ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ তাঁর সৃষ্টির মাঝে-২

Daily Inqilab মাওলানা আবু তাহের রাহমানী

১৩ মে ২০২৩, ১১:১৪ পিএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

পানির চরিত্র হলো, উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। পানি নিচ থেকে উপরের দিকে ওঠাতে হলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম শক্তি প্রয়োগ করে উত্তোলন করতে হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়ে তা আকাশে উত্তোলিত হয়, সেই জলীয় বাষ্প মেঘমালায় পরিণত হয়ে বৃষ্টিরূপে বর্ষিত হয়। পৃথিবীতে এমন কোনো মহাশক্তি রয়েছে, যা পানিকে এভাবে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে আকাশে উত্তোলন করবে, আবার আকাশ থেকে তা বৃষ্টিরূপে জমিনে বর্ষণ করবে?

নিশ্চয় এমন কোনো অদৃশ্য মহাসত্তা রয়েছেন, যাঁর মহাজাগতিক নিখুঁত কর্মপরিকল্পনায় পানি নিজ চরিত্রের বিপরীতে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় এবং আকাশে মেঘমালায় রূপান্তরিত হয়ে বৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সর্বশক্তিমান আল্লাহই এভাবে বিস্ময়কর পদ্ধতিতে আকাশ থেকে জমিনে বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

আকাশ থেকে বর্ষিত পানির মাধ্যমে জমিন সতেজ-উর্বর ও চাষাবাদযোগ্য হয়। তা থেকে বৈচিত্র্যময় ফলমূল, শাকসবজি ও খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়। কুরআনুল কারীমের ভাষায় : আমি আল্লাহ তা (আকাশ থেকে বর্ষিত পানি) দ্বারা রং-বেরঙের ফলমূল উৎপন্ন করি। (সূরা ফাতির : ২৭)।

জমিন থেকে এ ফলমূল ও শস্যদানা উৎপন্নকারী হলেন স্বয়ং মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ। কৃষক যদিও জমিন চাষাবাদ করে তাতে বীজ-শস্যদানা বপন করে; কিন্তু উক্ত বীজ ও শস্যদানা অঙ্কুরিত করে তা মাটির বুক চিরে নির্গতকারী কৃষক নয়। কৃষক তো শুধু চাষাবাদ ও বীজ বপনকারী। কিন্তু বপনকৃত বীজ বিদীর্ণ করা, তাতে অঙ্কুর সৃষ্টি করে মাটি ভেদ করে তা নিয়ে আসার এটা নিঃসন্দেহে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সর্বময় শক্তি ও ক্ষমতার আধার মহা পরাক্রমশালী আল্লাহরই কাজ।

তদুপরি এ অঙ্কুর এমনই নরম-কোমল, যা মাটি থেকে উপড়ে ফেলতে দুর্বল হাতের আঙ্গুলই যথেষ্ট। অথচ এমন শক্তিশালী, যা শক্ত মাটির বুক চিরে অনায়াসে বেরিয়ে আসে। নরম-কোমল অঙ্কুরে শক্ত মাটি ভেদ করার শক্তি দানকারী একজন মহাসত্তা নিশ্চয় রয়েছেন।

ভূপৃষ্ঠস্থিত পানিকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে বৃষ্টিবাহী মেঘমালায় রূপান্তরিত করা, আকাশ থেকে তা পৃথিবীতে বর্ষণ করা, বপনকৃত শক্ত কঠিন বীজ মাটির নিচে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেটে যাওয়া এবং তা থেকে নরম-কোমল অঙ্কুর মাটির বুক চিরে বেরিয়ে আসার শক্তি দানকারী নিঃসন্দেহে মহা ক্ষমতাধর আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়।

আকাশ থেকে বর্ষিত পানির মাধ্যমে আল্লাহ বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করেন। আপেল, আনার, আঙ্গুর, আম, কাঁঠাল আরো কত বিচিত্র রং, বৈচিত্র্যময় আকার আকৃতি ও নানান স্বাদের ফলমূল রয়েছে। প্রত্যেক প্রকার ফলের মধ্যে আবার বিচিত্র রং, স্বাদ, আকার ও আকৃতিগত ভিন্ন ভিন্ন জাত ও শ্রেণি রয়েছে। সুন্দরতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কতই না মহিমাময়! অথচ সর্বপ্রকার ফলেরই উৎসস্থল মাটি, মাটির ভেতর থেকেই সব উৎপন্ন হয়।

কিন্তু প্রত্যেক প্রকার ফলের রং ভিন্ন ভিন্ন। রং, স্বাদ ও আকার-আকৃতি সৃষ্টি যদি মাটির নিজস্ব চরিত্র হতো, তাহলে এক ও অভিন্ন স্বাদ, রং ও আকার-আকৃতিবিশিষ্ট বস্তুই শুধু মাটি উৎপন্ন করত। সুতরাং মাটি থেকে উৎপন্ন যাবতীয় ফল-মূল, শস্যদানা ও বৃক্ষ তরুলতায় রং, স্বাদ ও আকার-আকৃতিগত বৈচিত্র্য সৃষ্টিকারী মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউ নয়।

রং ও বর্ণগত এ বৈচিত্র্য শুধু ফলমূলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ভূপৃষ্ঠে বিদ্যমান পাহাড়-পর্বতমালাও এর ব্যতিক্রম নয় কোনোটি শুভ্র, কোনোটি লাল এবং কোনোটি নিকষ কালো। বিচিত্র রং ধারণ যদি পাহাড়ের নিজস্ব চরিত্র হতো, তাহলে পৃথিবীর সব পাহাড়-পর্বত অভিন্ন রংবিশিষ্ট হতো। পাহাড়-পর্বতমালার এ রং বৈচিত্র্য কে সৃষ্টি করলেন? নিঃসন্দেহে স্বাধীন কর্মবিধায়ক আল্লাহ তায়ালাই আপন ইচ্ছানুযায়ী এ রং বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন।

এমনিভাবে প্রাণিজগতের দিকে তাকালে দেখা যায়, অসংখ্য জীবজন্তু বিচিত্র রং ও আকার আকৃতিতে পৃথিবীতে বিচরণ করছে। উট, ঘোড়া, হাতি, বাঘ, ভাল্লুক, গরু, ছাগল, গাধা, ভেড়া, হরিণ ইত্যাদি একেক জাতের চতুষ্পদ জন্তু একেক রং-বর্ণ ও আকার-আকৃতিবিশিষ্ট।

আবার প্রত্যেক জাতের প্রাণীর মধ্যে রয়েছে সাদা-কালো-লাল তথা বহুবিধ রং ও বর্ণবৈচিত্র্য। রং-বর্ণ ও আকার-আকৃতি ধারণ যদি প্রাণিজগৎ ও জড়জগতের ফিতরাত ও স্বভাবের দাবি অনুযায়ী হতো, তাহলে সব অভিন্ন রং-বর্ণ ও আকার-আকৃতিবিশিষ্ট হতো। কিন্তু স্বভাব-বিরুদ্ধভাবে এ বিস্ময়কর রং ও বর্ণবৈচিত্র্য কীভাবে সৃষ্টি হলো? সন্দেহাতীতভাবে সেই মহাসত্তার সৃষ্টি কুশলতায়, যাঁর করায়ত্বে সৃষ্ট জগতের একক ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান