সাখাওয়াত ও বদান্যতার গুরুত্ব
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
সত্যবাদিতার পর ইসলামের বুনিয়াদি নৈতিক শিক্ষা হচ্ছে বদান্যতা। আরবি সাখাওয়াত শব্দের মূল মর্ম হলো নিজের অধিকারকে স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে অন্যের ওপর ন্যস্ত করা। এর অনেকগুলো দিক হতে পারে। যথা : (১) নিজের হক ও অধিকার ক্ষমা করা, (২) নিজের উদ্বৃত্ত মাল-সম্পদ অন্যকে দান করা, (৩) নিজের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ না করে অন্যকে অকাতরে দান করা, (৪) নিজের প্রয়োজনকে বন্ধ রেখে অন্য কাউকে প্রদান করা। (৫) অন্যের জন্য নিজের দৈহিক শক্তি ব্যয় করা, (৬) নিজের চিন্তাশক্তিকে অন্যের জন্য খরচ করা, (৭) প্রয়োজনের প্রাক্কালে নিজের মর্যাদাকে সংকটাপন্ন করা, (৮) নিজের জীবনকে আশঙ্কাজনক অবস্থার সম্মুখীন করা, (৯) অন্যের প্রাণ রক্ষা করার জন্য অথবা সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা ইত্যাদি। এসকল গুণের মাঝে বদান্যতার নি¤œতম ও উচ্চতর মর্যাদা নিহিত আছে। যেগুলোকে শনাক্ত করার জন্য পৃথক পৃথক নামকরণও করা হয়েছে।
এই আলোচনার দ্বারা বোঝা যায় যে, সাখাওয়াত এবং বদান্যতার শিক্ষা কতখানি সুবিস্তৃত অর্থ ও মর্মকে ধারণ করে আছে এবং নৈতিকতার কতখানি মূল্যবান শিক্ষা এর মাঝে সম্পৃক্ত আছে। তবে এসকল প্রকরণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, নিজের ব্যক্তিসত্তার দ্বারা অন্যদের উপকৃত করা এবং তাদের চাহিদা পূরণ করা। একই সাথে একথা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, বদান্যতাসুলভ চিন্তা-চেতনা ও দৃঢ় প্রত্যয় নৈতিক কর্মকা-ের মূল বুনিয়াদ, যা একজন মানুষকে প্রকৃত মানবতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। কুরআনুল কারীমের সূরা বাকারাতে মহান আল্লাহপাক মুত্তাকী বান্দাদের কতিপয় গুণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, ‘এবং তাদেরকে যে রুজি দান করেছি তা থেকে তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে।’
কোনো কোনো তাফসিরকারক এই খরচ অর্থ গ্রহণ করেছেন ‘জাকাত’ আদায় করা, কিন্তু সঠিক অভিমত হচ্ছে এই যে, এই আয়াত শুধুমাত্র জাকাতের সাথেই সুনির্দিষ্ট নয়; বরং এখানে যেভাবে সুনির্দিষ্ট রুজির কথা উল্লেখ করা হয়নি। উৎপাদিত ফল ও ফসল অথবা গৃহপালিত পশু অথবা সোনা-রুপা অথবা অন্য কোনো বস্তু যা কিছুই হোক না কেন, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য এর কোনোটিকেই সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত করা হয়নি।
যখন আল্লাহপাক স্বীয় করুণা বলে যেকোনো বান্দাকে যা কিছু দান করেছেন, তা থেকেই অন্য লোকদের দান করা উচিত। যে যা কিছু লাভ করেছে কিংবা যে প্রয়োজনের তুলনায় কম লাভ করেছে উভয় ক্ষেত্রেই দানের হস্ত সম্প্রসারিত রাখতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা মোটেই সমীচীন নয় যে, প্রয়োজনের তুলনায় যে কম পেয়েছে অথবা অভাবগ্রস্ত সে দান করবে না, বরং সাধ্য অনুসারে তাকেও বদান্যতার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। বস্তুত এ গুণটি হলো মুত্তাকীদের চিহ্ন বা পরিচিত। আর এই গুণের বিকাশকেই নৈতিকতার ক্ষেত্রে সাখাওয়াত এবং বদান্যতারূপে চিত্রিত করা হয়েছে। ঈমান গ্রহণের পর ইসলামের দু’টি স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং জাকাত।
জাকাতের মূল প্রেরণা হচ্ছে সাখাওয়াত ও বদান্যতা। এতে বোঝা যায় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে এই নৈতিক শিক্ষার বিকাশ বুনিয়াদি কর্মকা- বিশেষ। যেভাবে নামায-ইবাদাত সকল প্রকার আল্লাহর অধিকারের বুনিয়াদি স্তম্ভ। অনুরূপভাবে সাখাওয়াত এবং বদান্যতা বান্দাদের সকল প্রকার হক ও অধিকারের ভিত্তি। যতক্ষণ পর্যন্ত কারো মাঝে এই গুণের বিকাশ না ঘটবে, তার মাঝে সমশ্রেণির লোকদের প্রতি সহৃদয়তা প্রকাশ করা এবং ভালোবাসার অনুপ্রেরণা পয়দা হবে না। এজন্য ইসলাম জাকাতকে ফরজ করে মানুষের সেই প্রেরণাকে উজ্জীবিত করেছে।
সমগ্র কুরআনুল কারীম গভীর দৃষ্টিতে অধ্যয়ন করলে দান করা ও ব্যয় করা সংক্রান্ত অজ¯্র নির্দেশাবলির সন্ধান লাভ করা যায়। বিশেষ করে সূরা বাকারাহর মাঝে আল্লাহর পথে দান করার তাগিদ বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। কখনো কখনো দানকে জিহাদের অপরিহার্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমার প্রদত্ত রিজিক হতে তোমরা দান করো, ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না। আর অবিশ্বাসীরাই সীমালঙ্ঘনকারী।’
এই পবিত্র আয়াতের শেষ অংশ অর্থাৎ কাফেররাই সীমালঙ্ঘনকারী অত্যন্ত গুরুত্ববহ। এই অংশের অন্তর্নিহিত মর্মের প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যাবে যে, যে ব্যক্তি প্রতিফল দিবসের উপকারিতার খেয়াল না করে আল্লাহর পথে নিজের মাল-সম্পদ ব্যয় করে না, সে কুফর ও অবিশ্বাসের দ্বারপ্রান্তে পেঁৗঁছে যায় অথবা সে আল্লাহর নেয়ামতের অস্বীকারকারী। যে কারণে আল্লাহর প্রদত্ত রুজি ও নেয়ামত লাভ করার পর এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সামান্যতম বস্তুও আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। মহান আল্লাহপাক উপরোল্লিখিত আয়াতে কতখানি প্রাণস্পর্শী ব্যঞ্জনার মাধ্যমে স্বীয় বান্দাদের নিজের প্রদত্ত রুজি থেকে খরচ করার অনুপ্রেরণা দান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন : ‘হে লোক সকল! তোমরা ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন আল্লাহর আযাব ও অভিসম্পাত হতে তোমাদের ক্রয়-বিক্রয় কোনো উপকারে আসবে না। এমনকি তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মহব্বত কোনো প্রকার উপকার দেবে না। তাছাড়া তোমাদের চেষ্টা-তদবির ও সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে
কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট