বিপদ-আপদ-মুসিবতে অনুযোগ নয় প্রত্যাবর্তন ও অনুতাপই শেষ কথা-২

Daily Inqilab ওয়ারিস রব্বানী

০৬ জুন ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, দুর্যোগ সহজ কথায় মুসিবত আসার প্রধান এই তিনটি কারণ আমরা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাই-কৃতকর্মের শাস্তি, পরীক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধি। কৃতকর্মের শাস্তি বাবদ মুসিবত আসলে তওবা ও অনুশোচনা প্রকাশ করে ক্ষমারযোগ্য হওয়ার চেষ্টাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। পরীক্ষার অর্থ হচ্ছে কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হওয়ার বিবিধ খোলা দরজার মধ্য থেকে কৃতকার্য হওয়ার দরজাটি বেছে নেওয়া।

বিপদ ও মুসিবতে যখন বান্দার করণীয় কিছু থাকে না, তখন হা-হুতাশ, ধৈর্যহীনতা ও অনুযোগ প্রকাশ না করে ধৈর্য ধারণ করা এবং ইস্তেগফার ও দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইলেই পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এখানে তো পরীক্ষাটাই হয় ধৈর্য ও অধৈর্যে, অনুতাপ-অনুযোগের। এ পরীক্ষায় ধৈর্য ও অনুতাপ দিয়েই তাই কৃতকার্য হওয়া সম্ভব।

মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য যে মুসিবত আসে সেখানেও তো বান্দার জন্য সঙ্গত ও উপযোগী অনুভূতি ও আচরণ প্রকাশ পেলে বান্দার মযার্দা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। সেটাও তো ধৈর্য ও অনুতাপ অবলম্বন করেই সম্ভব। মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মুসিবত আসবে আর বান্দা তার মর্যাদার গায়ে ধৈর্যহীনতা ও অনুযোগের দাগ লাগিয়ে দেবে তারপরও বান্দার মর্যাদা বাড়বে এটা তো হতে পারে না।

আসলে যার মাঝে যতটুকু তাকওয়া ও খোদাভীতির প্রাচুর্য বিদ্যমান, বিপদ-আপদ, সংকটে তিনি তত বেশি অনুতাপের পথ বেছে নিয়ে থাকেন। নিজের গুনাহর অনুভূতি তার অন্তরে জেগে উঠে। গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য ইস্তেগফার করতে তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। আল্লাহর বান্দা হিসেবে সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ মুমিন ছিলেন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.), অন্যান্য নবী রাসুলগণ এবং পরবর্তীতে রাসূলে আকরাম (সা.)- এর সাহাবীগণ।

তাঁদের জীবনে বিপদ-আপদ, সংকট আসলে তারা আল্লাহ তায়ালার দিকে রুজু হতেন। তাদের অন্তরে নিজেদের সম্পর্কে ভয় সক্রিয় হয়ে উঠত। তারা মনে করতেন, তাদের কৃত আমলের ত্রুটির কারণেই এমন ঘটেছে। অথচ গুনাহর মধ্যে নিমজ্জিত মানুষ হয়ে আজ আমরা শেকায়েত করি, অভিযোগ-অনুযোগ করি। অন্যের সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলি আমি তো এরকম করি না, আমি তো এই কাজ করি না, তাহলে আমার ওপর এই বিপদ কেন আসল? আমি যে কত রকম গুনাহ কত শত-হাজারবার করেছি ও করে চলেছি সেগুলো আমার সামনে আসে না, বিপদের সময় সেগুলো মনেও পড়ে না।

এ কথা সত্য যে, যেসব বিপদ ও মুসিবত ঘটানোর ক্ষেত্রে অন্য কোনো বান্দার ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ থাকে সেসব মুসিবতের ক্ষেত্রে একদিকে তাদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে যাওয়া যেতে পারে। এটা বাহ্যিক কার্যকারণ থেকে করা যায়। শরীয়ত এ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। কিন্তু বাহ্যিকভাবে মানুষের ইচ্ছাকৃত আচরণেই হোক যেমন মারপিট, ডাকাতি ইত্যাদি আর মানুষের ইচ্ছাবহির্ভূতই হোক যেমন, ঝড়, বন্যা, গাছচাপা পড়া ইত্যাদি যেকোনো মুসিবত আসলে মুমিনের কাজ হচ্ছে আল্লাহর ভয় ও অনুতাপ নিজের অন্তরে জাগ্রত করা, নিজের শুদ্ধতা ও দোষমুক্ততার সাফাই গাওয়া নয়।

বিপদে-আপদে মানুষের অনুযোগ ও নিজের নির্দোষতা প্রকাশের ক্ষতি বহুমাত্রিক। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, বিপদগ্রস্ত মানুষের কোনো দোষ ও গুনাহ্ নেই বা ছিল না, তবুও তার নিজের অন্তরে গুনাহর ভয় না থাকা, মুসিবতের কারণে মনে ও জবানে শেকায়াত ও অনুযোগ প্রকাশ করা হলো কবীরা গুনাহ্। এ গুনাহটি এমন যে, এর সঙ্গে আরও বহু গুনাহর ধারাবাহিকতা চলে আসে।

এ গুনাহটির কারণে অন্তরে গুনাহ সম্পর্কে গাফিলতি চলে আসে। এর দ্বারা অহংকার তীব্র হয়ে উঠতে থাকে। এভাবে আল্লাহর যেকোনো ফয়সালার ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপনের মেজাজ গড়ে ওঠে। এরকম আরও ভয়ঙ্কর সব গুনাহ ও ক্ষতির কপাট খুলে যায়। এজন্যই কেবল বিপদের সময়েই নয়, সবসময়ই মুমিনের জন্য অনিবার্য অনুভূতি ও করণীয় হলো, আল্লাহ তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন। এ প্রত্যাবর্তন কখনো কৃতজ্ঞতার ভাষায়, কখনো ধৈর্য ধারণ ও সাহায্য প্রার্থনার ভাষায়, কখনো তওবা ও ইস্তেগফারের ভাষায় প্রকাশিত হতে পারে।

মুমিনের জীবনে যখনই কোনো মুসিবত নেমে আসে, তখন সেটাকে উপদেশদাতা ও সতর্ককারীরূপে গ্রহণ করে অনুতাপ ও প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়াই মুমিনের কামিয়াবী। বড়ই বদকিসমতীর কারণ হবে যদি এই উপদেশদাতা ও সতর্ককারীর বার্তা না বুঝে উল্টো পথের যাত্রী হয়ে যাই। দুনিয়ার একটি বিপদ বা মুসিবত যেন দুনিয়া ও আখেরাতের সহ¯্র মুসিবতের কারণে পরিণত না হয়Ñ এ সম্পর্কে আমাদের সবার সজাগ থাকা কর্তব্য।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামে এসো, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে
নিরাশা নয় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-২
নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১
পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-৩
পিতার কর্তব্য সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-২
আরও
X

আরও পড়ুন

ছাগলে গম খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৪

ছাগলে গম খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৪

‘দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’

‘দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’

সারাদেশে ছাত্রশিবিরের ‘মাস মুভমেন্ট’ কর্মসূচি পালন

সারাদেশে ছাত্রশিবিরের ‘মাস মুভমেন্ট’ কর্মসূচি পালন

আগ্রাসী ট্রাম্পকে ঠেকাতে ইউরোপের সঙ্গে জোট বাঁধছে চীন?

আগ্রাসী ট্রাম্পকে ঠেকাতে ইউরোপের সঙ্গে জোট বাঁধছে চীন?

বঙ্গে মানা হবে না ওয়াকফ আইন! বুধবার ইমামদের সঙ্গে বৈঠক মমতার

বঙ্গে মানা হবে না ওয়াকফ আইন! বুধবার ইমামদের সঙ্গে বৈঠক মমতার

কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়, তা এ প্রজন্ম আমাদের শিখিয়েছে : মৎস্য উপদেষ্টা

কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়, তা এ প্রজন্ম আমাদের শিখিয়েছে : মৎস্য উপদেষ্টা

মহেশপুরে বিএসএফ পিটিয়ে মারলো বাংলাদেশী যুবককে

মহেশপুরে বিএসএফ পিটিয়ে মারলো বাংলাদেশী যুবককে

দেশের জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন দেখতে চায় , আওয়ামী ষ্টাইলে রাজনীতি নয়-  ড. আসাদুজ্জামান রিপন

দেশের জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন দেখতে চায় , আওয়ামী ষ্টাইলে রাজনীতি নয়- ড. আসাদুজ্জামান রিপন

এবার হলিউডের অ্যাকশন মুভিতে রোনাল্ডো

এবার হলিউডের অ্যাকশন মুভিতে রোনাল্ডো

করিমগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

করিমগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

জাপানে সমুদ্রগর্ভে ১২ হাজার বছরের প্রাচীন পিরামিডের সন্ধান

জাপানে সমুদ্রগর্ভে ১২ হাজার বছরের প্রাচীন পিরামিডের সন্ধান

স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ

স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ

গণপদযাত্রায় যেভাবে অংশ নেবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

গণপদযাত্রায় যেভাবে অংশ নেবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

সিকৃবিতে কৃষি বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কাল শনিবার

সিকৃবিতে কৃষি বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কাল শনিবার

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান- সিলেটে মানববন্ধনে ওয়ান আর্থ ইনিশিয়েটিভ

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান- সিলেটে মানববন্ধনে ওয়ান আর্থ ইনিশিয়েটিভ

শৈলকুপায় সংঘর্ষে ২৫ জন আহত বাড়িঘর ভাংচুর

শৈলকুপায় সংঘর্ষে ২৫ জন আহত বাড়িঘর ভাংচুর

বিবাহ বিচ্ছেদে হ্যাট্রিকের রেকর্ড শ্রাবন্তীর

বিবাহ বিচ্ছেদে হ্যাট্রিকের রেকর্ড শ্রাবন্তীর

মার্চ ফর গাজা" হোক মুসলমানদের ঐক্যের বন্ধন : সিলেট ইসলামী আন্দোলন

মার্চ ফর গাজা" হোক মুসলমানদের ঐক্যের বন্ধন : সিলেট ইসলামী আন্দোলন

কাল শনিবার ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ সহ বিভিন্ন দাবীতে মিছিল ও সমাবেশ করবে সিলেট বাসদ

কাল শনিবার ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ সহ বিভিন্ন দাবীতে মিছিল ও সমাবেশ করবে সিলেট বাসদ

আনোয়ারায় জামায়াত প্রার্থীর স্লুইস গেইট পরিদর্শন

আনোয়ারায় জামায়াত প্রার্থীর স্লুইস গেইট পরিদর্শন