পথ ও পথিকের হক-২
০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম
পথ ও পথিকের হক নিয়ে গত আলোচনায় কয়েকটি হকের ব্যাপারে কথা বলেছিলাম আজ আরও কয়েকটি হক সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। সালামের উত্তর দেওয়া : একজন মুসলমান যখন আরেকজন মুসলমানকে সালাম দেয় তখন সেই সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। এই উত্তর সালাম প্রদানকারীর অধিকার। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : পাঁচটি বিষয় এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের অধিকার- সালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরিক হওয়া, নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে এর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। (সহীহ বুখারী : ১২৪০)।
পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে মুসলমানগণ সালামের মাধ্যমেই অভিবাদন জানায়। একে অন্যের জন্যে আল্লাহর দরবারে শান্তি ও রহমত কামনা করে। আর পারস্পরিক এই কল্যাণ কামনা তাদের মাঝে রোপণ করে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার বীজ। সালামের উত্তর দেয়াকে রাসূলুল্লাহ (সা.) পথের হক হিসেবে গণ্য করেছেন। পথের পাশে বসে থাকা ব্যক্তিকে পথিক যখন সালাম দেবে, তখন যেন সে পথিকের সালামের উত্তর দেয়।
সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা : সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা এই উম্মতের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পথে যদি কোনো অন্যায় কাজ চোখে পড়ে তখন সাধ্যমতো বাধা দিতে হবে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামর্থ্যরে প্রতি লক্ষ্য রাখবে এবং নিজের সামর্থ্যটুকু যথাযথ ব্যবহারের প্রতিও যত্নবান হবে। এটাই হাদীসের শিক্ষা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় কাজ দেখে তখন যেন সে নিজ হাতে তা প্রতিহত করে। যদি তা তার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে মুখে বাধা দেবে। যদি তাও না পারে তাহলে অন্তরে তা ঘৃণা করবে। আর এটিই ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। (সহীহ মুসলিম : ৪৯)।
সুন্দর কথা বলা এবং পথ দেখিয়ে দেওয়া : পথচলা যেমন মানবজীবনের একটি স্বাভাবিক অনুষঙ্গ, তেমনি চলার পথে পথ না চেনা কিংবা চলতে চলতে পথ হারিয়ে ফেলাও একটি অতি সাধারণ বিষয়। পথের সন্ধানে পথিক তখন পথে থাকা কারোর ওপরই ভরসা করে। তার কাছে সে জানতে চায় আপন গন্তব্যের ঠিকানা। যারা পথের ধারে বসে থাকে তাদের নিকট এটি পথিকের অধিকার। কেউ পথ জানতে চাইলে তাকে তার পথটি দেখিয়ে দিতে হবে।
এরই পাশাপাশি তার সঙ্গে কৃত আচরণও যেন সুন্দর হয়, হাদীস শরীফে এদিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং একেও পথের হক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দিষ্ট পথটি জানা থাকলে তাকে তা দেখিয়ে দিতে হবে হৃদ্যতা ও উদারতার সঙ্গে, আর জানা না থাকলেও তার সঙ্গে কোমল আচরণ করতে হবে। এটাই এ হাদীসের দাবি। কর্কশ ও অসুন্দর আচরণ করা যাবে না কিছুতেই।
এক হাদীসে এ পথ দেখানোকে ‘সদকা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তুমি কাউকে তার অচেনা পথ দেখিয়ে দিলে, এটি তোমার জন্যে একটি সদকা। (জামে তিরমিযী : ১৯৫৬)। আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি কোনো দুগ্ধবতী বকরি দান করে অথবা কাউকে ঋণস্বরূপ অর্থ প্রদান করে কিংবা কাউকে পথ দেখিয়ে দেয় সে একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব লাভ করবে। (জামে তিরমিযী : ১৯৫৭)।
নির্যাতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করা : একজন মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন আরেকজন মানুষই তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। এটি মানবতা ও নৈতিকতার দাবি। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র বাণীতে এটি আলোচিত হয়েছে পথের অধিকার হিসেবে। কোনো পথিকের ওপর যদি অন্যায়ভাবে কেউ হামলে পড়ে, কোনো সন্ত্রাসী কিংবা ছিনতাইকারীর আক্রমনে কোনো পথিকের অর্থসম্পদ প্রাণ কিংবা সম্মান-সম্ভ্রম ঝুঁকির মুখে পড়ে, তখন পথের পাশে বসে থাকা ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে এই নির্যাতিত পথিকের সহযোগিতায়।
আক্রান্ত ব্যক্তিটির জাত-ধর্ম এক্ষেত্রে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, সে একজন পথিক এবং নিরাপদে পথ চলার অধিকার তার রয়েছে- এটিই মূল কথা। অন্যায় মোকাবেলার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাউকে নির্যাতিত হতে দেখেও না দেখা কিংবা নীরবতা অবলম্বন করা প্রকারান্তরে অন্যায়কে সমর্থন ও সহযোগিতা করারই শামিল।
হাদীস শরীফের ভাষ্য, নির্যাতিত ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে অন্যায় থামিয়ে দেয়া- এতে জালেম-মজলুম উভয়কেই সহযোগিতা করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালেম হোক আর মজলুম হোক। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মজলুমকে তো আমরা সাহায্য করব ঠিক, কিন্তু জালেমকে সাহায্য করব কীভাবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : তুমি তার হাত ধরে ফেলবে। (অর্থাৎ তাকে তার অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখাটাই তার জন্যে সহযোগিতা।) (সহীহ বুখারী : ২৪৪৪)।
যারা কথাবার্তা বলা কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে পথের পাশে বসবে তারা যেমন এ অধিকারসমূহ আদায়ে সচেষ্ট হবে, তেমনি যারা পথিক কিংবা পথের পাশের দোকানদার, তাদেরকেও এ বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে। এটিই ইসলামের আদর্শ। নিজেকে ইসলামের সত্যিকার অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতে হলে এ আদর্শ আমাদের ধারণ করতেই হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে
কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়