কাজ ও কথার সমন্বয় সাধন ইসলামের শিক্ষা-১
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
মানুষ যা বলে তা-ই ভাষা এবং এই ভাষা দ্বারাই মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। চলমান জীবনে মুখের ভাষা কেমন হওয়া উচিত এবং ভাষাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবেÑ এ ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শ রয়েছে। কথার বাঁধন খুবই শক্ত এবং অনড়। প্রয়োজন, পরিবেশ ও অবস্থা ভেদে কথার ধরণ, প্রকার ও বিন্যাস নানারকম হয়ে থাকে। মানুষ সবাক প্রাণী। তার বাকযন্ত্র ও এর ব্যবহার যতই উপযোগী ও যথাযথ হবে-ততই দেখা দেবে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা। এ জন্য কথা বলার সময় সকলকেই সচেতন হতে হবে।
নরম কথা সকলেরই প্রিয়। নরম স্বরে ও সরল ভাষায় কথা বলার নির্দেশ আল কুরআনে রয়েছে। মহান আল্লাহপাক হযরত মূসা (আ.) ও হযরত হারুন (আ.)-কে হেদায়েত করলেন যে, ‘তোমরা ফেরাউনের কাছে যাও এবং তার সাথে নম্র কথা বলো’। যে কথা বলা হবে তা উত্তম ও সমৃদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কথা যেন উপকারী হয়, এর দ্বারা নিজের অথবা অন্যের উপকার হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মহান আল্লাহপাক নির্দেশ করেছেন : ‘তোমরা মানুষের সাথে উত্তম ও সুন্দর কথা বলো’। মজলিসে উপবিষ্ট হয়ে এমন কথা বলবে না, যার মাঝে অন্যের তিরস্কার প্রচ্ছন্ন আছে এবং যা অন্যের মর্যাদা হানিকর।
ইহুদিরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মজলিসে আগমন করত এবং ‘উনজুরনা’ অর্থাৎ আমাদের খেয়াল করুন না বলে ‘রায়িনা’ অর্থাৎ আমাদের রাখাল’ শব্দ উচ্চারণ করত। এই কথাটিতে অবজ্ঞা ও ঘৃণার ভাব প্রকাশ পেত। উহুদিদের দেখাদেখি মুসলমানেরা অনুরূপ ‘রায়িনা’ বলতে শুরু করলেন। তাই আল্লাহপাক মুসলমানদেরকে এই ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না; বরং ‘উনজুরনা’ বলো।’
ইহুদিদের এই আচরণের পূর্ণ বিবরণ আল কুরআনের সূরা নিসা. রুকু-৭-এ সন্নিবেশিত আছে। কথাবার্তা এমন হওয়া উচিত, যা মার্জিত, রুচিসম্মত ও ইনসাফপূর্ণ হয়। পরিবার, সমাজ ও জাতির অধিকাংশ সদস্য যদি এদিকে খেয়াল রাখে, তাহলে পরস্পর যুদ্ধ হিংসা, প্রতিশোধ প্রবণতা লোপ পাবে এবং মানুষের মাঝে শত্রুতা ও বিরুদ্ধবাদিতা সৃষ্টি হবে না। আল কুরআনে এই শিক্ষাই দেয়া হয়েছে।
ইরশাদ হচ্ছে : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সোজা কথা বল, আল্লাহ তোমাদের কর্মকাণ্ড শোধরে দেবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।’ জীবন চালনার ক্ষেত্রে মহিলাদেরও কথা বলতে হয়, বাক্যালাপ করতে হয়। যদি তাদেরকে ভিন্ন পুরুষের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা কথার ঢং ও স্বর-মাত্রাকে এমনভাবে প্রকাশ করবে না, যা শ্রোতার অন্তরে কলুষভাবের উদয় করতে পারে।
আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : ‘পর-পুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।’ পুরুষদের উচিত নরম, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রাণস্পর্শী কথা বলা। এর দিকে পুরুষদেরকে সচেতন করা হয়েছে এবং উহার পূণ্যকে দান-খয়রাতের সমতুল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে : ‘নেককথা বলা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দান-খয়রাত হতে উত্তম, যা মনোবলের উদ্রেক করে।’
যখন কথা বলবে, আস্তে আস্তে বলবে, অনাবশ্যক চিৎকার করে কথা বলা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘এবং তোমার স্বরকে নরম করো, কেননা সকল স্বরের মাঝে গর্দভের স্বরই কটু ও অপছন্দনীয়।’ অনাবশ্যক কথা পরিহার করা সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। মুসলমানদের মাঝে এই গুণের সমাবেশ ঘটা একান্ত প্রয়োজন। ইরশাদ হচ্ছে : ‘(মুসলমানের গুণ এই যে) তারা নিরর্থক কথাবার্তা হতে দূরে সরে থাকে।’
বস্তুত মানুষ যে কথাই মুখ হতে বের করে, এর ওপর আল্লাহর ফেরেশতাগণ সাক্ষী থাকে। আল-কুরআনে সুস্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে : ‘মানুষ কোনো কথা বলে না; কিন্তু একজন প্রত্যক্ষকারী সেখানে উপস্থিত থাকে।’ এজন্য প্রত্যেক মানুষের উচিত মুখ থেকে কথা বলার পূর্বে উহার সকল দিকে চিন্তা করা।
কথা ও বাক্যালাপের ক্ষেত্রে প্রভূত শিক্ষার দিকনির্দেশনা রয়েছে হাদিস শাস্ত্রে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ইমান রাখে, তার উচিত নেককথা বলা অথবা চুপ থাকা।’ (তিরমিজি : কিতাবুল ইমান : প্রতিবেশী ও অতিথিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন অধ্যায়।) এক্ষেত্রে আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ইমান রাখার শর্তের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ এইদিকে ইঙ্গিত প্রদান করছে যে, আমরা যেন নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিফল ভুলে না যাই।
কেননা, আমরা যদি খারাপ কথা বলি, তাহলে এর প্রতিফল ভোগ করব। অন্য এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘ব্যক্তি মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যমণ্ডলীর মাঝে একটি হলো, যে বস্তু তার উদ্দেশ্য নয় সেদিকে মনোযোগ না দেয়া।’ এই হাদিসটি এমন একটি পরিপূর্ণ বাক্য, যা দেখতে খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এই ক্ষুদ্র পানির পাত্রে সুবিশাল সমুদ্র বিধৃত আছে। মুসলমানগণ যদি এই আপ্ত বাক্যটিকে স্মরণে রাখে তাহলে তাদের অনেক কাজ সহজতর হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে
কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়