ঢাকা   সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রকৃত পথ

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

মানুষ মুক্তি চায়, আবার বন্ধনও কামনা করে। স্বাধীনতা চায়, সমর্পিত হতেও পছন্দ করে। নিজের ইচ্ছায় চলতে চায় আবার অন্যের অনুসারীও হয়। শূন্যে উড়তে চায়, মাটিতে ফেরার জন্যও উন্মুখ হয়। দেহ আত্মার সমন্বয়ে গঠিত মানবের ঝোঁক ও প্রবণতা অতি বিচিত্র। সুতরাং মানুষ স্বাধীনতা-প্রবণ এ যেমন সত্য, মানুষ সমর্পণপ্রিয় এও মিথ্যা নয়। মানুষের সঠিক ও যথার্থ নির্দেশনার জন্য তাই প্রয়োজন স্বাধীনতা ও সমর্পণের ক্ষেত্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা। এটিই মানুষকে দান করতে পারে শান্তি ও স্বাভাবিকতা। আর এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি মানুষকে নিক্ষেপ করবে অশান্তি ও অস্থিরতায়।

আদম-সন্তানের চরম শত্রু শয়তান এখানেই তাকে বিভ্রান্ত করে। মানবের শক্তি ও প্রবণতাগুলো ব্যবহার করেই সে তাকে বিপথগামী করে। সে শুধু ক্ষেত্র পরিবর্তন করে। সমর্পণের ক্ষেত্রগুলোতে শয়তান মানুষকে অবাধ্য ও বিদ্রোহী করে। আর বর্জন ও দ্রোহের ক্ষেত্রগুলোতে সমর্পিত করে। শয়তানের কাজ এটুকুই শুধু ক্ষেত্র পরিবর্তন। এরপর মানুষ নিজের মেধা ও শক্তির দ্বারাই ভ্রষ্টতার পথে চলতে থাকে আর মনযিল থেকে দূরে বহু দূরে সরে যেতে থাকে।

শয়তান মানুষকে বিদ্রোহী করে তার করুণাময় স্রষ্টা ও তাঁর কল্যাণময় বিধানের প্রতি, পরম হিতাকাক্সক্ষী রাসূল ও তাঁর হেদায়েতপূর্ণ আদর্শের প্রতি। আর সমর্পিত করে নিজের গোলামীতে, প্রবৃত্তির গোলামীতে ও অসংখ্য মানব-প্রভুর গোলামীতে। প্রতারিত আদম-পুত্র একেই মনে করে আযাদী ও স্বাধীনতা।

আল্লাহর বন্দেগী থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে মূর্তি ও ভাস্কর্য পূজায়, প্রাণী, প্রকৃতি ও সমাধির উপাসনায়। মানবতার এ চরম অবমাননাও ‘যুক্তিবাদী’ মানুষের কাছে যুক্তি-বিরুদ্ধ মনে হয় না। ‘মুক্তি-প্রিয়’ মানুষ সমর্পিত চিত্তে একেই বলে ‘ধর্ম’, বলে ‘শিল্প’, বলে ‘সংস্কৃতি’! এমনকি অনেকের কাছে তা হয় ‘জাতীয়তা’, হয় ‘শেকড়ে ফেরা’!! আল্লাহর বিধান থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে মানবের বিধানে। ‘স্বাধীন’ মানুষ নিজের মতোই আরেক মানুষকে গ্রহণ করে প্রভু ও বিধানদাতা রূপে। তার উপর অর্পণ করে বৈধতা-অবৈধতা নির্ধারণের ভার এবং আল্লাহর ফয়সালার বিরোধী হলেও তা গ্রহণ করে অকুণ্ঠ চিত্তে। এ অধীনতা অন্যায় ও অবমাননাকর কি নাÑ এ প্রশ্নও ‘মুক্তি-প্রিয়’ মানুষের মনে জাগে না।

রাসূলের সুন্নাহ থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে সমাজের প্রচলনে, ধর্মের নামে উদ্ভাবিত নতুন নতুন বিধানে এবং ভোগবাদী জীবন-ব্যবস্থার অন্ধ অনুকরণে। স্বাধীনতা-প্রিয় মানুষের মনে এখানেও কোনো প্রশ্ন জাগে না। এ জীবনব্যাপী অধীনতা একটুও খারাপ লাগে না। বরং এর সপক্ষেই উচ্চারিত হয় কঠিন কঠিন যুক্তি।

নির্মল ইসলামী পরিবার-ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে নিক্ষেপ করে অশ্লীলতা, পাপাচার ও স্বেচ্ছাচারে। এর শিরোনাম হয় আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা। ‘মুক্তিপ্রিয়’ মানুষের কাছে রিপু ও প্রবৃত্তির এ দাসত্ব মোটেও দাসত্ব মনে হয় না। একে মনে হয় ‘জড়তা-মুক্তি’ ও ‘সংস্কার-মুক্তি’। আর এ উচ্ছৃঙ্খল, অনিয়ন্ত্রিত জীবন অভিহিত হয় ‘মুক্ত তারুণ্য’ নামে।

নারী-পুরুষের মাঝে অন্দর-বাহিরের সুষম কর্ম-বণ্টন থেকে সরিয়ে শয়তান নারীকে নিক্ষেপ করে অসংখ্য পুরুষের সাথে এক লাঞ্ছনাপূর্ণ অসম প্রতিযোগিতায়। পুঁজিবাদী জীবন-ব্যবস্থায় নারীকে পণ্য করার এ প্রক্রিয়াই আখ্যায়িত হয় ‘নারী-মুক্তি’ নামে। তবুও ‘স্বাধীন’ মানুষের মনে কোনো প্রশ্ন জাগে না, দ্রোহের সঞ্চার হয় না। সমর্পিত চিত্তে ধুরন্ধর মানব-শ্রেণির এ অধীনতাই সে শিরোধার্য করে।

এই যে ক্ষেত্র-পরিবর্তন, বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সমর্পণ আর সমর্পণের ক্ষেত্রে বিদ্রোহের এই যে মন্ত্রণা এই হচ্ছে আদম পুত্রের মহা দুশমন শয়তানে রাজীমের মহা প্রতারণা। এ দুশমন সম্পর্কে সাবধান করার জন্য এবং জীবনের সব বিষয়ের স্বরূপ ও যথার্থতা বোঝাবার জন্যই তো প্রজ্ঞাময় কুরআনের আগমন। কুরআন মানুষকে মুক্তি দেয় কুরআন মানুষকে সমর্পিত করে।

কুরআন মানুষকে মুক্তি দেয় শয়তানের ‘উপাসনা’, প্রবৃত্তির দাসত্ব আর মানুষের গোলামী থেকে। মানুষকে সে সমর্পিত করে তাঁর করুণাময় স্রষ্টার প্রতি, তাঁর কল্যাণপূর্ণ পথনির্দেশের প্রতি আর তাঁর প্রেরিত মানবতার মুক্তি-দূত আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-র পবিত্র জীবনাদর্শের প্রতি। তাই কুরআনের যে অনুসারী সেই লাভ করে প্রকৃত মুক্তি, যথার্থ স্বাধীনতা। কবি বলেন, ওই একটি মাত্র সিজদা, যা তোমার কাছে অতি কষ্টের তাই তোমাকে মুক্তি দিবে হাজার ‘সিজদা’ থেকে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সালাম : আমাদের স্বকীয়তা-১
ব্যক্তি ও কর্মের ভালো-মন্দ-২
ব্যক্তি ও কর্মের ভালো-মন্দ-১
পানাহার হালাল না হলে নেক আমলের মূল্য থাকে না
কাজের মানুষকে দিনে সত্তরবার ক্ষমা করো
আরও

আরও পড়ুন

ইফার প্রথম বোর্ড সভা কাল

ইফার প্রথম বোর্ড সভা কাল

আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হামলার নিন্দা বিএসপি চেয়ারম্যানের

আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে হামলার নিন্দা বিএসপি চেয়ারম্যানের

মৌলভীবাজারে মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত, গুরুতর আহত ১ জন

মৌলভীবাজারে মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত, গুরুতর আহত ১ জন

আমু-কামরুলকে হাজির করার নির্দেশ

আমু-কামরুলকে হাজির করার নির্দেশ

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার মেনন, ইনু, দীপু মনি ও পলক,

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার মেনন, ইনু, দীপু মনি ও পলক,

প্রতিশ্রুতি ভেঙে ছেলেকে ক্ষমা বাইডেনের

প্রতিশ্রুতি ভেঙে ছেলেকে ক্ষমা বাইডেনের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

রূপগঞ্জে ফের হত্যা করতে সাংবাদিকের বসতঘরে সন্ত্রাসীদের গুলি

রূপগঞ্জে ফের হত্যা করতে সাংবাদিকের বসতঘরে সন্ত্রাসীদের গুলি

ভারত বাংলাদেশি কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ

ভারত বাংলাদেশি কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

'২০২৪ সালে শোবিজে শিরোনাম হয়েছেন টেইলর সুইফট, ওয়েসিস এবং শন ‘ডিডি’ কম্বস', এক নজরে দেখে নিন

'২০২৪ সালে শোবিজে শিরোনাম হয়েছেন টেইলর সুইফট, ওয়েসিস এবং শন ‘ডিডি’ কম্বস', এক নজরে দেখে নিন

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

প্রাক বড়দিন পালন করলে গারো পাহাড় সীমান্তে খ্রীষ্টানরা

প্রাক বড়দিন পালন করলে গারো পাহাড় সীমান্তে খ্রীষ্টানরা

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন

ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা

ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা

রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প

মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প

গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান

গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান