ঢাকা   রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আসছে রমাযানুল মুবারক আমাদের জীবন ও কর্ম আলোকিত হোক মাহে রমযানের শিক্ষায়

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৫১ এএম

বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আসছে রমযান। রমাযানুল মুবারকের নাম আমাদের মন-মানসে এক নতুন অনুভূতি জাগ্রত করে। স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতার অনুভূতি। এই মাসটি একটি মহিমান্বিত মাস, যার ফজিলত ও মর্যাদা কুরআন মাজীদে উল্লেখিত হয়েছে। এই মাস মুমিনের নব চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার মাস। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অন্বেষণে অগ্রণী হওয়ার মাস। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.) এই মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হতেন। তাঁর সাহাবীগণকেও ইবাদত-বন্দেগীতে অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাই মুমিনের কাছে এই মাস আলাদা মহিমা ও তাৎপর্য নিয়ে আগমন করে। মুমিনের কর্তব্য, ইবাদত-বন্দেগীতে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি চাল-চলন, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি সর্বক্ষেত্রে একটি আদর্শিক ছাপ রাখার চেষ্টা করা।

প্রতি রমযানেই নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। যদিও অনেক বিত্তশালী মুসলিম এ মাসে প্রচুর দান করে থাকেন, অনেকে জাকাত দিয়ে থাকেন, দুস্থ-অসহায়ের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন, রোযাদারদের ইফতার করিয়ে থাকেন, কিন্তু এসব নেক আমল ও জনকল্যাণমূলক কাজ চাপা পড়ে যায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কাছে। এ কারণে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কর্তব্য, কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করে হলেও রমাযানুল মুবারকে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা। এতে যেমন মুসলমানদের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হবে তেমনি মানবসেবারও ছওয়াব পাওয়া যাবে।

রমাযানুল মুবারককে উপলক্ষ করে আমাদের সমাজে যদি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে সেটি হবে অতি সুখের ব্যাপার। ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়াদিÑ সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ইভটিজিং, মাদকের ব্যবহার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া উচিত। রমাযানুল মুবারকের ভাবমর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রচারমাধ্যমগুলো যদি এসব অনাচার নির্মূলে সংকল্পবদ্ধ হয় তাহলে সুফল আসতে পারে।

এই পবিত্র মাসের বিশেষ ফরয ইবাদত হচ্ছে সওম। ঈমানের পর যে চারটি বিষয়কে ইসলামের রোকন বলা হয়েছে সওম তার অন্যতম। কাজেই যার ওপর সওম ফরয এমন প্রত্যেকের কর্তব্য, যতেœর সাথে এই ফরয ইবাদতটি আদায় করা। ইসলামে ফরয ইবাদত-আমলের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি, এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নৈকট্য।

কাজেই নফল ইবাদত-আমলে কিছু ত্রুটি হলেও ফরয-ওয়াজিবে ত্রুটি হওয়া উচিত নয়; বরং গুরুত্বের সাথে তা পালন করা উচিত। একই সাথে কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্ব রোযাদার কর্মীর কাজের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করা। এটি যেমন এক রোযাদার বান্দার ওপর অনুগ্রহ তেমনি একটি ফরয ইবাদত আদায়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি তা ফরয আদায়ে উৎসাহিত করারও একটি উপায়।

যারা রোযা রাখেন তাদের জন্যও রয়েছে উন্নতির সুযোগ। কারণ পানাহার ও স্ত্রী-মিলন থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি রোযাদারের কর্তব্য, সব রকমের অন্যায়-অনাচার থেকেও বেঁচে থাকা। কটূক্তি-ঝগড়া-বিবাদ ও অশোভন উচ্চারণ থেকেও বেঁচে থাকা। হাদীস শরীফে আছে, ‘যখন তোমাদের রোযার দিন আসে তখন তোমরা অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকবে। কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে বলবে, ‘আমি রোযাদার।’ কাজেই রোযাদারের রোযার পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকমের অন্যায়-অশোভন কাজ থেকে বিরত থাকাও কর্তব্য। বলা বাহুল্য, মুমিন যদি এক মাস এভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টা করে, ইনশাআল্লাহ তার স্বভাব-চরিত্রে, কথা ও কাজে পরিবর্তন সাধিত হবে। এভাবেই রোযা মানবজীবনে শুদ্ধি ও পরিশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে।

মাহে রমযানের আরেক বিশেষ ইবাদত তারাবি। গোটা মুসলিম জাহানে তারাবির নামায অত্যন্ত আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে আদায় হয়ে থাকে। তারাবি অতি বরকতময় সুন্নত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক যামানা থেকেই তারাবি মাহে রমযানের অতি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। ঐকান্তিকতা ও একনিষ্ঠতার সাথে এই ইবাদতে মশগুল থাকা কাম্য। কোনো কোনো জায়গায় তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক হতে শোনা যায়। কোনো কোনো মহল থেকে নানা প্রকারের লিফলেট ইত্যাদিও বিতরণ হয়। এই সকল কর্মকা- খুবই অশোভন ও অনুচিত।

এ সংক্রান্ত বিচ্ছিন্ন মতামতের অসারতা প্রমাণ করে গবেষক আলেমগণ দলিলভিত্তিক পর্যাপ্ত আলোচনা করেছেন। কাজেই সাধারণ মুসলমানের কর্তব্য, কল্যাণ-অন্বেষার এই মাসে অর্থহীন বিবাদ-বিতর্কে না জড়ানো। আলিমগণের নির্দেশনা অনুসারে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা। কেউ বিতর্ক করতে এলে তাকে বলে দেয়া যে, বিষয়টি আলিমদের সাথে আলোচনা করুন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-১
শহীদদের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন করা না হলে আল্লাহর গজব আসতে পারে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি আব্দুল মালেক
কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা-৩
কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা-২
আরও

আরও পড়ুন

গণতন্ত্র ফেরাতে রূপরেখা ঘোষণা করবেন ড. ইউনূস, আশা যুক্তরাজ্যের

গণতন্ত্র ফেরাতে রূপরেখা ঘোষণা করবেন ড. ইউনূস, আশা যুক্তরাজ্যের

সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : রাজধানীতে তীব্র যানজট

সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : রাজধানীতে তীব্র যানজট

অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে বাড়িঘর ও গবাদিপশু ধ্বংস হচ্ছে

অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে বাড়িঘর ও গবাদিপশু ধ্বংস হচ্ছে

এলন মাস্কের রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ নিয়ে তদন্তের দাবি

এলন মাস্কের রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ নিয়ে তদন্তের দাবি

কুতুবদিয়ায় দখলবাজ আ.লীগ নেতা মাহাবুব মেম্বারের বিরুদ্ধে দু'টি মামলা রুজু

কুতুবদিয়ায় দখলবাজ আ.লীগ নেতা মাহাবুব মেম্বারের বিরুদ্ধে দু'টি মামলা রুজু

"প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বে আনিকা আলম, প্রার্থনা করেছেন ভোট"

"প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বে আনিকা আলম, প্রার্থনা করেছেন ভোট"

চকরিয়ায় গায়েবী মামলার আসামী হলেন দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি

চকরিয়ায় গায়েবী মামলার আসামী হলেন দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি

জলবায়ু পরিবর্তনে হিমবাহ গলে যাওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে

জলবায়ু পরিবর্তনে হিমবাহ গলে যাওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে

মওলানা ভাসানী আমাদের প্রেরণার উৎস : তারেক রহমান

মওলানা ভাসানী আমাদের প্রেরণার উৎস : তারেক রহমান

ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মী পিয়াল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ৫ আসামি গ্রেপ্তার

ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মী পিয়াল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ৫ আসামি গ্রেপ্তার

মাওলানা ভাসানীর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না: কাদের সিদ্দিকী

মাওলানা ভাসানীর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না: কাদের সিদ্দিকী

বন্যায় ভেসে আসা লক্ষাধিক গাড়ি নিয়ে চরম বিপাকে স্পেন

বন্যায় ভেসে আসা লক্ষাধিক গাড়ি নিয়ে চরম বিপাকে স্পেন

এক সপ্তাহে বৈরুতে ৫০ বার হামলা ইসরাইলের, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা

এক সপ্তাহে বৈরুতে ৫০ বার হামলা ইসরাইলের, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা, নিহত ৭

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা, নিহত ৭

ময়মনসিংহে ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ময়মনসিংহে ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

শেরপুরে জেল পলাতক আসামি লিটন গ্রেপ্তার

শেরপুরে জেল পলাতক আসামি লিটন গ্রেপ্তার

গলফ ক্লাবে সম্মিলিত পরিষদের মেজবানি অনুষ্ঠিত

গলফ ক্লাবে সম্মিলিত পরিষদের মেজবানি অনুষ্ঠিত

ট্রাম্প প্রশাসনে জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে ক্রিস রাইট নিযুক্ত

ট্রাম্প প্রশাসনে জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে ক্রিস রাইট নিযুক্ত

"মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে আবেগঘন পোস্ট দিলেন ডিডি'র জমজ কন্যারা"

"মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে আবেগঘন পোস্ট দিলেন ডিডি'র জমজ কন্যারা"

বাবাকে বানালেন মুক্তিযোদ্ধা, ভাতিজা হলো ছেলে! ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোটা কেরামতি

বাবাকে বানালেন মুক্তিযোদ্ধা, ভাতিজা হলো ছেলে! ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোটা কেরামতি