Header Ad

ইমাম গাজ্জালীর দৃষ্টিতে কোরআন তেলাওয়াতের শর্ত-২

Daily Inqilab খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী

৩০ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১৩ এএম

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহ:) কোরআন তেলাওয়াতের জন্য যে দশটি শর্ত আরোপ করেছেন। সেগুলো কোরআন শরীফ আলোকেই বর্ণনা করেছেন। কোরআন শরীফ অনেকেই তেলাওয়াত করে থাকেন, কিন্তু তেলাওয়াতের রীতিনীতি ও নিয়মাবলী হয়ত সকলের জানা নেই। সাধারণভাবে তারা আলেমগণের নিকট শুনে থাকেন। যেমন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের সময় পবিত্রতা অর্জন ও অজু অবস্থায় থাকা, যেখানে বসে তেলাওয়াত করা হয় সেস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, কেবলামুখী হয়ে বসা, অত্যন্ত বিনয় সহকারে তেলাওয়াত করা, অজুবিহীন অবস্থায় কোরআন স্পর্শ না করা প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিত এবং এ সকল আদেশ বা শর্ত মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। বস্তুত কোরআন মজীদ তেলাওয়াতের সময় এগুলোর অনুসরণ যথেষ্ট হলেও তেলাওয়াতকারীর জন্য আরও কতিপয় রীতিনীতি অনুসরণ একান্ত আবশ্যক।

হযরত রাসূলে করীমের (সা.) সাহাবায়ে কেরাম যখন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন তাদের বিনয়-ন¤্রতা ও ভয়ভীতির অবস্থা দাঁড়াত এই যে, কাঁদতে কাঁদতে তাদের দাঁড়ি মোবারক ভিজে যেত এবং প্রত্যেকটি আয়াতের মর্ম উপলব্ধি করে তা বাস্তবে পরিণত করারও চেষ্টা করতেন। অর্থাৎ যেখানে ভয়-ভীতির উল্লেখ রয়েছে, সেখানে অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত ভাব প্রকাশ করতেন এবং চেহারা হলুদ বর্ণ হয়ে যেত, গোটা দেহ প্রকম্পিত হয়ে উঠত।

আবার যে আয়াতে আল্লাহর অসীম দানের কথা উল্লেখ রয়েছে সেখানে আনন্দবোধ করতেন এবং সে ভাব চেহারায় পরিস্ফুটিত হয়ে উঠত এবং তারা আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করতেন। কোরআন তেলাওয়াতের সঠিক শর্ত ও নিয়মাবলী পালন করতেন বলেই তাদের এ অবস্থা হতো। বর্তমানে অনেকেই কোরআন তেলাওয়াতের শর্তাবলী জানা ও মানা তো দূরের কথা, কোরআনের আয়াতগুলোর শানেনুযূল ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কেও অবগত নন। ইমাম গাজ্জালী তার বিখ্যাত গ্রন্থে কোরআন তেলাওয়াতের যে দশটি শর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো:

প্রথম শর্ত : কোরআনের মাহাত্ম অনুধাবন। এটা চিন্তা করা যে, আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ-মেহেরবাণীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা যে, তিনি আরশ হতে অবতরণ করে তাঁর সৃষ্টিকে আমল করার ও অনুধাবণ করার স্তর পর্যন্ত নিকটবর্তী হয়েছেন।

দ্বিতীয় শর্ত : বর্ণনাকারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত তেলাওয়াত আরম্ভ করার সময় তেলাওয়াতকারীর অন্তরে বর্ণনাকারীর মহিমার কথা স্মরণ করা এবং তার জানা উচিত, যা পাঠ করছে , তা কোনো মানুষের কালাম নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত এটিকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না।

তৃতীয় শর্ত : বর্ণিত হয়েছে, হে ইয়াহিয়া! কেতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর। এর অর্থ হলো ইজতেহাদ বা চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাও। অর্থাৎ কোরআন তেলাওয়াতের সময় সকল চিন্তা-ভাবনা ও মনোযোগ সহকারে তা পাঠ করা। কথিত আছে যে, পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক বুজর্গের নিয়ম ছিল এই যে, কোনো আয়াত পাঠ করার সময় যদি তার অন্তর সেদিকে ধাবিত না হত তবে পুনরায় তিনি সেই আয়াতটি পাঠ করতেন।

চতুর্থ শর্ত : চিন্তা-অনুধাবন করা। ক্বেরাতের উদ্দেশ্যেই হচ্ছে চিন্তা-অনুধাবণ করা এবং ‘তারতীলের’ (ধীরে ধীরে) পাঠ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার ভাব সম্পর্কে অনুধাবণ করা।

হযরত আলী (রা.) বলেন, যে ক্বেরাতে চিন্তা অনুধাবণ করা হয় না , তাতে কোনো কল্যাণ নেই। তাহলে পুনরাবৃত্তি ব্যতীত অনুধাবণ করা না যায় , তাহলে পুনরাবৃত্তি করা উচিত। হ্যাঁ, ইমামের পেছনে ক্বেরাত শ্রবণ করলে সে অবস্থায় চিন্তা অনুধাবণের প্রয়োজন নেই।

একটি রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে, একদা হুজুর (সা.) ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করলেন এবং বিশবার তার পুনরাবৃত্তি করলেন। এই পুনরাবৃত্তির উদ্দেশ্য ছিল তার অনুধাবণ করা ও তার মাহাত্ম সম্পর্কে চিন্তা করা। হযরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন আমাদের সাথে নামাজ পড়ছিলেন এবং একটি আয়াত তিনি বারবার পাঠ করলেন। একজন বুজর্গ বলেছেন, যে আয়াতের অর্থ আমি বুঝি না এবং যা পাঠ করার সময় সেদিকে আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয় না, আমি সেই আয়াতকে তেলাওয়াতের অন্তর্ভূক্ত করি না।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুয়াকাটায় দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম

কুয়াকাটায় দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম

আরও বাড়বে গরম

আরও বাড়বে গরম

মোগল আমলেও এত কষ্ট ছিল না : এমপি শামীম হায়দার

মোগল আমলেও এত কষ্ট ছিল না : এমপি শামীম হায়দার

হতভাগা ১২ জনই নির্মাণ শ্রমিক

হতভাগা ১২ জনই নির্মাণ শ্রমিক

কানাডার দাবানলের ধোঁয়ায় ধূসর স্ট্যাচু অব লিবার্টি

কানাডার দাবানলের ধোঁয়ায় ধূসর স্ট্যাচু অব লিবার্টি

রাজধানীর বনানী থেকে জামায়াত-শিবিরের ১০ নেতা-কর্মী আটক

রাজধানীর বনানী থেকে জামায়াত-শিবিরের ১০ নেতা-কর্মী আটক

বিএনপির সাথে আলোচনার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি : ওবায়দুল কাদের

বিএনপির সাথে আলোচনার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি : ওবায়দুল কাদের

সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের মামলা খারিজ, বাদীকে সতর্ক করলেন আদালত

সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের মামলা খারিজ, বাদীকে সতর্ক করলেন আদালত

Header Ad
সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

তীব্র দাবদাহে এবার ইবতেদায়ী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা

তীব্র দাবদাহে এবার ইবতেদায়ী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা

হাইতিতে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ৩

হাইতিতে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ৩

যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলের এক অনুষ্ঠানে গুলি, নিহত ২

যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলের এক অনুষ্ঠানে গুলি, নিহত ২

ফুঁসছে শক্তিশালী নিম্নচাপ, তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’

ফুঁসছে শক্তিশালী নিম্নচাপ, তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’

ইরানের নৌ জোটে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দেশ

ইরানের নৌ জোটে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দেশ

'অনশনকারী' জাবি শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের উপর হামলা

'অনশনকারী' জাবি শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের উপর হামলা

তিনদিনে ইউক্রেনের ৩ হাজার ৭০০ সেনা নিহত : রাশিয়া

তিনদিনে ইউক্রেনের ৩ হাজার ৭০০ সেনা নিহত : রাশিয়া

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা-১৫

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা-১৫

তুরস্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রেসিডেন্ট

তুরস্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রেসিডেন্ট

৬ দফা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

৬ দফা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস