সালাতুল হাজাত : প্রয়োজন পূরণে নামায ও দুআ-১
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
ইসলামের স্বীকৃত আকীদা হল, দুনিয়াতে যা কিছু ঘটে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুমেই ঘটে। অতীতে, বর্তমানে, ভবিষ্যতে, সর্বত্র, সর্বক্ষণ, একমাত্র আল্লাহ তাআলার হুকুমই কার্যকর। তাঁর হুকুমের বাইরে এবং তাঁর অগোচরে আসমান ও যমীনের কোথাও কিছু ঘটা সম্ভব নয়। এই আকীদা মুমিনমাত্রই ধারণ করে এবং মনেপ্রাণে লালন করে।
সেজন্যই মুমিন সকল বিষয়ে প্রথমে আল্লাহমুখী হয়। আল্লাহ তাআলার কাছেই নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহের কথা জানায়। যাবতীয় চাহিদা ও আকাক্সক্ষার কথা ব্যক্ত করে। এরপর কায়মনোবাক্যে দুআ করে। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার স্বতন্ত্র বিধান, উপায় ও উপকরণ অবলম্বনের প্রতি মনোযোগী হয়।
ছোট বড় যে কোনো প্রয়োজনে মুমিন উপকরণ অবলম্বন করে ঠিকই, তবে কাক্সিক্ষত বিষয় অর্জনের ক্ষেত্রে ভরসা রাখে একমাত্র আল্লাহ তাআলার ওপর। বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাআলার হুকুম হলেই আমি তা লাভ করব, অন্যথায় নয়। তবে আল্লাহ তাআলাই যেহেতু উপকরণ অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন, তাই গুরুত্বের সাথে এবং যথাযথভাবে তা অবলম্বন করব।
মুমিন শরীয়তের বিধান মোতাবেক উপকরণ অবলম্বনের সময় এবং তার আগে ও পরে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ-অভিমুখী হয়। একমাত্র আল্লাহ তাআলার ওপরই ভরসা করে। সেইসাথে বিনীতভাবে দুআ করে এবং বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে দুআ কবুল করানোর চেষ্টা করে। কাক্সিক্ষত বস্তুটি পাওয়া-না পাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনা করে।
সে বিশ্বাস করে, জিনিসটি আমার প্রয়োজন ঠিক, তবে তা আমার জন্য কল্যাণকর না-ও হতে পারে। তাই সে তার ইচ্ছা ও আগ্রহ প্রকাশ করার পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রকৃত কল্যাণও প্রার্থনা করে। এমনকি কাক্সিক্ষত বস্তুটি পাওয়ার পর তা উত্তম কাজে, উত্তম পন্থায় ব্যবহার করার তাওফীক কামনা করে।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষের প্রয়োজন প্রথমত দুই ধরনের। এক. সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে পাওয়ার মতো বিষয়, যাতে মানুষের কোনো হাত নেই। যেমন সন্তান লাভ করা, রোগমুক্তি লাভ করা, হায়াতে বরকত হওয়া, রিযিকে বরকত হওয়া ইত্যাদি। দুই. কোনো মাখলুকের মধ্যস্থতায় পাওয়ার মতো বিষয়। যা প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তাআলার কাছ থেকেই পাওয়া, তবে ওসিলা হিসেবে সেখানে কোনো মাখলুক থাকে। যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ সুবিধা লাভ করা, শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর হওয়া ইত্যাদি।
জীবন যাপন করতে গিয়ে মানুষ উভয় প্রকারের হাজারো প্রয়োজনের মুখোমুখি হয়। ফলে নিত্যদিন এসব প্রয়োজন পূরণের ক্লান্তিহীন চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। প্রথম প্রকারের প্রয়োজনগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ গভীর ধ্যান ও মনোযোগের সাথে আল্লাহ-অভিমুখী হয় ঠিক, তবে দ্বিতীয় প্রকারের প্রয়োজনগুলোর ক্ষেত্রে উপায়-উপকরণের দিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে। কেউ কেউ তো উপায়-উপকরণের প্রতিই পূর্ণ মনোযোগী হয় এবং এসবের প্রতিই ঝুঁকে থাকে। কিন্তু মুমিন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু করার পাশাপাশি পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি। তাঁর কাছেই দুআ করে। তাঁর কাছেই সাহায্য চায়।
মুমিন তার যাবতীয় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কীভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাইবে, সে বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি প্রসঙ্গ এসেছে নিম্নোক্ত আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
এখানে মুমিনদেরকে ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বীনী ও দুনিয়াবী এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়, যে কোনো ধরনের, যেকোনো প্রয়োজনে মুমিন ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাইবে। এই ব্যাপকতা আয়াতটির মর্মে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/২৫১)।
এখানে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দুটি বিষয়। সবর ও সালাত। সবরের শাব্দিক অর্থ, ধৈর্য। দ্বীন ও শরীয়তে সবরের তিনটি ক্ষেত্রকে মৌলিকভাবে উদ্দেশ্য করা হয়ে থাকে। এক. যাবতীয় গোনাহ ও পাপাচার থেকে ধৈর্যের মাধ্যমে নিজেকে বিরত রাখা। দুই. আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে ধৈর্যের মাধ্যমে নিজেকে অবিচল রাখা।
তিন. বিপদাপদ ও বালা-মসিবতের ক্ষেত্রে সংযম অবলম্বন করা। অর্থাৎ যাবতীয় বিপদ ও মসিবত আল্লাহ তাআলার হুকুমেই এসে থাকে, এই বিশ্বাস জাগ্রত রাখা এবং এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ, ক্ষমা ও প্রতিদান আশা করা। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/২৫১-৫২)।
আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাওয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল, সালাত বা নামায। নামায এবং যাবতীয় ইবাদত মূলত সবরেরই একটি প্রকাশক্ষেত্র। তদুপরি এখানে নামাযকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে; যা থেকে নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি আরো জোরালোভাবে সাব্যস্ত হয়। উপরন্তু নামায অবস্থায় বান্দা ইবাদতে মশগুল থাকার পাশাপাশি সকল গোনাহ ও পাপাচার থেকে এবং বিভিন্ন বৈধ কাজকর্ম থেকেও বিরত থাকে, যা সবরের অর্থকে আরো মজবুত করে।
মোটকথা, সবরের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। তাঁর যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলা সহজ হয়, যা তাঁর নৈকট্য ও মহব্বত এবং রহমত ও নুসরত লাভের ওসিলা হয়। এমনিভাবে বিপদ মসিবতে আল্লাহর প্রতি সর্বাত্মক সমর্পণ আল্লাহর রহমত ও দয়াকে আবশ্যক করে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক
যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড
যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক