ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিপদ-আপদ-মুসিবতে অনুযোগ নয় প্রত্যাবর্তন ও অনুতাপই শেষ কথা-২

Daily Inqilab ওয়ারিস রব্বানী

০৬ জুন ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, দুর্যোগ সহজ কথায় মুসিবত আসার প্রধান এই তিনটি কারণ আমরা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাই-কৃতকর্মের শাস্তি, পরীক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধি। কৃতকর্মের শাস্তি বাবদ মুসিবত আসলে তওবা ও অনুশোচনা প্রকাশ করে ক্ষমারযোগ্য হওয়ার চেষ্টাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। পরীক্ষার অর্থ হচ্ছে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হওয়ার বিবিধ খোলা দরজার মধ্য থেকে কৃতকার্য হওয়ার দরজাটি বেছে নেওয়া।

বিপদ ও মুসিবতে যখন বান্দার করণীয় কিছু থাকে না, তখন হা-হুতাশ, ধৈর্যহীনতা ও অনুযোগ প্রকাশ না করে ধৈর্য ধারণ করা এবং ইস্তেগফার ও দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইলেই পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এখানে তো পরীক্ষাটাই হয় ধৈর্য ও অধৈর্যে, অনুতাপ-অনুযোগের। এ পরীক্ষায় ধৈর্য ও অনুতাপ দিয়েই তাই কৃতকার্য হওয়া সম্ভব।

মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য যে মুসিবত আসে সেখানেও তো বান্দার জন্য সঙ্গত ও উপযোগী অনুভূতি ও আচরণ প্রকাশ পেলে বান্দার মযার্দা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। সেটাও তো ধৈর্য ও অনুতাপ অবলম্বন করেই সম্ভব। মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মুসিবত আসবে আর বান্দা তার মর্যাদার গায়ে ধৈর্যহীনতা ও অনুযোগের দাগ লাগিয়ে দেবে তারপরও বান্দার মর্যাদা বাড়বে এটা তো হতে পারে না।

আসলে যার মাঝে যতটুকু তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রাচুর্য বিদ্যমান, বিপদ-আপদ, সংকটে তিনি তত বেশি অনুতাপের পথ বেছে নিয়ে থাকেন। নিজের গুনাহর অনুভূতি তার অন্তরে জেগে উঠে। গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য ইস্তেগফার করতে তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। আল্লাহর বান্দা হিসেবে সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ মুমিন ছিলেন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.), অন্যান্য নবী রাসুলগণ এবং পরবর্তীতে রাসূলে আকরাম (সা.)- এর সাহাবীগণ।

তাঁদের জীবনে বিপদ-আপদ, সংকট আসলে তারা আল্লাহ তায়ালার দিকে রুজু হতেন। তাদের অন্তরে নিজেদের সম্পর্কে ভয় সক্রিয় হয়ে উঠত। তারা মনে করতেন, তাদের কৃত আমলের ত্রুটির কারণেই এমন ঘটেছে। অথচ গুনাহর মধ্যে নিমজ্জিত মানুষ হয়ে আজ আমরা শেকায়েত করি, অভিযোগ-অনুযোগ করি। অন্যের সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলি আমি তো এরকম করি না, আমি তো এই কাজ করি না, তাহলে আমার ওপর এই বিপদ কেন আসল? আমি যে কত রকম গুনাহ কত শত-হাজারবার করেছি ও করে চলেছি সেগুলো আমার সামনে আসে না, বিপদের সময় সেগুলো মনেও পড়ে না।

এ কথা সত্য যে, যেসব বিপদ ও মুসিবত ঘটানোর ক্ষেত্রে অন্য কোনো বান্দার ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ থাকে সেসব মুসিবতের ক্ষেত্রে একদিকে তাদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে যাওয়া যেতে পারে। এটা বাহ্যিক কার্যকারণ থেকে করা যায়। শরীয়ত এ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। কিন্তু বাহ্যিকভাবে মানুষের ইচ্ছাকৃত আচরণেই হোক যেমন মারপিট, ডাকাতি ইত্যাদি আর মানুষের ইচ্ছাবহির্ভূতই হোক যেমন, ঝড়, বন্যা, গাছচাপা পড়া ইত্যাদি যেকোনো মুসিবত আসলে মুমিনের কাজ হচ্ছে আল্লাহর ভয় ও অনুতাপ নিজের অন্তরে জাগ্রত করা, নিজের শুদ্ধতা ও দোষমুক্ততার সাফাই গাওয়া নয়।

বিপদে-আপদে মানুষের অনুযোগ ও নিজের নির্দোষতা প্রকাশের ক্ষতি বহুমাত্রিক। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, বিপদগ্রস্ত মানুষের কোনো দোষ ও গুনাহ্ নেই বা ছিল না, তবুও তার নিজের অন্তরে গুনাহর ভয় না থাকা, মুসিবতের কারণে মনে ও জবানে শেকায়াত ও অনুযোগ প্রকাশ করা হলো কবীরা গুনাহ্। এ গুনাহটি এমন যে, এর সঙ্গে আরও বহু গুনাহর ধারাবাহিকতা চলে আসে।

এ গুনাহটির কারণে অন্তরে গুনাহ সম্পর্কে গাফিলতি চলে আসে। এর দ্বারা অহংকার তীব্র হয়ে উঠতে থাকে। এভাবে আল্লাহর যেকোনো ফয়সালার ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপনের মেজাজ গড়ে ওঠে। এরকম আরও ভয়ঙ্কর সব গুনাহ ও ক্ষতির কপাট খুলে যায়। এজন্যই কেবল বিপদের সময়েই নয়, সবসময়ই মুমিনের জন্য অনিবার্য অনুভূতি ও করণীয় হলো, আল্লাহ তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন। এ প্রত্যাবর্তন কখনো কৃতজ্ঞতার ভাষায়, কখনো ধৈর্য ধারণ ও সাহায্য প্রার্থনার ভাষায়, কখনো তওবা ও ইস্তেগফারের ভাষায় প্রকাশিত হতে পারে।

মুমিনের জীবনে যখনই কোনো মুসিবত নেমে আসে, তখন সেটাকে উপদেশদাতা ও সতর্ককারীরূপে গ্রহণ করে অনুতাপ ও প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়াই মুমিনের কামিয়াবী। বড়ই বদকিসমতীর কারণ হবে যদি এই উপদেশদাতা ও সতর্ককারীর বার্তা না বুঝে উল্টো পথের যাত্রী হয়ে যাই। দুনিয়ার একটি বিপদ বা মুসিবত যেন দুনিয়া ও আখেরাতের সহ¯্র মুসিবতের কারণে পরিণত না হয়Ñ এ সম্পর্কে আমাদের সবার সজাগ থাকা কর্তব্য।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
আরও

আরও পড়ুন

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু