পিতার কর্তব্য : সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-২

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

সন্তানের তারবিয়াত ও পরিচর্যা প্রধানত পিতারই কাজ। গঠন-নির্মাণের সূচনা যখন হয় সে বয়সে পিতার শৈথিল্য প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। সে বয়সে বহুমুখী আকর্ষণ তার গঠন ব্যাহত করতে পারে। ব্যাহত করেই থাকে। তা থেকে সুরক্ষা দিতে হবে পিতাকেই। তা দেয়া না হলে আদরের সন্তান হাতছাড়া হয়ে যাবে। সুরক্ষার অভাবে কতো পিতার বুকের ধন একপর্যায়ে তার সুখ হরণের কারণ হয়ে গেছে। চোখ খুলে তাকালেই তা নজরে আসে। আশা ছিলো তাদের মানিক-রতন একদিন অনেক বড় হবে। ছিলো কতো স্বপ্ন। আহা! সেই স্বপ্ন এভাবে মাটি হয়ে গেল! শেষ সান্ত্বনা কপালকে দুষে।

কপালের লিখন খণ্ডানো যায় না ঠিক। কিন্তু কর্মফল খণ্ডাবে কে? সাধ পূরণের চেষ্টা যদি যথাযথ না হয়, তবে অপূরণের দহন তো সইতেই হবে! যথাযথ চেষ্টার প্রধান শর্ত গোড়া থেকে চেষ্টা। যখন কাদামাটির দলা থাকে, সেই সময়কার প্রযত্ন। সেই বয়সের সুরক্ষা। তবেই মনের মতন পুতুল গড়ে উঠবে।

‘খোকন প্রীতিভাজনের’ কথাই সুন্দর- হাত ধরার বয়সে ধরতে হবে, হাত ধরেই রাখতে হবে। কেবল বিদ্যাশিক্ষার জন্য নয়। হাত ধরতে হবে আরও অনেক শিক্ষার জন্য। আখলাক-চরিত্র শিক্ষার জন্য, আদব-কায়দা শিক্ষার জন্য ও মানবিকতা শিক্ষার জন্য। বিদ্যাশিক্ষার পাশাপাশি এসব শিক্ষাও শেখানো অতীব জরুরি। বালক বয়স থেকেই এর প্রতিটি বিষয় শেখানোর প্রতি মা-বাবাকেই যত্নবান হতে হবে।

কেবল শিক্ষক নিয়োগ বা শিক্ষকের হাতে অর্পণ দ্বারাই অভিভাবকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। অনেক পিতা-মাতাই মনে করেন শিক্ষালয়ে ভর্তি করা বা শিক্ষকের হাতে অর্পণ করার দ্বারাই যথেষ্ট দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। বই-খাতা কিনে দেয়া হচ্ছে, কলম-কিতাবের কোনও অভাব রাখা হচ্ছে না, বেতনও ঠিক ঠিক পরিশোধ করা হচ্ছে, তো আর বাকি থাকল কী? বাকি তো থাকলই। আসল জিনিসই বাকি থাকল। আর তা হলো অভিভাবকের প্রযত্ন। শিশু যাতে শিক্ষাকে দরকারী মনে করে, যাতে শিক্ষাকে আপন করে নিতে পারে, খেলার মতোই ভালোবাসতে পারে, ক্রমান্বয়ে সামনে অগ্রসর হতে পারে এবং ক্ষতিকর কিছুতে লিপ্ত না হয়ে পড়ে তার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া অভিভাবকেরই কাজ।

শিশুকে যদি সময় দেয়া হয় আরও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বললে, যদি সঙ্গদান করা হয়, তবে ওইসব দীর্ঘ ফিরিস্তি সামনে আনার দরকারই পড়ে না। ওসব আপনিই হয়ে যায়। কিন্তু দুই শব্দের এ কাজটি আমরা করতে পারছি না। আমরা আমাদের সন্তানদের ‘সঙ্গদান’ করছি না। অনিবার্যভাবেই তা না করার কুফল আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। সন্তানদের লেখাপড়া আশানুরূপ হচ্ছে না।

যদি হাত ধরার বয়স থেকে আমরা তাদের ঠিকভাবে সঙ্গ দিতাম তবে লেখাপড়ার পথে চলা তাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যেত। আমার সঙ্গদান থেকে শক্তি-সাহস পেত, উদ্যম-উদ্দীপনা পেত, অগ্রগামিতার প্রেরণা পেত, বাধা-বিপত্তি ও ক্ষতিকর পরিপার্শ্ব অপসৃত হয়ে যেত, পড়াশুনা আনন্দপূর্ণ হতো এবং হতো কাক্সিক্ষত সবকিছু।
যে সকল সন্তান সম্পর্কে তাদের অভিভাবকের আক্ষেপ তারা পড়াশুনা করল না বা করছে না, তাদের পর্যবেক্ষণ করলে আকছার সঙ্গপ্রাপ্তির অভাবই নজরে আসে। তারা অভিভাবকের সঙ্গপ্রাপ্তির বঞ্চনা থেকেই মূলত কাক্সিক্ষত বিদ্যার্জন থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে। সুতরাং সন্তানের প্রতি আক্ষেপ করে লাভ কি, খেদ হওয়া উচিত নিজের প্রতি- আহা, আমার আসল কর্তব্য- সঙ্গদানের অভাবে আজ আমাকে আশাভঙ্গের যাতনা ভোগ করতে হচ্ছে। আক্ষেপ করা হয়, সন্তানের লেখাপড়া তেমন হলো না বলে। লেখাপড়া দুনিয়ার অনেকেরই হয়নি। যাদের হয়নি সব বখে গেছে এমন নয়। মহামানবদের সকলেই বড় বড় ডিগ্রিধারী ছিলেন কি? আবার সব ডিগ্রিধারীকে মহৎ লোক বলা যাবে?

লেখাপড়া ভালো জিনিস সন্দেহ নেই। বরং এটা অনেক মূল্যবান বিষয়। কিন্তু এর চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান মানুষের আখলাক-চরিত্র, তার নৈতিকতা। নিশ্চয়ই একজন শিষ্টাচারবোধহীন বিদ্বান অপেক্ষা শিষ্ট-সুবোধ নিরক্ষর অনেক বেশি দামী। কিন্তু দাম বলতে যখন টাকা-পয়সাই বোঝা ও বোঝানো হয় তখন নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ভাবাভাবি হবে কেন। সেই ভাবনার অভাবে আজ আমরা জর্জরিত। তাই লেখাপড়া হলো না বলে আক্ষেপ করি। কিন্তু বিদ্বান ছেলেটি কেন মুরুব্বীকে সম্মান করে না, সে নিয়ে খেদ নেই।

হাঁ, সন্তানের হাত ধরা উচিত। যতোটা তার বিদ্যাচর্চার জন্য এর চেয়ে অনেক বেশি তার ব্যক্তিগঠন, আখলাক-চরিত্র নির্মাণ ও মানবিকতা বিকাশের জন্য। এই জিনিসের আজ বড় আকাল অথচ এটাই মানুষের আসল সম্পদ। এ সম্পদে নিজ সন্তানকে বলিষ্ঠ করতে হলে বালক বয়সেই তার হাত ধরতে হবে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আইপিএল: প্লে অফে কে কার মুখোমুখি

আইপিএল: প্লে অফে কে কার মুখোমুখি

আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র

আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র

সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ  বার্সা

সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ  বার্সা

ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের

ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের

সিটির অমরত্বের রাত...

সিটির অমরত্বের রাত...

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে