ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাইতুল্লাহ বা কাবাগৃহ কল্যাণময় ও বরকতের আধার

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

১৭ জুন ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

বাইতুল্লাহ বা কাবাগৃহ কল্যাণময় ও বরকতের আধার, যা চিরভাস্কর এবং চির অভিনন্দিত। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম এবাদতের নির্ধারিত ঘর এটাই যা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য সুপথ প্রদর্শক ও রবকতময়। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৯৬)। এই আয়াতেকারীমায় কাবাগৃহকে ‘মুবারক’ বা কল্যাণময় ও বরকতের আধার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরবি ‘মুবারক’ শব্দটি ‘বারাকাতুন’ শব্দ হতে উদ্ভূত। বারকাতুন শব্দের অর্থ বর্ধিত হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া, পরিমাণে শ্রী বৃদ্ধি ঘটা। স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে কোনো বস্তু দু’ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

যথা: (১) প্রকাশ্যে বস্তুটির পরিমাণ বৃদ্ধি লাভ করা এবং (২) এর দ্বার এতবেশি কাজ আঞ্জাম পাওয়া যা তার চেয়ে বেশি বস্তু দ্বারা ও সম্ভব হয়ে উঠে না। কাবা গৃহের দ্বারা এই উভয় প্রকার কল্যাণ ও বরকতের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তাছাড়া এর বরকত ও কল্যাণের বৃদ্ধি পাওয়াকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকেই নিরীক্ষণ করা যায়। কাবাগৃহের বাহ্যিক বরকত এই যে, পবিত্র মক্কা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ শুষ্ক বালুকাময়, অনুর্বর মরুভূমি। ফল ও ফসলের উৎপাদন এই উষর মরুভূমিতে মোটেই সম্ভব নয়।

কিন্তু এতদসত্ত্বেও বছরের সকল ঋতুতে ফলমূল, তরী-তরকারী, ভোগ্যপণ্য, উট, দুম্বা, ছাগল ইত্যাদির বিপুল মওজুদ মক্কায় লেগেই থাকে। কখনোও সেখানে কোনো জিনিসের অভাব দেখা দেয় না। আকাল বলতে সেখানে কিছুই নেই। মক্কার জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তদুপরি হজ, ওমরা এবং বিভিন্ন এবাদত বন্দেগির উদ্দেশ্যে বহিরাগতদের হুজ্জুম সেথায় লেগেই থাকে। এত কিছুর পরও মক্কায় অভাব অনটনের নাম গন্ধ ও নেই। সেখানকার জনগণের যাবতীয় প্রয়োজন মহান আল্লাহপাকের দয়া ও অনুগ্রহে পরিপূরণ হয়ে যাচ্ছে।

জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে কোনরকম অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে না। এমন কি কুরবানির পশু ও সেখানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ যাবৎ কাল পর্যন্ত কুরবানির পশুর অভাব কোথাও দেখা যায়নি। তাছাড়া কাবাগৃহের অভ্যন্তরীণ আধ্যাত্মিক ও রূহানী বরকত কি পরিমাণ তা নিরূপন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কতিপয় বিশেষ বিশেষ এবাদত কাবা গৃহেই আদায় করা হয়। এ সকল এবাদতের সওয়াব ও বিনিময় খুবই বিশাল এবং বিরাট। এই অগনিত সওয়াব ও পূন্য মূলত কাবাগৃহের কারণেই সাধিত হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, বাসগৃহে নামাজ আদায় করলে এক নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু মহল্লাহর মসজিদে আদায় করলে পঁচিশ নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। আর জামে মসজিদে পড়লে পাঁচশ নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাসে পড়লে এক হাজার নামাজের সওয়াব পাওয়া যায। আর আমার মসজিদে (মদিনার মসজিদে নবুবীতে) পড়লে পঞ্চাশ হাজার নামাজের সওয়াব এবং মসজিদে হারামে পড়লে এক লক্ষ নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। (সুনানে ইববে মাজাহ; তাবারি)।

আল কুরআন গভীর অভিনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, মহান আল্লাহপাক আরবি মুবারক শব্দটি তিনটি রূপে আল কুরআনে ১২ বার ব্যবহার করেছেন। যথা : ১. ‘মুবারাকুন’ রূপে ৪ বার। যেমন, সূরা আনয়ামের ৯২ নং আয়াতে ও ১৫৫ নং আয়াতে, সূরা আম্বিয়া এর ৫০ নং আয়াতে। এবং সূরা সোয়াদ এর ২৯ নং আয়াতে।

২.‘মুবারাকান রূপে ৪ বার। যেমন, সূরা আলে ইমরানের ৯৬ নং আয়াতে, সূরা মারইয়ামের ৩১ নং আয়াতে সূরা আল মুমেনুনের ২৯ নং আয়াতে, এবং সূরা কাফ-এর ৯ নং আয়াতে।

৩. আর ‘মুবারাকাতিন’ রূপে ৪ বার। যেমন সূরা নূর-এর ৩৫ নং আয়াতে এবং ৬১ নং আয়াতে। সূরা কাসাস-এর ৩০ নং আয়াতে এবং সূরা দুখান এর ৩ নং আয়াতে। উল্লিখিত ১২টি আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মুবারক বা অধিক বরকতের দ্বারা আল্ কুরআনে সুষমা ম-িত করেছে। একই সাথে কাবাগৃহ বা বাইতুল্লাহকে বরকতের শামিয়ানার দ্বারা আচ্ছাদিত করেছেন এবং হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত নূহ (আ.)-এর প্রতি অজস্র বরকত নাজিল করেছেন। তাছাড়া হযরত মূসা (আ.)-এর ঘটনায় বিবৃত বরকতময় ভূমির ওপরও আল্লাহপাকের অশেষ বরকত বর্ধিত হয়েছে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
আরও

আরও পড়ুন

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ

পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ