কুরবানি ও ঈদের পয়গাম
২৭ জুন ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১১:৪২ পিএম
বছর ঘুরে আবারো এলো ঈদুল আজহা। মুসলিম জীবনে ঈদুল ফিতরের মতো আরেকটি আনন্দোৎসব। এদিন ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা সকলেই ঈদগাহে সমবেত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে। আর সামর্থ্যবান মুমিন বান্দারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় তাদের কুরবানির পশু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবে। এরপর তাঁর আম মেহমানদারী গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করবে। ঐতিহাসিক, তবে ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম উৎসবের দিন। যার মূল বিষয় হলো কুরবানি। এটি কুরআন-সুন্নাহয় অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিধান এবং আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ হতে নির্দেশিত অন্যতম প্রধান ইবাদত।
এই দিনের আনন্দ হলো, দশই জিলহজ আল্লাহর ব্যাপক মাগফিরাত লাভের আনন্দ এবং ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল আনুগত্য-কুরবানি পেশ করার আনন্দ। আর যে মাহবুব মাওলার ভালোবাসা ও নৈকট্য অর্জনের জন্য এত সাধনা তিনি যদি দয়া করে কবুল হওয়া কুরবানির মাধ্যমে ‘আম জিয়াফত’ বা ব্যাপক মেহমানদারী করেন, তাহলে তো মুমিন-হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার আসবেই। তাৎপর্যগত দিক থেকে ইসলামি ঈদ আর অন্যান্য ধর্মের পর্ব উৎসবের মাঝে এই পার্থক্য রয়েছে যে, অন্যান্য ধর্মে যেখানে শত বছরের পুরোনো কোনো ঘটনা কিংবা বিশেষ কোনো ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে বছর বছর উৎসব উদযাপিত হয় সেখানে ইসলাম নিজেরই সদ্য করা ইবাদতের সৌভাগ্য-আনন্দে উজ্জীবিত হতে বলে।
তাই এক মাস সিয়াম সাধনার সৌভাগ্যের আনন্দ উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। আর হজ, কুরবানি ও মাওলার মেহমানদারী লাভের খুশির উৎসব হচ্ছে ঈদুল আজহা। মনে রাখতে হবে যে, এই কুরবানির মূল সূত্র যদিও মিল্লাতে ইবরাহীমিতে বিদ্যমান ছিল কিন্তু মিল্লাতে ইবরাহীমির ‘সেই’ ঘটনাই আমাদের আনন্দের মৌলিক উৎসব নয়; বরং আমাদের আনন্দের অন্তর্নিহীত কারণ তাই যা উপরোল্লেখিত হয়েছে। কারণ কুরবানি ইসলামেরই একটি স্বতন্ত্র বিধান এবং শরিয়তে মুহাম্মাদীর শিআর। যুগে যুগে কুরবানি বা প্রিয় বস্তুটি মাহবুব মাওলার দরবারে উৎসর্গ করার ইতিহাস সুদীর্ঘ। হযরত আদম (আ.)-এর দুই সন্তানের কুরবানির কথা বিবৃত হয়েছে সূরা মায়েদায়।
উল্লেখ্য যে, সকল উম্মতের কুরবানির নিয়ম এক ছিল না। ইসলামি শরিয়তে যে পদ্ধতিতে কুরবানি করা হয় তাও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে নির্দেশিত এবং তা মিল্লাতে ইবরাহীমির অংশ। হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহ তায়ালার আদেশে তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানি দিতে উদ্যত হওয়ার ঘটনা খুবই প্রসিদ্ধ। মূল ঘটনাটি কুরআন মজিদে আছে।
মিল্লাতে ইবরাহীমের সে মহান কুরবানির সূত্র ধরেই আমাদের জন্য আল্লাহ ও রাসূল প্রবর্তন করেছেন এই মহান ইবাদতের। ত্যাগ ও বিসর্জনের এই নিঃশর্ত আনুগত্যের। কুরবানির মূল প্রাণ কুরবানির প্রাণ কথা হলো তাকওয়া-খোদাভীতি, আল্লাহর প্রতি নিখুঁত মহব্বত ও ইখলাস। তাকওয়া, মহব্বত ও ইখলাস প্রত্যেকটি কলবের সাথে সম্পৃক্ত। কারণ আল্লাহর গোস্তের প্রয়োজন নেই, রক্তের প্রয়োজন নেই। তিনি তো শুধু মুমিনের তাকওয়ার পরীক্ষা নিতে চান।
লোক দেখানো, মানুষের বাহবা কুড়ানো, পার্থিব বড়ত্বের প্রতিযোগিতা, বড় লোকের কাতারে শামিল হওয়া এবং ‘আমার ছেলেরা কার দুয়ারে গোশতের জন্য ধরনা দেবে’-এ ধরনের ছোট এ পার্থিব মানসিকতার কুরবানি হয়তো সেই সব সামান্য উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গিত নাজরানা হতে পারে না। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকিদের কুরবানিই কবুল করেন। (সূরা মায়িদা : ২৭)।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর কাছে না এসব পশুর গোশত পৌঁছে, না তার রক্ত; বরং তার নিকট তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে থাকে। (সূরা হজ : ৬৭)। এই কারণেই পূর্ণ ইখলাস ও মহাব্বতের সাথে শুধুই আল্লাহর রেজামন্দীর জন্য কেউ কুরবানি করলে তা আল্লাহর দরবারে মকবুল হয়। এমনকি পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হওয়ার কথা হাদিস শরিফে এসেছে। (জামে তিরমিজি : ১৪৯৩)।
কুরবানির গোশতের এক ভাগ গরীব-মিসকিনদের আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের এবং বাকি এক অংশ কুরবানিদাতাদের খেতে বলা হয়। এটি মুস্তাহাব। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এসব পশুর গোশত থেকে তোমরা খাও এবং বিপন্ন অভাবগ্রস্তদের খাওয়াও। (সূরা হজ : ২৮)। সুতরাং কুরবানির গোস্ত ঈদ ও পরবর্তী দিনগুলোতে নিজেরা খাওয়া এবং গরীব-মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করা।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। একটি ইবাদত আদায় করতে গিয়ে পশুর বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা দ্বারা ঘরের আঙ্গিনা ও পথঘাটকে দূষিত করে তোলা মোটেই উচিত নয়। এতে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয় যা একটি ভিন্ন গুনাহ। এসব উদাসীনতার কারণে ইবাদতের মর্যাদা মøান হয়ে যায়। এদিকে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা একান্ত জরুরি।
পরিশেষে আসুন হৃদয় মনের সবটুকু মহব্বত নিয়ে সামর্থ্যরে মধ্যে সবচেয়ে ভালো পশুটি ক্রয় করি আর একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য তার দরবারে তা উৎসর্গ করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রিয়া থেকে বেঁচে ইখলাসের সাথে কুরবানি করার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। Ñআমীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান