ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কুরআন তিলাওয়াত ও তারাবির তিলাওয়াত : আমাদের অসতর্কতা-২

Daily Inqilab মাসরূর বিন মনযূর

০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:১০ এএম

নামাজে আমরা কুরআন তিলাওয়াত করে থাকি নামাজের ফরজ বিধান হিসেবে। কুরআন তিলাওয়াতের যে আদবসমূহ গত আলোচনায় আলোচিত হলো সেগুলো নামাজে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। নামাজে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে ধীর-স্থিরতা ও ভাবগাম্ভীর্য আরো বেশি মাত্রায় থাকতে হবে। তখন এগুলো শুধু তিলাওয়াতের বিষয় হিসেবেই থাকে না বরং এই ধীর-স্থিরতা ও আত্মনিমগ্নতা নামাজেরও বিষয়।

নামাজের খুশু-খুযুর জন্য তিলাওয়াত তারতীলের সাথে হওয়া খুব জরুরি। তাছাড়া এত দ্রুত তিলাওয়াতের কারণে মদ্দ-গুন্নাসহ তাজবিদের অনেক কায়েদা লঙ্ঘিত হয় এবং হুরূফের সিফাতের প্রতিও যথাযথ লক্ষ্য রাখা যায় না, ফলে দ্রুত পড়তে গিয়ে ‘সোয়াদ’ এর জায়গায় ‘সিন’ হয়ে যাওয়া, ‘শিন’ এর জায়গায় ‘সিন’ হয়ে যাওয়া, ‘ত্বা’ এর জায়গায় ‘তা’ হয়ে যাওয়া কিংবা যেখানে টান নেই সেখানে টান হয়ে যাওয়া বা কোথাও টান আছে সেখানে টান না হওয়া (দ্রুত পড়তে গেলে এই টানের ভুল সব চেয়ে বেশি হয়) খুব সহজেই ঘটে যেতে পারে।

মোটকথা নামাজে দ্রুত তিলাওয়াত করতে গিয়ে নামাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ভুল যদি নাও হয় বরং শুধু যদি এটুকু হয় যে, উচ্চারণে মাকরূহ পর্যায়ের বিঘœ ঘটছে তাহলে সেই নামাজও কি ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়ল না? আর যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কেউ সকল উচ্চারণ ঠিক রেখে খুব দ্রুত পড়ে যেতে পারেন তার জন্যও তো নামাজে অন্তত এমনটি না করা উচিত। কারণ তাতে কুরআন তিলাওয়াতের ন্যূনতম আদবটুকুও যেমন রক্ষিত হয় না তেমনি নামাজে খুশু-খুযু রক্ষা করাও সহজ হয় না।

ফরজ নামাজ ও অন্যান্য নামাজে আমরা কিছুটা ধীর-স্থির তিলাওয়াত করে থাকি। কিন্তু রমজানে তারাবিতে এত দ্রুত পড়ে থাকি, এতই দ্রুত যে তারতীলের ন্যূনতম মাত্রাও সেখানে উপস্থিত থাকে না। মদ্দ (টান), গুন্নাহ ও শব্দের উচ্চারণ বিঘিœত হয়ে তিলাওয়াত মাকরূহ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে; বরং অর্থের পরিবর্তন হয়ে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়, আমাদের অজান্তেই। আর খুশু-খুযু, ধ্যানমগ্নতা তো নষ্ট হচ্ছেই। আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সুমহান কালাম পড়ছি বা শুনছি এমন ভাব-তন্ময়তা তো দূরের কথা কখন বিশ রাকাত তারাবি শেষ হবে এই চিন্তাই যেন সকলকে তাড়িত করতে থাকে।

নামাজ বা তিলাওয়াতের যে আদবটুকু ফরজ নামাজে রক্ষা হয় তারাবিতে সেটুকু পাওয়াও দুষ্কর। দ্রুত তিলাওয়াত, দ্রুত রুকু, সেজদা, দ্রুত তাসবিহ। অনেকের মাঝে ধারণা জন্মে গেছে, তারাবি মানেই তাড়াতাড়ি পড়া। যার কারণে দেখা যায় যে, যারা ‘সূরা’-তারাবি পড়েন তারাও ভীষণ দ্রুত পড়েন।

অনেকেই মুসল্লিদের কষ্টের কথা বলে থাকেন। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, ধীর-স্থিরভাবে বিশ রাকাত নামাজ পড়ার কারণে যতটুকু কষ্ট-ক্লান্তি আমাদের হয় তার চেয়ে বেশি হয় কিয়াম, রুকু, সেজদা, তাসবিহ দ্রুত করার কারণে। দুই রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়েই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যাওয়া। চার রাকাত পড়ে খুব সামান্য একটু সময় বসে আবার শুরু করা। অথচ সালাফে সালেহীনের আমল কেমন ছিল তা আমরা পূর্বেই দেখে এসেছি।

মক্কা-মদিনার তারাবির খোঁজ নিয়ে দেখুন, সেখানে কত ধীর-স্থির তিলাওয়াত, দীর্ঘ বিশ্রাম, লম্বা সময় নিয়ে তারাবি। সেখানে কত দেশের, কত ধরনের, কত বয়সের মানুষ রয়েছে! অথচ আমাদের অবস্থা হলো, বিরতিহীন উঠাবসার মাধ্যমে বিশ রাকাত শেষ করার এক প্রতিযোগিতা। অথচ হাদিস শরীফে কাকের ঠোকরের মত রুকু, সেজদা করা থেকে কত শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

এর চেয়ে তিলাওয়াত ধীরে করে কিয়াম একটু লম্বা করলে, রুকু, সেজদায় সময় নিলে এবং উঠাবসায় ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করলে কষ্ট অনেকই কমে যাবে। বয়স্কদের কথা যদি বলেন তাদের জন্য তো ধীর-স্থিরতাই সহজ। তাছাড়া বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য কেরাত ছোট করার কথা হাদিসে রয়েছে। তাড়াতাড়ি করার কথা তো নেই! এদের যদি খতম তারাবি একেবারেই কষ্ট হয়ে যায় তাহলে সূরা তারাবি পড়তে পারেন।

তারাবির নামাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ আমল তেমনই ফজিলতের। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে, সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম করে (তারাবি, তাহাজ্জুদ সবই এর অন্তর্ভুক্ত) আল্লাহ তায়ালা তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ বুখারি : ২০০৯)।

এই যে এত এত সওয়াবের কথা হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হল এগুলো পাওয়ার জন্য কি আমল সহিহ ও নির্ভুল হওয়া শর্ত নয়! কিংবা আল্লাহ আমাকে এত সওয়াব দান করবেন, এর জন্য একটু ধৈর্য, একটু ধীর-স্থিরতা, অন্তত সর্বনিম্ন আদবটুকু রক্ষা করাও কি আমার কর্তব্য নয়? সুতরাং আমাদের অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে, নামাজের কিয়াম, রুকু, সেজদা ও তিলাওয়াতে ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করা ও নির্ভুল পড়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান