সালাতুল হাজত : প্রয়োজন পূরণে নামায ও দুআ-২
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
সালাত মুমিনের সর্বপ্রধান ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে যেমন ইবাদত আদায় করা হয়, তেমনি তার প্রভাবে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাও সহজ হয়; যেমনটি সূরা আনকাবূতের ৪৫নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। তাছাড়া নামাযের মধ্যেও বিভিন্নভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। যেমন সূরা ফাতেহার ৪নং আয়াতে তিলাওয়াত করা হয় : আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য চাই। এখানে ব্যাপকভাবে মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ার সকল প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা রয়েছে। এমনিভাবে নামাযের বিভিন্ন দুআ-তাসবীহতেও রয়েছে বান্দার দুনিয়া ও আখেরাতের নানা প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা। হাদিস শরীফে এসেছে, বান্দা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। তাই সেই অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সে সময়ের দুআ অবশ্যই কবুল হয়। এমনকি এ সময়ে কৃত নবীজীর একটি দুআও বর্ণিত হয়েছে : হে আল্লাহ, আপনি আমার ছোট-বড়, প্রথম-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিন। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম : ৪৮২)।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে অনুমিত হয় যে, আল্লাহ তাআলার কাছে ছোট-বড় কোনো প্রয়োজন প্রার্থনা করা, বিশেষ কোনো কিছু চাওয়া কিংবা বিপদ মসিবত ও দুঃখ পেরেশানী থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশে দু-চার রাকাত নামায পড়ে দুআ করা- একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ আমলের ব্যাপারে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত থেকে যেমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তেমনি হাদিস শরীফেও পাওয়া যায় বেশকিছু বর্ণনা। ফিকহের পরিভাষায় এই নামাযকে বলে ‘সালাতুল হাজত’। বিখ্যাত সাহাবী হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বলেন : নবী (সা.) যখন কোনো সমস্যা বা পেরেশানীর সম্মুখীন হতেন, নামাযে মগ্ন হতেন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৩১৯)।
হযরত আলী (রা.) বলেন : আমি বদরযুদ্ধের রাতে দেখেছি, আমরা সকলে ঘুমিয়ে আছি কেবল রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যতীত। তিনি একটি গাছের কাছে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত নামায পড়ছিলেন এবং দুআ করছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬১)। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আ.) ও ঈসা (আ.)-কে বিপদ ও মসিবতের কঠিন পরিস্থিতিতে নামাযের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন : আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি আদেশ পাঠালাম যে, তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিশরে ঘর-বাড়ি স্থাপন কর এবং তোমাদের ঘরগুলোকে নামাযের স্থান বানাও এবং যথাযথভাবে নামায আদায় কর। আর ঈমান আনয়নকারীদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর। (সূরা ইউনুস : ৮৭)।
বান্দার দুআ ও প্রার্থনা আল্লাহ তাআলার কাছে খুব পছন্দ। আল্লাহ তাআলা চান, বান্দা নিয়মিত তাঁর কাছে দুআ করুক। সকল প্রয়োজন তাঁর কাছেই পেশ করুক। বান্দার এই আল্লাহমুখিতা ও মুখাপেক্ষিতা আল্লাহ তাআলার খুব প্রিয়। এ মর্মেই কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের রব বলেছেন, আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা গাফির : ৬০)।
এই আয়াতে ‘আমাকে ডাক’ অর্থ হলো, আমার বন্দেগী করো এবং আমার কাছে চাও। (তাফসীরে কাশশাফ : ৪/১৭৫)। ‘সাড়া দেব’ অর্থ হলো, আমি তোমাদের ইবাদতের প্রতিফল দেব এবং তোমাদের দুআ কবুল করবো, তোমাদের চাওয়া পূর্ণ করবো। (প্রাগুক্ত)। আয়াতের শেষাংশে বলেছেন, যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে অর্থাৎ সকল ইবাদাত, দুআ ও আল্লাহকে ডাকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
নিঃসন্দেহে অন্যান্য ইবাদতের মতো আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে দুআ করা স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। বরং আল্লাহর কাছে চাওয়া ও দুআ করাকে হাদিসে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৭৯)। দুআর ক্ষেত্রে কিছু আদব যেমন আছে, তা কবুল হওয়ার কিছু শর্তও আছে। এ বিষয়ে অনেকগুলো বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সা.) ইরশাদ করেন : আল্লাহ তাআলা বান্দার দুআ কবুল করে থাকেন : যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো গোনাহ কিংবা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দুআ না করে এবং দুআ কবুলে তাড়াহুড়ো না করে।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, তাড়াহুড়ো কীভাবে হয়? অথবা কাকে তাড়াহুড়ো বলা হয়? নবীজী বললেন : বান্দা বলে, আমি তো দুআ করেছি, আমি তো দুআ করেছি; কিন্তু কবুল হতে দেখিনি। তাই সে নিরাশ হয়ে যায় এবং দুআ করা ছেড়ে দেয়। (সহীহ মুসলিম : ২৭৩৫)।
মোটকথা, দুনিয়া ও আখেরাতের যে কোনো প্রয়োজনে মুমিন প্রথমেই আল্লাহ-অভিমুখী হবে। আল্লাহ তাআলার কাছেই নিজের সকল প্রয়োজন পেশ করবে। তাঁর কাছ থেকেই কল্যাণের ফায়সালা গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে নামায ও দুআর মাধ্যম অবলম্বন করবে। পাশাপাশি সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। মনে রাখবে, আল্লাহ তাআলার কাছে বান্দার দুআ-মুনাজাতের যেমন প্রতিদান রয়েছে, চেষ্টা মেহনতেরও রয়েছে অনেক মূল্য ও প্রতিদান। নিঃসন্দেহে বান্দার যাবতীয় বিষয় আল্লাহ তাআলার হুকুমেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক
যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড
যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক