ঢাকা   সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যেদিন কোনো আর্তনাদ কাজে আসবে না-১

Daily Inqilab জুবায়ের আহমাদ আশরাফ

০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইবাদত-বন্দেগি ও দৈনন্দিন জীবন সঠিকভাবে নির্বাহ করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলের মাধ্যমে আমাদের পথনির্দেশ দান করেছেন। যারা আল্লাহ প্রদত্ত এ নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে নিজেদের জীবন পরিচালিত করবে তাদের জন্য মহা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তারাই প্রকৃত সফলকাম। তাদের জন্য রয়েছে শান্তিময় অনন্ত জীবন। সে জীবনে আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার সব উপকরণ অপরিমিতভাবে আপন অধিকারে থাকবে। সর্বোপরি তাদের প্রতি ঝরে পড়বে মহান রবের স্থায়ী সন্তুষ্টি।

অপরদিকে যারা আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশনা ঔদ্ধত্য প্রদর্শনপূর্বক স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে লঙ্ঘন করবে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ক্রোধের পাত্রে পরিণত হবে। তারা আল্লাহ পাকের বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। যেকোনো অপরাধী তার বিপথগামিতার কথা অনুধাবন করতে পেরে যদি সঠিক পথে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ পাক তাকেও সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। সে আপন কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ না করার সংকল্প করে তওবা করলে আল্লাহ গফুরুর রাহিম তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এই সুযোগ থাকবে মৃত্যু অবধি। মৃত্যুর পর দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে অপরাধীদের অনুতপ্ত বা তওবা করার দ্বারা কোনো ফলোদয় হবে না। সে কঠিন মুহূর্তের আফসোস ও হা-হুতাশ নিষ্ফল আর্তনাদে পরিণত হবে।

অপরাধীরা মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ে পুনরায় জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানে উঠবে অতিশয় ঘৃণিত ও অপমানজনক অবস্থায়। তারা পা দ্বারা চলার পরিবর্তে মুখ দিয়ে ভর দিয়ে অস্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। (মিশকাত শরিফ-২/৪৮৪) প্রথমত, তাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তি কিছুই থাকবে না। বাকশক্তি পাওয়ার পর তারা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে বলবেÑ ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো পৃথিবীতে ছিলাম চক্ষুষ্মান।’ (সূরা ত্বহা-১২৫)

আল্লাহ পাক তখন বলবেনÑ ‘আমার নির্দেশাবলি দুনিয়ায় তোমার নিকট এসেছিল। তুমি সেগুলো বর্জন করেছিলে এবং ভুলে গিয়েছিলে, সেভাবে আজ তোমার সাথে বিস্মৃতির আচরণ করা হলো, তোমাকে দৃষ্টিশক্তি রহিত করে উত্থিত করা হলো।’

হাশরের ময়দানে অপরাধীরা থাকবে ভীত-সন্ত্রস্ত। ভয়-বিহ্বলতায় তাদের চক্ষুদ্বয় হবে নীলবর্ণ, দৃষ্টি হবে নিষ্পলক, চেহারা বিবর্ণ, ফ্যাকাসে ও গ্লানিময় আচ্ছন্ন এবং হৃদয় আশাশূন্য। এহেন দুর্বিষহ অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা পুনর্বার পৃথিবীতে চলে আসার প্রার্থনা করবে, যা আদৌ সম্ভব নয়। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন তুমি আমাদের পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করো, আমরা সৎকর্ম করব, নিশ্চয়ই আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী।’ (সূরা সাজদা-১২)

আল্লাহ পাকের নিষিদ্ধ কাজ করা এবং যে কাজ গুরুত্বের সাথে আদেশ করা হয়েছে তা না করাই অপরাধ। এসব অপরাধের বহু শ্রেণি ও প্রকার রয়েছে। স্থান, কাল ও পাত্রভেদেও অপরাধের তারতম্য হয়। এর মধ্যে সর্ববিচারে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ও ভয়াবহ অপরাধ হলো আল্লাহ পাকের সঙ্গে কাউকে শরিক সাব্যস্ত করা। একেই বলা হয় শিরক। আর এ নিকৃষ্টতম অপরাধ যারা করে তাদের বলা হয় মুশরিক। আল্লাহ পাক বলেছেনÑ ‘শিরক চরম পর্যায়ের জুলুম।’ (সূরা লোকমান-১৩)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, ‘একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর কাছে জানতে চাইলেন, সবচেয়ে বড় অপরাধ কোনটি? রাসূল সা: তখন বললেন, ‘আল্লাহ পাক যিনি তোমার সৃষ্টিকর্তা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক সাব্যস্ত করা।’ (মিশকাত শরিফ-১/১৬)

যারা মূর্তিপূজা করে তারা মূলত অভিশপ্ত জিন ও শয়তানেরই পূজা করে থাকে। পূজারীদের ধারণা, মূর্তিগুলো তাদের কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ জন্য তারা মূর্তির সামনে আহার্য্য পানীয় উপস্থিত করে, ফুল চন্দন দ্বারা মূর্তির উদ্দেশে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে এবং গান-বাজনা ও নর্তন-কুর্দন দ্বারা মূর্তির বোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করে। তারা মূর্তির উদ্দেশে নৈবেদ্য ও উপঢৌকন পেশ করে, এগুলোর কাছে ঈপ্সিত বস্তু লাভে সাহায্য প্রার্থনা করে। পরকালে যখন দুরাচার জিন ও তাদের পূজারী মুশরিকদের পাকরাও করা হবে, তখন পূজিত জিন ও শয়তানরা তা সরাসরি অস্বীকার করে বলবে, ‘তোমরা কখনো আমাদের পূজা করোনি।’ আর মুশরিকরা ভয়-বিহ্বল কণ্ঠে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একে অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং তুমি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারিত করেছিলে এখন আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।’ (সূরা আনআম-১২৮)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কোনো কাজ ছোট হলেও সামান্য নয়-৩
কোনো কাজ ছোট হলেও সামান্য নয়-২
কোনো কাজ ছোট হলেও সামান্য নয়-১
পরিচ্ছন্নতা ইসলামের শিক্ষা-২
পরিচ্ছন্নতা ইসলামের শিক্ষা-১
আরও

আরও পড়ুন

প্রত্যেকটা হায়নার বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে: জুলাইয়ের গণহত্যা প্রসঙ্গে জামায়াতের আমীর

প্রত্যেকটা হায়নার বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে: জুলাইয়ের গণহত্যা প্রসঙ্গে জামায়াতের আমীর

জেলায় জেলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত

জেলায় জেলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত

ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে বেনাপোল সীমান্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ

ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে বেনাপোল সীমান্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ

প্রবাসী রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করবে: স্বেচ্ছাসেবক দল পর্তুগাল শাখার আহবায়ক মুকিতুর রহমান চৌধুরী সেলিম

প্রবাসী রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করবে: স্বেচ্ছাসেবক দল পর্তুগাল শাখার আহবায়ক মুকিতুর রহমান চৌধুরী সেলিম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার জয়িতাকে সংবর্ধনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার জয়িতাকে সংবর্ধনা

কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে লাঞ্ছিত করেছে দুই নারী

কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে লাঞ্ছিত করেছে দুই নারী

'সফল জননী নারী' ক্যাটাগরিতে সুনামগঞ্জে শ্রেষ্ঠ জয়িতা রত্নগর্ভা মাজেদা আক্তার

'সফল জননী নারী' ক্যাটাগরিতে সুনামগঞ্জে শ্রেষ্ঠ জয়িতা রত্নগর্ভা মাজেদা আক্তার

সারজিস আলম জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক

সারজিস আলম জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইদ্রিস খানের ইন্তেকাল

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইদ্রিস খানের ইন্তেকাল

বিজিবি’র অভিযান নভেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ২ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ

বিজিবি’র অভিযান নভেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ২ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ

কুষ্টিয়ায় ফিলিং স্টেশনে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস বিক্রয় করায় জরিমানা

কুষ্টিয়ায় ফিলিং স্টেশনে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস বিক্রয় করায় জরিমানা

কুষ্টিয়ায় ফুটপাতে গরম কাপড় কিনতে ক্রেতাদের ভীড়

কুষ্টিয়ায় ফুটপাতে গরম কাপড় কিনতে ক্রেতাদের ভীড়

‘হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে হবে’

‘হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে হবে’

নাগরিকদের ভোটার হওয়ার আহ্বান ইসির

নাগরিকদের ভোটার হওয়ার আহ্বান ইসির

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় নারী দলের ফুটবলাররা

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় নারী দলের ফুটবলাররা

আরেক স্বৈরাচারের পতন, সিরিয়ায় বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কায় ভারত

আরেক স্বৈরাচারের পতন, সিরিয়ায় বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কায় ভারত

দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

নারীরা মায়ের জাতি, তাঁদের স্থান সবার উপরে- সিলেট বিভাগীয় কমিশনার

নারীরা মায়ের জাতি, তাঁদের স্থান সবার উপরে- সিলেট বিভাগীয় কমিশনার

শিবালয়ে স্বর্ণালংকা ও নগদ অর্থ চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ৪

শিবালয়ে স্বর্ণালংকা ও নগদ অর্থ চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ৪

বিপন্ন সংবিধান! ১৪ ডিসেম্বর সংসদে জবাব দেবেন মোদি

বিপন্ন সংবিধান! ১৪ ডিসেম্বর সংসদে জবাব দেবেন মোদি