সেকালের ফেরাউন একালের ফেরাউন-২

Daily Inqilab মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

একটি ঘরে মূসা নামক এক ছেলে জন্ম নিলো। শিশুটি খুন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মা আকুল হয়ে গেলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তার মনে বুদ্ধি এলো, শিশুটিকে নদীতে ভাসিয়ে দাও। তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হলো। সে শিশু বেড়ে উঠল ফেরাউনেরই ঘরে। পরবর্তীতে তাকেই ধাওয়া করতে গিয়ে ডুবে মরল ফেরাউন ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। এটুকু ইতিহাস তো সকলেরই জানা। এখান থেকে বারবারই একটা কথা মনে আসছে। সেটা হলো, ইসরাইল যে চিন্তা থেকে শিশুদেরকে আগ বাড়িয়ে হত্যা করছে, টার্গেট করে করে শিশুদেরকে হত্যা করছে, একটু বেড়ে ওঠা শিশুদের পাথর নিয়ে প্রতিরোধ চেষ্টা তাদের অপছন্দ লাগে, এজন্য আগেই তাদের শেষ করে দিতে চায়। হয়তো তারা ভয় পায়, এ শিশুদের মধ্য থেকেই কেউ বড় হয়ে যায় কি না! বড় হয়ে আমাদেরকে মারে কি না? আমাদের পতনের কারণ হয় কি না? কিন্তু তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না।

তারা মনে করছে, শিশুদের হত্যা করে শেষ করে ফেলবে। কোনো ইসরাইলি দম্ভ করে বলছিল, ‘গাজাকে তারা মিশিয়ে দিয়ে সেখানে পার্ক বানাবে।’ তারা দম্ভ দেখাচ্ছে। তারা জানে না, তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। শিশুহত্যা করেই যে তারা পার পাবে না, এটা তাদের ইতিহাস থেকে শেখা উচিত। কালকে ফেরাউনের ঘরে পালিত শিশু আজ তাকেই চ্যালেঞ্জ করল। বর্তমানে কি সেটা অসম্ভব কিছু? এমন কি হতে পারে না যে, ইসরাইলের ভেতরেই হয়তো বড় হচ্ছে কোনো সালাহুদ্দীন আইয়ুবি কিংবা অন্য নামের কেউ। যে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং তাদের ভরাডুবি তার হাতেই হবে।

এটা মনে রাখা দরকার, ইতিহাসে যারা সবকিছু উল্টে দেওয়ার জন্য আবির্ভূত হন তারা কিন্তু হঠাৎই হন। জানান দিয়ে আসেন না। সালাহুদ্দীন আইয়ুবির বিজয়ের দিনের আগে কেউ জানত না, এ লোকই আবার ক্রুসেডারদের থেকে উদ্ধার করবে ফিলিস্তিন, মসজিদুল আকসা। তাতারিদের আগে কে জানত, এরকম একটা শক্তি আসবে। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সবকিছু শেষ করে দেবে।

শিশুহত্যা করে ইসরাইল যা করতে চায় এটা তার জন্য বিধিবাম হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ইসরাইলের তথাকথিত বন্ধু আরব রাষ্ট্রগুলো... (এখানে মনে রাখতে হবে, এ বন্ধু মানে হলো, মুখের বন্ধু এবং মনে রাখা দরকার, এরকম অনেক দেশেই থাকে, আমাদের দেশেও আছে। এগুলো একতরফা বন্ধুত্ব। তাবেদারির বন্ধুত্ব। শুধু দেওয়ার বন্ধুত্ব। পাওয়া খুবই সামান্য।)

এই যে আরবরা এখন মুসলিম ভাইদের, নিজ ভাষাভাষীর, সংস্কৃতির এবং স্বধর্মের মজলুমদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না, তারা ইসরাইলকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে, ইনিয়ে-বিনিয়ে তার পক্ষই টানছে। বারবার তারা লোকদেখানো মিটিংয়ে একত্রিত হয়। কিন্তু আসল ফয়সালা ইসরাইলের পক্ষেই যায়। কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত তারা নিতে পারেনি।

তারা ভাবছে, ইসরাইলের কারণে যদি তাদের ক্ষমতার ক্ষতি হয়, অথবা তাদের এ ভয়ও ভেতরে থাকতে পারে, আজকে ফিলিস্তিনিরা মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে, হামাস শক্তিশালী হয়ে উঠলে, তাদের ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসে কি না? এসব ভীতিও তাদের থাকতে পারে। কিন্তু একথা তো বোঝা দরকার এবং ইতিহাস বারবার পড়া দরকার।

ইতিহাসে কোনো সাহসী মহান ব্যক্তি, কোনো বীরসেনা যদি কোনো অঞ্চলে দাঁড়িয়ে যায় তখন সে অঞ্চলেই শুধু সীমিত থাকে না। আজকে ইসরাইলিরা শিশুহত্যা করছে, কালকে যদি বেঁচে যাওয়া কোনো শিশুই বড় হয়ে যায়, তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দেয়, তখন কী হবে? আর সেক্ষেত্রে সে তো কেবল তাদেরকেই চ্যালেঞ্জ জানাবে না; সে আরো বড় থেকে বড় সাহেবদের দিকে আঙুল তুলবে নিশ্চয়। তখন এসব আরবদের কী হবে? এদের ক্ষমতা কি জায়গামতো থাকবে?

ইসরাইলের ধ্বংস অবধারিত সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু সময়ের অপেক্ষা। যারা এমন জুলুম করে তারা পৃথিবীতে বহুদিন টিকে থাকবে না। এটা তো সুনিশ্চিত। কিন্তু আজকে ইসরাইলকে যে আরবরা মৌন ও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের কি শেষরক্ষা হবে? এটা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র

আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র

সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ  বার্সা

সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ  বার্সা

ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের

ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের

সিটির অমরত্বের রাত...

সিটির অমরত্বের রাত...

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়