রাসূলে আকরাম (সা.) -এর মহানুভবতা-১
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, হে বাছা! যদি তোমার পক্ষে সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটানো সম্ভব হয় যে, তোমার অন্তরে কারও প্রতি মলিনতা নেই, তবে সেভাবে কাটাবে। তারপর বললেন, হে বাছা! এটা আমার সুন্নাত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে যিন্দা করল, সে আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সংগে থাকবে। (জামে তিরমিযী : ২৬৭৮)।
এ হাদিস দ্বারা নবী কারীম (সা.)-এর সুন্নাত ও জীবনাদর্শের একটি দিক সম্পর্কে আলো পাওয়া যায়। তিনি সে আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য সরাসরি প্রিয় খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছেন। আর তার মাধ্যমে এ উপদেশ তাঁর উম্মতের সকলের প্রতি। যেন তাঁর উম্মতের প্রত্যেকে এ আলোয় আলোকিত হয়।
তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছেন, যে-কোনও মানুষের ব্যাপারে তার অন্তর নির্মল রাখতে। সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটাবেন যে, তার অন্তরে কারও প্রতি কোনও হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কোনও দুঃখ-কষ্ট নেই এবং কোনও রাগ ও ক্ষোভ নেই। যে যতো দুঃখ-কষ্ট দিক, মনে যতো বড় আঘাতই দিক, অবিলম্বে সে আঘাতের চিহ্ন মুছে ফেলবে। মুখে ক্ষমা ঘোষণা করবে এবং অন্তর পরিষ্কার করে ফেলার চেষ্টা করবে। যেন কোনও দিন তার পক্ষ থেকে সে কোনও কষ্ট পায়ইনি। প্রিয়নবী (সা.) জানাচ্ছেন এটা তাঁর সুন্নাত- তাঁর জীবনাদর্শ। তিনি সারাটা জীবন এভাবেই কাটিয়েছেন। কতো মানুষ তাঁকে কতোভাবে কষ্ট দিয়েছে।
তিনি জগতের শ্রেষ্ঠতম সত্যবাদী। তা সত্ত্বেও বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে মিথ্যুক বলে গালি দিয়েছে। তাঁর মতো সুস্থ-নিখুঁত বুদ্ধি কার কখন ছিল? তথাপি তারা তাঁকে পাগল আখ্যায়িত করেছে। সর্বকালের সর্বোত্তম সারগর্ভ কথা তিনিই বলতেন। তারপরও তাঁর অমূল্য কথাকে অসার কল্পনা ঠাওরানোর মতলবে তাঁকে কবি বলে কটাক্ষ করত। মানুষের শ্রেষ্ঠতম দরদী বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। তাঁর পবিত্র শরীরে আঘাতের পর আঘাত করেছে, তাঁকে রক্তাক্ত করেছে। তাঁকে দেশছাড়া পর্যন্ত করেছে।
তিনি তাদের সকল নিষ্ঠুরতা ক্ষমা করেছেন। মন থেকে আঘাতের সব চিহ্ন মুছে ফেলেছেন। প্রাণের শত্রুরা যখন আসামীরূপে সামনে হাজির হয়েছে, অতীতের সব মলিনতা ভুলে পরম মমতায় তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এমন স্নেহ-ভালোবাসা ও এমন ইজ্জত-সম্মান তাদের দেখিয়েছেন যে, তারা নিজেরাও সব তিক্ততা চিরতরে ভুলে গেছে এবং একান্ত সেবকরূপে তাঁর জন্য কুরবান হয়ে গেছে।
শত্রুর শত্রুতা ভুলে তাকে বন্ধুতে পরিণত করা ছিল নবী কারীম (সা.)-এর আদর্শ। আঘাতের বিপরীতে কল্যাণকামনা ও কাদার বদলে সুবাস বিলানোই ছিল তাঁর সুন্নাত। অন্তরে মলিনতা পুষে রাখা তাঁর সুন্নাতের পরিপন্থী। তিনি নিজে কোনও দিনই তা পুষে রাখেননি এবং তা পুষে রাখাকে অন্যের জন্যও অনুমোদন করেননি। প্রিয়নবী (সা.)-এর সীরাতগ্রন্থ যারা পড়েছে, তারা জানে, জীবনে তিনি কতো শত্রুকে ক্ষমা করেছেন, কতো নিষ্ঠুরতা বিস্মৃত হয়েছেন এবং কতো গভীর আঘাতের চিহ্ন অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলেছেন।
উহুদ যুদ্ধের ঘটনা কে না জানে! বিজয়োন্মত্ত কাফেরগণ মুসলিম মুজাহিদদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল? শহীদদের লাশ কেটে টুকরো টুকরো করেছিল। হাত-পা, নাক-কান কেটে বিকৃত করে দিয়েছিল। হযরত হামযা (রা.)-এর বুক ফেড়ে হৃৎপিন্ড বের করে ফেলেছিল। আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দের উন্মত্ত আক্রোশ তাতেও মেটেনি। তার দাঁতের কামড়ে সে হৃৎপিন্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাদের হিংস্রতা যেন কোনওক্রমেই তৃপ্তি পাচ্ছিল না। তারা একযোগে নবী কারীম (সা.)-এর উপর হামলে পড়েছিল। তাদের আঘাতে তাঁর শিরোস্ত্রাণ ভেঙে যায়। তাঁর কড়া চোয়ালে ঢুকে পড়ে। তাতে তাঁর নূরানী দাঁত শহীদ হয়ে যায়। এতসব পৈশাচিকতা যারা চালিয়েছিল, সে বাহিনীর নেতৃত্ব কে দিয়েছিল? নেতৃত্ব যে দিয়েছিল তার নাম আবূ সুফয়ান।
আবূ সুফয়ানের অতীত জীবনের কুখ্যাতি অনেক। সে জীবনে তিনি ছিলেন বহু কুকর্মের হোতা। মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র তিনি চালিয়েছেন। অনেক অঘটন তখন তিনি ঘটিয়েছেন। তার সে জীবনের দুষ্কৃতির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। কিন্তু তার উপর্যুপরি দুষ্কর্মের একসময় ছেদ ঘটে। তা ঘটার পেছনে ছিল যে জিনিসের ভূমিকা, তা কেবলই নবী কারীম (সা.)-এর ওই সুন্নাত, যা তিনি জীবনভর সকল শত্রুর সঙ্গে রক্ষা করেছেন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত
আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে
মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা
শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস
চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স
৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট
খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত
ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া
সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২
সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা
শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য
নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী
পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন
বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া
যৌক্তিক সমালোচনা মানতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের নতুন কোচের
সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ