয়তান ওত পেতে আছে। হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা না করে উল্টো অহংকার করার অপরাধে যখন তাকে জান্নাত থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তখনই সে আদমসন্তানদের বিভ্রান্ত করার শপথ করে নিয়েছে। কুরআনের ভাষায় : সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, তাই আমিও শপথ করছি, আমি তাদের জন্যে তোমার সরল পথে ওত পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের ওপর হামলা করব তাদের সম্মুখ থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও। আর তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না। (সূরা আরাফ : ১৬-১৭)।

এরপর থেকে শয়তান তার মিশনে সদা অবিচল। বনি আদমকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্তে সে সদা মশগুল। একজন মুমিন যখন এ চক্রান্তকারী শয়তানের সব জাল ছিড়ে চলতে থাকে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে, মহান প্রভুর সন্তুষ্টির পথে, সিরাতে মুসতাকিমে, শয়তান তার পিছু ছাড়ে না। তাকে পথহারা করার শেষ চেষ্টাটি সে করে মৃত্যুর সময়। মৃত্যুর মাধ্যমে যেমন এ জীবনের সমাপ্তি ঘটে, সমাপ্তি ঘটে এ জীবনের পরীক্ষারও। যে পরীক্ষার ক্ষণে ক্ষণে পদস্খলনের আশঙ্কা, সে পরীক্ষায় তো আর নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। মুমিনমাত্রই তাই এ নিয়ে শঙ্কিত থাকে।

এ তো গেল মৃত্যুর সময়ের আশঙ্কার কথা। আশঙ্কা রয়েছে মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়েও। পরকালের বিচারের মাঠে যখন ছোট-বড় গোপন-প্রকাশ্য ভালো-মন্দ সব আমল উপস্থিত থাকবে, সে বিচারে আমার গন্তব্য কোথায় নির্ধারিত হয়! সে বিচারের মাঠে তো আমার হাত, আমার পা, আমার চোখ-কান আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে! পবিত্র কুরআনের ঘোষণা : কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে। কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে। (সূরা যিলযাল : ৭-৮)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা-৩
কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা-২
কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা-১
আল্লাহ তওবা কবুলকারী
তাকওয়ার পরিচয় ও মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য
আরও

আরও পড়ুন

সিডরের ভয়াল সেই ১৫ নভেম্বর আজ

সিডরের ভয়াল সেই ১৫ নভেম্বর আজ

মুজিববাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা শতগুণ কঠিন : আসিফ মাহমুদ

মুজিববাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা শতগুণ কঠিন : আসিফ মাহমুদ

আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার

আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার

যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদের পাড় ভেংগে একটি বাড়ির তিনটি ঘর ভেঙে পড়েছে

যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদের পাড় ভেংগে একটি বাড়ির তিনটি ঘর ভেঙে পড়েছে

ভয়াবহ দূষণের কবলে দিল্লি, বন্ধ সব প্রাইমারি স্কুল

ভয়াবহ দূষণের কবলে দিল্লি, বন্ধ সব প্রাইমারি স্কুল

যশোরে মাছের ঘের থেকে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ১৬ জন আহত

যশোরে মাছের ঘের থেকে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ১৬ জন আহত

ইসরাইলি হামলায় দামেস্কে নিহত ১৫

ইসরাইলি হামলায় দামেস্কে নিহত ১৫

যশোরে সেনা অভিযান বিদেশি পিস্তল সহ আটক ৩ সন্ত্রাসী

যশোরে সেনা অভিযান বিদেশি পিস্তল সহ আটক ৩ সন্ত্রাসী

অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় গাজা-লেবাননে নিহত আরও ৪৫

অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় গাজা-লেবাননে নিহত আরও ৪৫

গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে আশরাফুলদের লক্ষ্য ফাইনাল

গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে আশরাফুলদের লক্ষ্য ফাইনাল

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্র নিহত

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্র নিহত

প্যারাগুয়ের মাঠে হেরেই গেল আর্জেন্টিনা

প্যারাগুয়ের মাঠে হেরেই গেল আর্জেন্টিনা

উইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ ইংল্যান্ডের

উইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ ইংল্যান্ডের

ভিনিসিউসের পেনাল্টি মিসে জয়হীন ব্রাজিল

ভিনিসিউসের পেনাল্টি মিসে জয়হীন ব্রাজিল

জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ

জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ

বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান

বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান

গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর

গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর

ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি

ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি

ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬

ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬

জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি

জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি