মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রকৃত পথ

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

মানুষ মুক্তি চায়, আবার বন্ধনও কামনা করে। স্বাধীনতা চায়, সমর্পিত হতেও পছন্দ করে। নিজের ইচ্ছায় চলতে চায় আবার অন্যের অনুসারীও হয়। শূন্যে উড়তে চায়, মাটিতে ফেরার জন্যও উন্মুখ হয়। দেহ আত্মার সমন্বয়ে গঠিত মানবের ঝোঁক ও প্রবণতা অতি বিচিত্র। সুতরাং মানুষ স্বাধীনতা-প্রবণ এ যেমন সত্য, মানুষ সমর্পণপ্রিয় এও মিথ্যা নয়। মানুষের সঠিক ও যথার্থ নির্দেশনার জন্য তাই প্রয়োজন স্বাধীনতা ও সমর্পণের ক্ষেত্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা। এটিই মানুষকে দান করতে পারে শান্তি ও স্বাভাবিকতা। আর এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি মানুষকে নিক্ষেপ করবে অশান্তি ও অস্থিরতায়।

আদম-সন্তানের চরম শত্রু শয়তান এখানেই তাকে বিভ্রান্ত করে। মানবের শক্তি ও প্রবণতাগুলো ব্যবহার করেই সে তাকে বিপথগামী করে। সে শুধু ক্ষেত্র পরিবর্তন করে। সমর্পণের ক্ষেত্রগুলোতে শয়তান মানুষকে অবাধ্য ও বিদ্রোহী করে। আর বর্জন ও দ্রোহের ক্ষেত্রগুলোতে সমর্পিত করে। শয়তানের কাজ এটুকুই শুধু ক্ষেত্র পরিবর্তন। এরপর মানুষ নিজের মেধা ও শক্তির দ্বারাই ভ্রষ্টতার পথে চলতে থাকে আর মনযিল থেকে দূরে বহু দূরে সরে যেতে থাকে।

শয়তান মানুষকে বিদ্রোহী করে তার করুণাময় স্রষ্টা ও তাঁর কল্যাণময় বিধানের প্রতি, পরম হিতাকাক্সক্ষী রাসূল ও তাঁর হেদায়েতপূর্ণ আদর্শের প্রতি। আর সমর্পিত করে নিজের গোলামীতে, প্রবৃত্তির গোলামীতে ও অসংখ্য মানব-প্রভুর গোলামীতে। প্রতারিত আদম-পুত্র একেই মনে করে আযাদী ও স্বাধীনতা।

আল্লাহর বন্দেগী থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে মূর্তি ও ভাস্কর্য পূজায়, প্রাণী, প্রকৃতি ও সমাধির উপাসনায়। মানবতার এ চরম অবমাননাও ‘যুক্তিবাদী’ মানুষের কাছে যুক্তি-বিরুদ্ধ মনে হয় না। ‘মুক্তি-প্রিয়’ মানুষ সমর্পিত চিত্তে একেই বলে ‘ধর্ম’, বলে ‘শিল্প’, বলে ‘সংস্কৃতি’! এমনকি অনেকের কাছে তা হয় ‘জাতীয়তা’, হয় ‘শেকড়ে ফেরা’!! আল্লাহর বিধান থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে মানবের বিধানে। ‘স্বাধীন’ মানুষ নিজের মতোই আরেক মানুষকে গ্রহণ করে প্রভু ও বিধানদাতা রূপে। তার উপর অর্পণ করে বৈধতা-অবৈধতা নির্ধারণের ভার এবং আল্লাহর ফয়সালার বিরোধী হলেও তা গ্রহণ করে অকুণ্ঠ চিত্তে। এ অধীনতা অন্যায় ও অবমাননাকর কি নাÑ এ প্রশ্নও ‘মুক্তি-প্রিয়’ মানুষের মনে জাগে না।

রাসূলের সুন্নাহ থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে সমাজের প্রচলনে, ধর্মের নামে উদ্ভাবিত নতুন নতুন বিধানে এবং ভোগবাদী জীবন-ব্যবস্থার অন্ধ অনুকরণে। স্বাধীনতা-প্রিয় মানুষের মনে এখানেও কোনো প্রশ্ন জাগে না। এ জীবনব্যাপী অধীনতা একটুও খারাপ লাগে না। বরং এর সপক্ষেই উচ্চারিত হয় কঠিন কঠিন যুক্তি।

নির্মল ইসলামী পরিবার-ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে শয়তান মানুষকে নিক্ষেপ করে অশ্লীলতা, পাপাচার ও স্বেচ্ছাচারে। এর শিরোনাম হয় আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা। ‘মুক্তিপ্রিয়’ মানুষের কাছে রিপু ও প্রবৃত্তির এ দাসত্ব মোটেও দাসত্ব মনে হয় না। একে মনে হয় ‘জড়তা-মুক্তি’ ও ‘সংস্কার-মুক্তি’। আর এ উচ্ছৃঙ্খল, অনিয়ন্ত্রিত জীবন অভিহিত হয় ‘মুক্ত তারুণ্য’ নামে।

নারী-পুরুষের মাঝে অন্দর-বাহিরের সুষম কর্ম-বণ্টন থেকে সরিয়ে শয়তান নারীকে নিক্ষেপ করে অসংখ্য পুরুষের সাথে এক লাঞ্ছনাপূর্ণ অসম প্রতিযোগিতায়। পুঁজিবাদী জীবন-ব্যবস্থায় নারীকে পণ্য করার এ প্রক্রিয়াই আখ্যায়িত হয় ‘নারী-মুক্তি’ নামে। তবুও ‘স্বাধীন’ মানুষের মনে কোনো প্রশ্ন জাগে না, দ্রোহের সঞ্চার হয় না। সমর্পিত চিত্তে ধুরন্ধর মানব-শ্রেণির এ অধীনতাই সে শিরোধার্য করে।

এই যে ক্ষেত্র-পরিবর্তন, বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সমর্পণ আর সমর্পণের ক্ষেত্রে বিদ্রোহের এই যে মন্ত্রণা এই হচ্ছে আদম পুত্রের মহা দুশমন শয়তানে রাজীমের মহা প্রতারণা। এ দুশমন সম্পর্কে সাবধান করার জন্য এবং জীবনের সব বিষয়ের স্বরূপ ও যথার্থতা বোঝাবার জন্যই তো প্রজ্ঞাময় কুরআনের আগমন। কুরআন মানুষকে মুক্তি দেয় কুরআন মানুষকে সমর্পিত করে।

কুরআন মানুষকে মুক্তি দেয় শয়তানের ‘উপাসনা’, প্রবৃত্তির দাসত্ব আর মানুষের গোলামী থেকে। মানুষকে সে সমর্পিত করে তাঁর করুণাময় স্রষ্টার প্রতি, তাঁর কল্যাণপূর্ণ পথনির্দেশের প্রতি আর তাঁর প্রেরিত মানবতার মুক্তি-দূত আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-র পবিত্র জীবনাদর্শের প্রতি। তাই কুরআনের যে অনুসারী সেই লাভ করে প্রকৃত মুক্তি, যথার্থ স্বাধীনতা। কবি বলেন, ওই একটি মাত্র সিজদা, যা তোমার কাছে অতি কষ্টের তাই তোমাকে মুক্তি দিবে হাজার ‘সিজদা’ থেকে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পিতার কর্তব্য : সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান-১
ইসলামে সহমর্মিতা ও সমাজসেবা
রমজানের বিদায়েও জাগ্রত থাকুক সাওমের শিক্ষা
ঈদুল ফিতর : ‘আল্লাহু আকবারে’র চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন
সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ
আরও
X

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে সবসময় নেয়ার চেষ্টা করেছে ভারত: জামায়াত

বাংলাদেশ থেকে সবসময় নেয়ার চেষ্টা করেছে ভারত: জামায়াত

বিএনপি এদেশের জনগণের আস্থার দল -আমান উল্লাহ আমান

বিএনপি এদেশের জনগণের আস্থার দল -আমান উল্লাহ আমান

বিভেদ না করে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করুন : সুপ্রদীপ চাকমা

বিভেদ না করে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করুন : সুপ্রদীপ চাকমা

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

আমেরিকার পথে 'ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ'র দল

আমেরিকার পথে 'ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ'র দল

আনোয়ারায় ৭০জন বাচ্চাকে ফ্রি খতনা

আনোয়ারায় ৭০জন বাচ্চাকে ফ্রি খতনা

বাংলাদেশি লেনিন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী

বাংলাদেশি লেনিন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী

উইন্ডিজ ও দ. আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে ভারত

উইন্ডিজ ও দ. আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে ভারত

বিচার বিভাগ অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে-প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগ অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে-প্রধান বিচারপতি

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি