পুত্র-কন্যার মাঝে সমতা কিছু নির্দেশনা-১
০৭ জুলাই ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

হািদস শরিফে কন্যাসন্তানের লালন-পালনের ছওয়াব ও ফজিলত যেমন আছে তেমনি আছে তার অধিকারসমূহের বর্ণনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাষায় নারীর অধিকারসমূহ বলে দিয়েছেন। আর এই অধিকারগুলো প্রধানত এমন, যা থেকে নারীকে বঞ্চিত করা হতো জাহেলি যুগে। বর্তমান যুগের অবস্থাও তা থেকে ভিন্ন নয়। তাই এখানে তাদের অবহেলিত কিছু অধিকারের কথা আলোচনা করা হলো, যেন এই অবহেলার নিরসন হয়। সন্তানদের প্রতি মমতা প্রকাশে সমতা : কারো কাছে পুত্রসন্তান বেশি প্রিয়, কারো কাছে কন্যাসন্তান। তবে অধিকাংশ মানুষই পুত্রসন্তান বেশি পছন্দ করে। মমতা ও মনের টান যেহেতু মানুষের ইচ্ছাধীন নয় তাই কারো প্রতি মনের টান বেশি হলে বা কম হলে মানুষ অপরাধী হয় না, কিন্তু এর প্রকাশটি যেহেতু মানুষের ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের অধীন তাই এ বিষয়ে সমতা বজায় রাখা অপরিহার্য।
অনেকে এই সমতা রক্ষা করে না। পুত্র-কন্যার মাঝে অসম আচরণ করে। পুত্রকে বেশি আদর করে, উপহার বেশি দেয়, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে কন্যার খোঁজখবরও নিতে চায় না। আচার-আচরণে পিতামাতা থেকে এমন কিছু প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়, যা দ্বারা সন্তানের মনে এই সংশয় জাগে যে, মা-বাবা অমুককে বেশি স্নেহ করেন, আমাকে কম। সন্তানের প্রতি পিতামাতার এমন অসম আচরণ অন্যায়। কিয়ামতের দিন এ জন্য তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।
হাদিসের প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন গ্রন্থ ‘মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক’-এ ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম বর্ণনা করেন, জনৈক আনসারী সাহাবিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ডাকলেন। ইতোমধ্যে ঐ সাহাবির এক পুত্র তার কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাও সেখানে উপস্থিত হলো। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন : উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রেও। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/১০০)।
সন্তানদের প্রতি আদর-স্নেহ প্রকাশের মতো হাদিয়া-উপহারের ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা জরুরি। সুতরাং পিতামাতা যখন সন্তানদেরকে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় কিংবা কোনো খাদ্যদ্রব্য দিবেন তখন সকলকে সমান হারে দিতে হবে। কন্যাকে ঠিক ততটুকুই দিবে যতটুকু পুত্রকে দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে বেশি আর মেয়েকে কম কিংবা এর বিপরীত করা যাবে না। বিশেষ করে আনন্দের উপলক্ষগুলোতে যখন সন্তানদেরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হয় তখনও সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য। যেমন ঈদের দিনে ঈদি সমান হারে দেওয়া, কোনো সফর থেকে ফেরার পর হাদিয়া-উপহার দিলে সবাইকে সমান দেওয়া ইত্যাদি।
হাদিস শরিফে আছে, বশীর ইবনে সাদ (রা.) একবার নিজপুত্র নুমান ইবনে বশীরকে কিছু জিনিস হাদিয়া করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সাক্ষী বানানোর জন্য নুমানকে তাঁর নিকট নিয়ে এলেন। নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানকে এরুপ উপহার দিয়েছ? তিনি বললেন, জ্বী না। নবী (সা.) ইরশাদ করলেন : আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। (আর এতটুকু চেষ্টা অবশ্যই কর যে, উপহার-সদাচার ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের অংশ যেন কাছাকাছি হয়)। (সহিহ মুসলিম : ৪০৫৯)।
পিতামাতা যদি কোনো সন্তানের প্রয়োজনের খাতিরে অন্যদের চেয়ে তার পিছনে কিছুটা বেশি খরচ করে, যেমন কারো অসুস্থতার সময় কিংবা পড়াশোনার জন্য অথবা ছেলে বা মেয়ে কোনো সফরে যাচ্ছে; একজনের সফর অল্প সময়ের, অন্যজনের সফর দীর্ঘ, একজনের সফরে অর্থের প্রয়োজন বেশি, অন্যজনের কম এ ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে তাদেরকে প্রয়োজন অনুপাতে কম-বেশি দিলে দোষ নেই। যে সন্তানের যতটুকু প্রয়োজন পিতামাতা তার জন্য ততটুকু খরচ করতে পারেন।
অনেকে জীবদ্দশাতেই স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ সন্তানদের মাঝে বণ্টন করতে চায়। প্রথমত এটা কোনো অপরিহার্য বিষয় নয়। দ্বিতীয়ত পিতামাতার জীবদ্দশায় তাদের সম্পদে সন্তানদের কোনো অধিকার সাব্যস্ত হয় না; বরং পিতামাতাই নিজ সম্পদের মালিক। তারা ইচ্ছা করলে সন্তানদের মাঝে তা বণ্টন করতেও পারেন, ইচ্ছা করলে নাও করতে পারেন। সন্তানরা পিতামাতার কাছে এই দাবি করতে পারে না যে, আপনারা যা কিছু উপার্জন করেছেন তা আমাদের মাঝে বণ্টন করে দিন।
অনেক সন্তান এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে এবং এই বলে পিতামাতাকে বাধ্য করে যে, আপনার তো এখন আর এই সম্পদের প্রয়োজন নেই, এগুলো তো এখন আমাদের অধিকার। তাই জীবিত অবস্থায়ই সবকিছু বণ্টন করে ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যান। আপনার মৃত্যুর পর আমরা ঠিকমতো সম্পদের হিস্যা পাব কি পাব না-এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতে পারে। সুতরাং এখনই জমিজমা বণ্টন করুন।
মনে রাখতে হবে যে, পিতামাতাই তাদের সম্পদের মালিক। সুতরাং বণ্টন করা, না করার বিষয়ে তারা স্বাধীন। অবশ্য পিতামাতা যদি মনে করেন যে, তাদের জীবদ্দশাতেই সম্পদ বণ্টন করে দেওয়া সমীচীন হবে তাহলে তারা তা করতে পারেন। যদি না করেন তবে এর সুযোগও তাদের রয়েছে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

নাটোর আদালত ভবনের মালখানা থেকে চুরি টাকাসহ সোনা-রুপা

গাজা ইস্যুতে এসএমপি কমিশনারের সাথে ও ওলামায়ে কেরামদের মতবিনিময়

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জাতীয় বীর ঘোষণার আহবান গণঅধিকার পরিষদের

লোডশেডিং গ্রামে নয়, আগে ঢাকায় হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

আত্মপ্রকাশ করেছে ‘গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি’ নামের নতুন দল

ছাগলে গম খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৪

‘দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’

সারাদেশে ছাত্রশিবিরের ‘মাস মুভমেন্ট’ কর্মসূচি পালন

আগ্রাসী ট্রাম্পকে ঠেকাতে ইউরোপের সঙ্গে জোট বাঁধছে চীন?

বঙ্গে মানা হবে না ওয়াকফ আইন! বুধবার ইমামদের সঙ্গে বৈঠক মমতার

কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়, তা এ প্রজন্ম আমাদের শিখিয়েছে : মৎস্য উপদেষ্টা

মহেশপুরে বিএসএফ পিটিয়ে মারলো বাংলাদেশী যুবককে

দেশের জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন দেখতে চায় , আওয়ামী ষ্টাইলে রাজনীতি নয়- ড. আসাদুজ্জামান রিপন

এবার হলিউডের অ্যাকশন মুভিতে রোনাল্ডো

করিমগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

জাপানে সমুদ্রগর্ভে ১২ হাজার বছরের প্রাচীন পিরামিডের সন্ধান

স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ

গণপদযাত্রায় যেভাবে অংশ নেবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

সিকৃবিতে কৃষি বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কাল শনিবার

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান- সিলেটে মানববন্ধনে ওয়ান আর্থ ইনিশিয়েটিভ