অন্যের সাথে ওই আচরণ করি যা পেলে আমি খুশি হই-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

২০ মার্চ ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০১ পিএম

সহিহ মুসলিমে একটি হাদিস আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : ‘যে চায় তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে। আর মানুষের সাথে তেমন আচরণ করে যেমন আচরণ পেতে সে পছন্দ করে’।

এখানে দু’টো বিষয় লক্ষণীয়। এক. সকল দ্বীনদারী ও পরহেযগারীর মূল উদ্দেশ্য, জান্নাত লাভ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া। তো রাসূলে কারীম (সা.) জানিয়ে দিলেন, জাহান্নাম থেকে বাঁচা ও জান্নাত লাভ করা দু’টি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। একটি হলো আল্লাহ তায়ালার প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখা।

আর দ্বিতীয়টি হলো মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করা। তো পারস্পরিক উত্তম আচরণকে আল্লাহর রাসূল জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম সাব্যস্ত করেছেন। বোঝা গেল, আদাবুল মুআশারা বা পারস্পরিক আচরণবিধি দ্বীনের একটি অংশ। এটি দ্বীনদারী ও তাকওয়া পরহেযগারীর অন্তর্ভুক্ত। এটি নিছক ব্যক্তিগত ভদ্রতার বিষয় নয়, দ্বীনের বিষয়। এ ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারে না। পরিপূর্ণ দ্বীনদার হতে পারে না।

দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মানুষের সাথে এমন আচরণ করা যে আচরণ মানুষের কাছ থেকে পেতে সে পছন্দ করে। একটি মাত্র বাক্য আল্লাহর রাসূল (সা.) ব্যবহার করেছেন, যাতে ‘আদাবুল মুআশারা’ এর সব কিছু এসে গেছে। মানুষের সাথে সুন্দর আচরণের যত ক্ষেত্র হতে পারে এবং যত রূপ হতে পারে, তেমনি অসুন্দর আচরণ থেকে বেঁচে থাকার যত ক্ষেত্র ও রূপ হতে পারে সবকিছু রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই এক বাক্যে এসে গেছে। তদ্রূপ যে মূলনীতি মনে রাখা দ্বারা কোনো ক্ষেত্রে কী আচরণ বাঞ্ছনীয় তা সহজভাবে উপলদ্ধি করা যায় তাও এই বাক্যে এসে গেছে।

এই যে ওলামায়ে কেরাম একেকটি বিষয়ের আদব ও আচরণবিধি উল্লেখ করেন-এভাবে করলে সুন্দর হবে, ওভাবে করলে অসুন্দর হবে, এভাবে করলে মানুষ শান্তি পাবে, ওভাবে করলে কষ্ট পাবে, এই যে একেকটি বিষয়ে বিসস্তারিত আলোচনা-এ সবই এ হাদিসের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক রূপ। আলিমগণ আদব বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রাহ.)-এর কিতাবে আছে ‘আল আদাবুল মুফরাদ’।

হাকিমুল উম্মত হযরত থানবী (রাহ.)-এর কিতাব রয়েছে ‘আদাবুল মুআশারা’। এ সকল কিতাবে তারা মানবজীবনের পরস্পর আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সব কিছুর গোড়ার কথা, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী, মানুষের সাথে তুমি ওই আচরণ করবে যে আচরণ তুমি মানুষের কাছ থেকে পেতে পছন্দ কর।

আদাবুল মুআশারা রক্ষা করা নফল আমল ও নফল ইবাদত যেমন, নফল নামাজ, নফল রোজা ইত্যাদির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর দলিল হলো, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে দু’জন মহিলার কথা আলোচনা করা হলো। একজন রাতভর ইবাদত করে আর দিনেরবেলা রোজা রাখে। কিন্তু প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। আরেকজন এত বেশি নফল নামাজ পড়ে না, এত বেশি নফল রোজা রাখে না। শুধু দ্বীনের ফরজ-ওয়াজিবগুলো আদায় করে। দিনভর রোজা রাখার এবং রাতভর নামাজ পড়ার সুযোগ তার হয় না। কিন্তু সে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রাসূলে কারীম (সা.) বললেন, সে জান্নাতে যাবে।

তাহলে বোঝা গেল, নফল ইবাদতের চেয়ে অন্য মানুষকে কষ্ট না দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া, জাহান্নাম থেকে বাঁচা বেশি সহজ হবে। আদাবুল মুআশারা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেক কারণ হলো, শরীয়তের এই মূলনীতি যে, দ্বীনের কোনো বিষয় যখন সাধারণভাবে অবহেলিত হয়ে পড়ে তখন চর্চা ও আলোচনার মাধ্যমে এর প্রচার-প্রসার বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। যা সকলে জানে ও মানে, তার চেয়ে যা মানুষ ছেড়ে দিয়েছে, যাকে মানুষ এখন দ্বীনের অংশ মনে করে না তা প্রতিষ্ঠা করা, আমল করা, ওই বিষয়টির শিক্ষা গ্রহণ করা এবং শিক্ষা দান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তত আছি: কর্নেল অলি

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তত আছি: কর্নেল অলি

তীব্র গরমে বয়স্ক ও শিশুদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ

তীব্র গরমে বয়স্ক ও শিশুদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ

'শ্রমিক হত্যায় যে ধর্মের লোকই জড়িত থাকুক না কেন ছাড় দেওয়া হবেনা'-- ফরিদপুরে ধর্ম মন্ত্রী

'শ্রমিক হত্যায় যে ধর্মের লোকই জড়িত থাকুক না কেন ছাড় দেওয়া হবেনা'-- ফরিদপুরে ধর্ম মন্ত্রী

তীব্র তাপপ্রবাহ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহে ক্লাস বন্ধ

তীব্র তাপপ্রবাহ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহে ক্লাস বন্ধ

কমলো সোনার দাম

কমলো সোনার দাম

কৃষককে স্মার্ট কৃষিসেবার আওতায় আনতে চাই- প্রতিমন্ত্রী পলক

কৃষককে স্মার্ট কৃষিসেবার আওতায় আনতে চাই- প্রতিমন্ত্রী পলক

নরেন্দ্র মোদির উত্তরসূরি যোগী আদিত্যনাথ?

নরেন্দ্র মোদির উত্তরসূরি যোগী আদিত্যনাথ?

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে

রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে টিনের তৈরী ডুঙ্গা নৌকা ডুবে আবারও এক যুবক নিখোঁজ

রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে টিনের তৈরী ডুঙ্গা নৌকা ডুবে আবারও এক যুবক নিখোঁজ

লালমনিরহাটে ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু

লালমনিরহাটে ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু

দুবাই বন্যার কারণ: কৃত্রিম বৃষ্টিপাত, নাকি আবহাওয়া পরিবর্তন?

দুবাই বন্যার কারণ: কৃত্রিম বৃষ্টিপাত, নাকি আবহাওয়া পরিবর্তন?

পেশাদার বক্সিংয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ বক্সার হামজা উদ্দীন

পেশাদার বক্সিংয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ বক্সার হামজা উদ্দীন

মাগুরায় আগুনে পুড়ে দুই পরিবারের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি!

মাগুরায় আগুনে পুড়ে দুই পরিবারের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি!

মধ্যপ্রাচ্যে ‘প্রতিশোধের চক্র’ বন্ধ করতে হবে: জাতিসংঘ মহাসচিব

মধ্যপ্রাচ্যে ‘প্রতিশোধের চক্র’ বন্ধ করতে হবে: জাতিসংঘ মহাসচিব

অপরাজিতারা নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : স্পিকার

অপরাজিতারা নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : স্পিকার

দিনাজপুরে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম ও জাল টাকা সহ ২ জন আটক

দিনাজপুরে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম ও জাল টাকা সহ ২ জন আটক

থাই-মিয়ানমার সীমান্ত শহরের কাছে আবারও সংঘর্ষ শুরু: থাই সেনাবাহিনী

থাই-মিয়ানমার সীমান্ত শহরের কাছে আবারও সংঘর্ষ শুরু: থাই সেনাবাহিনী

উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন বন্ধ থাকবে : ওবায়দুল কাদের

উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন বন্ধ থাকবে : ওবায়দুল কাদের

সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত

সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত

থিম্পুতে বাংলাদেশ ও ভুটানের পররাষ্ট্র বিষয়ক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

থিম্পুতে বাংলাদেশ ও ভুটানের পররাষ্ট্র বিষয়ক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত