ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পুত্র-কন্যার মাঝে সমতা কিছু নির্দেশনা-১

Daily Inqilab আবদুল্লাহ ফাহাদ

০৭ জুলাই ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

হািদস শরিফে কন্যাসন্তানের লালন-পালনের ছওয়াব ও ফজিলত যেমন আছে তেমনি আছে তার অধিকারসমূহের বর্ণনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাষায় নারীর অধিকারসমূহ বলে দিয়েছেন। আর এই অধিকারগুলো প্রধানত এমন, যা থেকে নারীকে বঞ্চিত করা হতো জাহেলি যুগে। বর্তমান যুগের অবস্থাও তা থেকে ভিন্ন নয়। তাই এখানে তাদের অবহেলিত কিছু অধিকারের কথা আলোচনা করা হলো, যেন এই অবহেলার নিরসন হয়। সন্তানদের প্রতি মমতা প্রকাশে সমতা : কারো কাছে পুত্রসন্তান বেশি প্রিয়, কারো কাছে কন্যাসন্তান। তবে অধিকাংশ মানুষই পুত্রসন্তান বেশি পছন্দ করে। মমতা ও মনের টান যেহেতু মানুষের ইচ্ছাধীন নয় তাই কারো প্রতি মনের টান বেশি হলে বা কম হলে মানুষ অপরাধী হয় না, কিন্তু এর প্রকাশটি যেহেতু মানুষের ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের অধীন তাই এ বিষয়ে সমতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

অনেকে এই সমতা রক্ষা করে না। পুত্র-কন্যার মাঝে অসম আচরণ করে। পুত্রকে বেশি আদর করে, উপহার বেশি দেয়, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে কন্যার খোঁজখবরও নিতে চায় না। আচার-আচরণে পিতামাতা থেকে এমন কিছু প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়, যা দ্বারা সন্তানের মনে এই সংশয় জাগে যে, মা-বাবা অমুককে বেশি স্নেহ করেন, আমাকে কম। সন্তানের প্রতি পিতামাতার এমন অসম আচরণ অন্যায়। কিয়ামতের দিন এ জন্য তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।

হাদিসের প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন গ্রন্থ ‘মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক’-এ ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম বর্ণনা করেন, জনৈক আনসারী সাহাবিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ডাকলেন। ইতোমধ্যে ঐ সাহাবির এক পুত্র তার কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাও সেখানে উপস্থিত হলো। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন : উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রেও। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/১০০)।

সন্তানদের প্রতি আদর-স্নেহ প্রকাশের মতো হাদিয়া-উপহারের ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা জরুরি। সুতরাং পিতামাতা যখন সন্তানদেরকে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় কিংবা কোনো খাদ্যদ্রব্য দিবেন তখন সকলকে সমান হারে দিতে হবে। কন্যাকে ঠিক ততটুকুই দিবে যতটুকু পুত্রকে দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে বেশি আর মেয়েকে কম কিংবা এর বিপরীত করা যাবে না। বিশেষ করে আনন্দের উপলক্ষগুলোতে যখন সন্তানদেরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হয় তখনও সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য। যেমন ঈদের দিনে ঈদি সমান হারে দেওয়া, কোনো সফর থেকে ফেরার পর হাদিয়া-উপহার দিলে সবাইকে সমান দেওয়া ইত্যাদি।

হাদিস শরিফে আছে, বশীর ইবনে সাদ (রা.) একবার নিজপুত্র নুমান ইবনে বশীরকে কিছু জিনিস হাদিয়া করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সাক্ষী বানানোর জন্য নুমানকে তাঁর নিকট নিয়ে এলেন। নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানকে এরুপ উপহার দিয়েছ? তিনি বললেন, জ্বী না। নবী (সা.) ইরশাদ করলেন : আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। (আর এতটুকু চেষ্টা অবশ্যই কর যে, উপহার-সদাচার ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের অংশ যেন কাছাকাছি হয়)। (সহিহ মুসলিম : ৪০৫৯)।

পিতামাতা যদি কোনো সন্তানের প্রয়োজনের খাতিরে অন্যদের চেয়ে তার পিছনে কিছুটা বেশি খরচ করে, যেমন কারো অসুস্থতার সময় কিংবা পড়াশোনার জন্য অথবা ছেলে বা মেয়ে কোনো সফরে যাচ্ছে; একজনের সফর অল্প সময়ের, অন্যজনের সফর দীর্ঘ, একজনের সফরে অর্থের প্রয়োজন বেশি, অন্যজনের কম এ ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে তাদেরকে প্রয়োজন অনুপাতে কম-বেশি দিলে দোষ নেই। যে সন্তানের যতটুকু প্রয়োজন পিতামাতা তার জন্য ততটুকু খরচ করতে পারেন।

অনেকে জীবদ্দশাতেই স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ সন্তানদের মাঝে বণ্টন করতে চায়। প্রথমত এটা কোনো অপরিহার্য বিষয় নয়। দ্বিতীয়ত পিতামাতার জীবদ্দশায় তাদের সম্পদে সন্তানদের কোনো অধিকার সাব্যস্ত হয় না; বরং পিতামাতাই নিজ সম্পদের মালিক। তারা ইচ্ছা করলে সন্তানদের মাঝে তা বণ্টন করতেও পারেন, ইচ্ছা করলে নাও করতে পারেন। সন্তানরা পিতামাতার কাছে এই দাবি করতে পারে না যে, আপনারা যা কিছু উপার্জন করেছেন তা আমাদের মাঝে বণ্টন করে দিন।

অনেক সন্তান এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে এবং এই বলে পিতামাতাকে বাধ্য করে যে, আপনার তো এখন আর এই সম্পদের প্রয়োজন নেই, এগুলো তো এখন আমাদের অধিকার। তাই জীবিত অবস্থায়ই সবকিছু বণ্টন করে ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যান। আপনার মৃত্যুর পর আমরা ঠিকমতো সম্পদের হিস্যা পাব কি পাব না-এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতে পারে। সুতরাং এখনই জমিজমা বণ্টন করুন।

মনে রাখতে হবে যে, পিতামাতাই তাদের সম্পদের মালিক। সুতরাং বণ্টন করা, না করার বিষয়ে তারা স্বাধীন। অবশ্য পিতামাতা যদি মনে করেন যে, তাদের জীবদ্দশাতেই সম্পদ বণ্টন করে দেওয়া সমীচীন হবে তাহলে তারা তা করতে পারেন। যদি না করেন তবে এর সুযোগও তাদের রয়েছে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি