কুরবানি : একটি দালিলিক বিশ্লেষণ-২
২৫ জুন ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াতের একাংশে বলা হয়েছে, ‘ আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোনো কষ্ট থাকে তবে সিয়াম কিংবা সদকা অথবা পশু জবেহ এর মাধ্যমে ফিদয়া দেবে’। এই আয়াতে ‘নুসুক’ শব্দটি পশু জবেহ এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতের অর্থ পরিষ্কার। হযরত ইবরাহীম (আ.) কে খালেছ তওহীদ ও সিরাতে মুস্তাকীমের প্রত্যাদেশ আল্লাহ তায়ালা করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতিও তা নাজিল করেছেন এবং তাঁকে আদেশ করেছেন বলো, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সব আল্লাহর জন্য।
উল্লেখ্য, আরবি ভাষায় ‘নুসুক’ শব্দটি ইবাদতের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এজন্য ইবাদতকারীকে ‘নাসীক’ ও ইবাদতের পদ্ধতিকে ‘মানসীক’ বলা হয়। সূরা আনআমের উক্ত আয়াতে যদি ‘নুসুক’ শব্দের অর্থ ইবাদত করা হয়, তবুও তাতে কুরবানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাসূলে কারীম (সা.) একাধিক হাদিসে ঈদুল আযহার কুরবানিকে ‘নুসুক’ বলেছেন। কুরবানির পশু জবাই করার সময় যে দুয়া পড়ার কথা হাদিসে এসেছে, তাতেও ওই আয়াত রয়েছে।
কুরবানির শুরুতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই আয়াত ও দুয়া পড়া থেকে একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, কুরবানি খালেছ ইবাদত, তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, সূরা আনআমের ১৬২ নম্বর আয়াতে ‘নুসুক’ শব্দের অর্থ ঈদুল আযহার কুরবানি কিংবা ওই শব্দে কুরবানিও শামিল রয়েছে।
অপর যে আয়াতে সাধারণ কুরবানির উল্লেখ রয়েছে তা হলো সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াত। ইরশাদ হয়েছে : ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি। কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় কর এবং কুরবানি কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ’। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে এবং তাঁর মাধ্যমে গোটা উম্মতকে সালাত (নামাজ) ও নাহর (কুরবানির) আদেশ দেওয়া হয়েছে।
‘নাহর’ শব্দের মূল ব্যবহার উটের ক্ষেত্রে হলেও সাধারণত যেকোন পশু জবাই করাকেই ‘নাহর’ বলে। আয়াতে এমন জবাই উদ্দেশ্য, যা আল্লাহ তায়ালার জন্য ইবাদত হিসেবে করা হয়। সেটা হচ্ছে হজ ও উমরার কুরবানি এবং ঈদুল আযহার সাধারণ কুরবানি।
এ কুরবানির সময় যদিও তিন দিন, অর্থাৎ জিলহজের দশ, এগারো ও বারো তারিখ, তবে উত্তম দিন হলো দশ তারিখ। সাধারণ এ তারিখেই অধিকাংশ কুরবানি হয়ে থাকে। এজন্য দশ জিলহজের ইসলামি নাম হলো ‘ইয়াওমুন নাহর’। (সহিহ বুখারি : ৫৫৫০)। আয়াতে নামাজের যে আদেশ, তাতে ঈদের নামাজও শামিল রয়েছে। রাসূলে কারীম (সা.) সুন্নাহর মাধ্যমে এ আয়াতে নাজিল হওয়া ইলাহি নির্দেশের অনুসরণ-পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। একটি হাদিস লক্ষ্য করুন।
সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসগ্রন্থে বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল আযহার দিন নামাজ পরবর্তী খুতবায় বলেছেন, এই দিনের প্রথম করণীয় হলো সালাত আদায় করা। এরপর নহর (কুরবানি) করা। যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের পর নুসুক (কুরবানি) করল তার নুসুক পূর্ণ হলো এবং সে মুসলিমদের পন্থা অনুসরণ করল। আর যে সালাতের আগে জবাই করল সেটা তার গোশতের প্রয়োজন পূরণ করবে; কিন্তু তা ‘নুসুক’ হিসেবে গণ্য হবে না’। এই হাদিস বহু সহিহ সনদে বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। কোথাও বিস্তারীতভাবে, কোথাও সংক্ষিপ্তভাবে। (সহিহ বুখারি : ৯৫১, ৯৫৫, ৯৬৫, ৯৬৮, ৫৫৪৫, ৫৫৪৬)।
এই হাদিসে সূরাতুল কাউসারের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল থেকে পাওয়া গেল। সূরাতুল কাউসারে বলা হয়েছে, সুতরাং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানি করুন’। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ থেকে জানা যায়, নামাজ পড়ার আদেশে ঈদের নামাজ এবং কুরবানির আদেশে ঈদুল আযহার কুরবানিও অন্তর্ভুক্ত।
তদ্রূপ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল ও ইরশাদ থেকে একথাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ঈদুল আযহার কুরবানি হচ্ছে ওই ‘নুসুক’ যা সূরা আনআমের ১৬২ আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। এটি আল্লাহ তায়ালার ইবাদত হিসেবে আদায় করা হয়। এর উদ্দেশ্য গোশত খাওয়া বা গোশতের প্রয়োজন পূরণ করা নয়। তবে কুরবানি হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা সে পশুর গোশত কুরবানিদাতার জন্য হালাল করেছেন এবং দশ জিলহজ থেকে মোট চার দিন রোজা রাখতে নিষেধ করে যেন তাঁর মেহমানদারী কবুল করার আদেশ দিয়েছেন।
ঈদুল আযহার দিবস মুসলমানদের জন্য খুশির দিবস। তবে এই খুশির তাৎপর্য হচ্ছে আরাফা-দিবসের সাধারণ ক্ষমা, আল্লাহর দরবারে কুরবানি পেশ করার সৌভাগ্য এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া কুরবানি থেকে মেহমানদারি লাভ। বলাবাহুল্য, এই তাৎপর্য অনুধাবন করার জন্য অন্তরে ঈমানের মিষ্টতা এবং খালিক ও মালিকের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা থাকতে হবে। বস্তুবাদী ও যুক্তিপূজারী অন্তর দুঃখজনকভাবে এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক দখল করেছে একটি ইসলামী দল
মেহেরপুরে তসলিমা হত্যা মামলায় ২ জন আটক
ঈশ্বরদীতে ৫ বছরের শিশু কন্যাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সৎ বাবা গ্রেফতার
নাসার নতুন সাঁতারু রোবট , ইউরোপায় প্রাণের খোঁজে এক বিস্ময়কর যাত্রা
৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্র লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে : সারজিস
ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না : রিজভী
উখিয়ায় চুরির দায়ে পিটিয়ে এক যুবককে হত্যা, পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত খুন
৩১ ডিসেম্বর মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে : হাসনাত আবদুল্লাহ
বিধ্বস্তের আগে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বিমান যাত্রী
সিলেটে ‘পানি লাগবো পানি’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
নতুন বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় তাপপ্রবাহ ও ঝুঁকির সতর্কবার্তা
নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারে খুলেছে সচিবালয়, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে অন্যত্র
কেশবপুরের পল্লীতে নারকেল গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু
জকিগঞ্জে বাসের চাপায় স্কুলছাত্র আবিরের মর্মান্তিক মৃত্যু : শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধ
ইলন মাস্কের উগ্র-ডানপন্থী সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
বিজিবির সহায়তায় অবশেষে মুহুরী নদীতে সেচ পাম্প চালু
গাজায় নিহত ৩৬, হাসপাতালের পরিচালককে গ্রেফতারে বিশ্বজুড়ে নিন্দা
ইসলামি সংগীতে অনন্য মুজাহিদ বুলবুল
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় সাদপন্থী হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ