কুরআনের মাধুর্য যেভাবে আকর্ষণ করতো উদ্ধত মুশরিককেও
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
আল-কুরআনুল কারীম আল্লাহ তাদআলার পবিত্র কালাম। এর শব্দ-বাক্যে রয়েছে আসমানী নূরের ছটা ও অলৌকিক দ্যুতি। একজন মুমিন দিবানিশি স্নাত হতে থাকে কুরআনের অপার্থিব স্নিগ্ধ আলোয়। ঈমানী নূরে বিধৌত হয় তার দেহ-মন। মহান আল্লাহ মুমিন বান্দার এ দৃশ্যটির চিত্রায়ণ করেছেন এ ভাষায় : বস্তুত মুমিনগণ তো এমনই যে, যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর শিউরে ওঠে।
আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়। আর তারা তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে। তারা নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। এরাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। (সূরা আনফাল : ২-৪)।
তবে কুরআন যেহেতু সর্বজনীন তাই এর লালিত্য ও মাধুর্য স্পর্শ করে যায় মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সবাইকে। এমনকি স্রষ্টার বিদ্রোহী গোলাম উদ্ধত মুশরিকের হৃদয়েও তা নাড়া দিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে কুরআনের পথে ডাকতেন, কুরআন পড়ে পড়ে মানুষকে শোনাতেন। কাফেররা তখন এই কুরআনের বিরোধিতায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হতো। আল্লাহ তাআলা তাদের অবস্থা কুরআনে বলে দিয়েছেন : আর কাফেররা (একে অন্যকে) বলে, এই কুরআন শুনো না এবং এর (পাঠের) মাঝে হট্টগোল করতে থাক, যাতে তোমরা জয়ী থাক। (সূরা হামীম সাজদা : ২৬)। কিন্তু কুরআনের শক্তির বিরুদ্ধে কি কখনো জয়ী হওয়া যায়?! ফলে তারা দিনদিন পরাজিতই হতে থাকল।
একদিকে কুরআনের বিরোধিতা অপরদিকে তাদের অবস্থা ছিল-রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন প্রকাশ্যে নামাযে তিলাওয়াত করতেন তখন কাফেররা দূরে সরে যেত। কিন্তু দূর থেকে আবার আড় কানে চুপে চুপে শোনার চেষ্টা করত। যখন কেউ দেখে ফেলত, আস্তে কেটে পড়ত। (দ্রষ্টব্য : আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৪/১৬৪)।
মক্কার প্রতাপশালী মুশরিক নেতারা দিনের বেলায় কুরআনের ধ্বনি স্তিমিত করতে মরিয়া হলেও রাতের অন্ধকারে তাদের আচরণ ছিল ভিন্ন। যেই কুরআনকে মিটিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে তারা তৎপর ছিল, সেই কুরআনেরই তিলাওয়াত শুনতে তারা চলে আসত চুপে চুপে, রাতের অন্ধকারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) দিনভর কুরআনের দাওয়াত দিতেন আর রাতের আঁধারে একান্ত নিভৃতে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়িয়ে যেতেন কুরআন তিলাওয়াতে।
আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ও আখনাস ইবনে শারীক। মক্কার তিন মুশরিক সরদার। নবীজী যখন রাতে নামাযে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতেন তারা লোকচক্ষু ফাঁকি দিয়ে চলে আসত কুরআন শুনতে। নবীজীর ঘরের বাইরে ঘাপটি মেরে বসে কান পেতে থাকত। সবাই একা একা আসত। কেউ কারো খবর জানত না। ভাবত- আমি একাই শুনতে এসেছি। এভাবে সারা রাত তন্ময় হয়ে কুরআন তিলাওয়াত শুনতো তারা।
একবারের ঘটনা। এভাবে তারা সারারাত কুরআন তিলাওয়াত শুনলো। যখন ভোর ঘনিয়ে এলো। চারিদিক ফর্সা হতে আরম্ভ করলো। তড়িৎ ঘর পানে ছুট দিলো। কিন্তু পথে তিনজন একে অপরের মুখোমুখি হয়ে গেল। অপ্রস্তুত অবস্থা। ধরা খেয়ে গেল সবাই সবার কাছে, তিন জনই একই অপরাধের অপরাধী! দিনভর যেই কুরআনের বিরোধিতায় যারা জোর প্রচারণা চালায় তারাই কিনা রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে এভাবে কুরআন শুনতে আড়ি পেতে বসে! সাধারণ জনতা ব্যাপারটা টের পেলে তো কুরআনের প্রতি তারা আরো ধাবিত হয়ে পড়বে।
জনগণকে যেভাবে তারা ভুলভাল বুঝিয়ে কুরআনের সংস্পর্শ থেকে নিবৃত্ত রাখতে চাইছে, তা মাঠে মারা পড়বে। না না এরকম আর আসা যাবে না- তারা প্রতিজ্ঞা করল। নিজেরাই নিজেদের ভর্ৎসনা করে ঘরে ফিরে গেল। দিন গড়িয়ে ফের রাত এলো। চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে গেল। সবাই সবার জায়গা থেকে চিন্তা করলো, কাল যেহেতু সবাই ধরা পড়ে গিয়েছে তাই আজ তিলাওয়াত শুনতে কেউ যাবে না। আমি একা গিয়ে কিছুক্ষণ শুনে আসি। এভাবে তিনজনই একই চিন্তা নিয়ে প্রতিজ্ঞা ভেঙে চলে গেল কুরআন শুনতে। ভোরের আলো ফুটতেই একে অপরের হাতে আবার ধরা পড়লো। আবার আগের দিনের মতো নিজেদের ভর্ৎসনা করে যে যার মতো ঘরে চলে গেল। ওয়াদা করল, আর আসবে না।
তৃতীয় রাত। প্রথম ও দ্বিতীয় রাতের মতো কেউ বিছানায় থাকতে পারল না। অন্ধকার নেমে এলে আজও তারা লুকিয়ে লুকিয়ে চলে গেল কুরআন শুনতে। বরাবরের মতো দেখা হয়ে গেল তিনজনের। এখন তারা শক্ত হলো। বলল, আমরা মজবুত প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ না হলে হবে না। এভাবে তারা পরস্পর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরল। (দ্রষ্টব্য : সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৩১৫; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৫/৭৭)।
প্রিয় পাঠক! কী এমন আকর্ষণ রয়েছে কুরআনের তিলাওয়াতে, যার কারণে এমন চিহ্নিত কুরআনের শত্রু রাতের অন্ধকারে ঘরে থাকতে পারত না! বিছানায় গা এলিয়ে বিশ্রাম নেয়ার পরিবর্তে সারারাত কষ্ট করে কুরআন শুনতে অস্থির হয়ে পড়তো! এটা ছিলো মূলত কুরআনের অলৌকিকত্ব।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক
যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড
যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক