আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ তাঁর সৃষ্টির মাঝে-৩
১৪ মে ২০২৩, ১১:১৬ পিএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
স্বয়ং মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বের প্রমাণ ভাস্বর হয়ে আছে। মানুষ যদি নিজে আপন অস্তিত্ব দানকারী হতো, তাহলে ফিতরাত ও স্বভাবের দাবি অনুযায়ী জগতের সব মানুষ একই ভাষা-বর্ণ, আকার-আকৃতি ও রুচি-পছন্দবিশিষ্ট হতো। অভিন্ন পিতা-মাতা থেকে একাধিক সন্তান জন্মগ্রহণ করে; অথচ তাদের আকার-আকৃতি, স্বভাব-প্রকৃতি অভিন্ন নয়। তাদের ভাষা-বর্ণ, দৈহিক গঠন-চরিত্র ও চলন-বলন ভিন্ন ভিন্ন। একই মা থেকে জন্মলাভকারী ভাই-বোনদের একজনের সাথে অপরজনের আচরণ-উচ্চারণ, রং ও কণ্ঠস্বরের কোনো সাদৃশ্য নেই। এ সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টিকারী অদৃশ্য একজন মহাসত্তা নিঃসন্দেহে বিদ্যমান রয়েছেন। তিনিই হলেন সর্বশক্তিমান মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে : আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্য থেকে রয়েছে আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহুবিধ নিদর্শন। (সূরা রূম : ২২)।
মানুষ যদি আল্লাহকে চিনতে চায়, তাহলে সৃষ্টজগতে প্রতিটি বস্তুর মধ্যকার এ ভিন্নতা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। ভাষা-বর্ণ ও আকার-আকৃতিগত পার্থক্য, পাহাড়-পর্বত, গাছ-গাছালি, বৃক্ষ-তরুলতা, জীবজন্তু ও পশু-পাখির মধ্যকার পার্থক্য এ সবই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ করে। সৃষ্টিজগতে এক ও অভিন্ন আকৃতির কোনো বস্তু নেই; বরং জড় ও প্রাণিজগৎ নির্বিশেষে প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য ও ভিন্নতা সুস্পষ্ট।
মানুষ যদি আল্লাহর সৃষ্টি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে কিছু বানাতে চায়, তাহলে সেও অভিন্ন রং ও আকৃতির কোনো বস্তু বানাতে ইচ্ছুক নয়। সে চায় তার সৃষ্টিকর্মে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে। মানব চরিত্রে তার রুচি-পছন্দ এবং ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের এ বৈচিত্র্য কে সৃষ্টি করেছেন? মোটকথা, মহাজগতে প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে স্বভাব ও চরিত্রের ভিন্নতা, রং ও আকার-আকৃতির ভিন্নতা, মানুষের চিন্তা ও চেতনার ভিন্নতা, আকল ও বুদ্ধি-বিবেচনার ভিন্নতা, ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের ভিন্নতা, রুচি ও পছন্দের ভিন্নতা, ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা, মেধা ও প্রতিভার ভিন্নতা নিঃসন্দেহে এ সবকিছু সুসংঘটিত হচ্ছে কোনো এক মহাসত্তার অসীম কুদরতী ব্যবস্থাপনায়।
তিনিই হলেন নিরঙ্কুশ শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ। তিনিই সবকিছুর অব্যর্থ কার্যসম্পাদনকারী। মানুষ যদি আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ পেতে চায়, তাহলে সে নিজেকে নিয়ে ভাবুক, পাহাড়-পর্বতমালার দিকে তাকাক, মহাজাগতিক বিচিত্র সৃষ্টির দিকে লক্ষ্য করুক। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুকণা থেকে সর্ববৃহৎ সৃষ্টি পর্যন্ত মহাজগতের যেদিকেই তাকাবে, সেদিকেই সে আল্লাহর অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাবে।
কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে : তবে কি তারা তাকিয়ে দেখে না উটের দিকে; কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি, কীভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে; কীভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? এবং ভূপৃষ্ঠের দিকে; কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে? সুতরাং তুমি উপদেশ দান করো, নিশ্চয়ই তুমি তো একজন উপদেশদাতা। (সূরা গাশিয়াহ : ১৭-২১)।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভের অনেক পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। সব পদ্ধতির নির্যাস হলো, আল্লাহ তায়ালার কুদরত ও অসীম ক্ষমতার কিছু নিদর্শন মানব সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান, কিছু নিদর্শন মহাজগতের অসংখ্য সৃষ্টিসমূহের মধ্যে বিদ্যমান। এসব নিদর্শন চেনা ও প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভে সক্ষম। সৃষ্টিজগতের কোনো কিছু আপনা থেকে অস্তিত্ব লাভ করেনি; বরং নিশ্চিতভাবে কোনো মহাপ্রজ্ঞাবান সত্তা অস্তিত্ব দান করেছেন।
যিনি সবকিছু তাঁর সুনিপুণ হাতে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। নাস্তিকরা আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব স্বীকার করে না। তাদের দাবি, সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনা থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে। তাদের এ দাবি চরম মূর্খতা এবং স্বভাব ও প্রকৃতি বিরুদ্ধ ছাড়া কিছু নয়। বস্তুত দলিল ও যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ করা সবার কাজ নয়; বরং প্রকৃতিগতভাবে অন্তরে সৃষ্ট বিশেষ শক্তি মানুষকে এ বিশ্বাসের ওপর বাধ্য করে, সমগ্র মহাজগৎকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দানকারী এবং সুনিপুণ হাতে পরিচালনাকারী একজন মহাসত্তা রয়েছেন।
প্রকৃত বাস্তবতা হলো, আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর পরিচয় লাভ দলিল-প্রমাণের মুখাপেক্ষী নয়; বরং অন্তরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ বিশ্বাস সৃষ্টি হয়, মহাজগতের একজন নির্মাতা রয়েছেন। অবুঝ শিশু এবং ঈমানের ছোঁয়া পায়নি এমন অমুসলিমও বিষয়টি দৃঢ়ভাবে অনুভব করে; যদিও সে কোনো স্কুল-কলেজ বা মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেনি। কিন্তু অন্তর্জগতে সে ঠিকই কল্পনা করে, সৃষ্টি জগতের একজন স্রষ্টা রয়েছেন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার
‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ