ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আল্লাহ তওবা কবুলকারী

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

তওবা কাকে বলে? আলিমগণ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তওবার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবেÑ ‘কারো যখন গোনাহ হয়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেই গোনাহ পরিত্যাগ করবে। সেই গোনাহর জন্যে অনুতপ্ত হবে এবং ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করবে। আর সেই গোনাহর ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান যদি শরিয়তে থাকে তাহলে তা পালন করবে।’ যেমনÑ কারো নামাজ কাজা হয়ে গেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক দিন নামাজ পরিত্যাগ করেছে। তাহলে তাকে সেই নামাজগুলোও কাজা করতে হবে।

এমনিভাবে কেউ যদি কারো কাছ থেকে অন্যায়ভাবে সম্পদ নিয়ে থাকে। ছিনতাই বা আত্মসাৎ করে থাকে, তাহলে তার তওবা শুধু এটুকুই নয় যে, সে অনুতপ্ত হবে এবং ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করবে; বরং তাকে সেই লুণ্ঠিত বা আত্মসাৎকৃত সম্পদও ফিরিয়ে দিতে হবে। সুতরাং তওবা পূর্ণ হয় তিন কাজের দ্বারা : এক. অনুতপ্ত হওয়া। দুই. গোনাহ ছেড়ে দেয়া ও ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করা। তিন. ক্ষতিপূরণের যে বিধান ইসলামি শরিয়তে আছে তা পালন করা। এই তিন কাজ যখন হয় তখন তওবা পূর্ণ হয়। তখন আল্লাহপাক ওই বান্দাকে কবুল করেন।

কুরআন মাজিদের ফরমানÑ ‘আল্লাহপাক বান্দার তওবা খুব কবুল করেন। বারবার কবুল করেন।’ আল্লাহপাকের এক পবিত্র নাম ‘আত তাওয়াব’। অর্থাৎ আল্লাহপাক বান্দার দিকে বারবার রহমতের দৃষ্টি দেন। বারবার তওবা কবুল করেন। কুরআন মাজিদে যেখানে ‘আত তাওয়াব’ নাম এসেছে, সেখানে ‘আত তাওয়াব’-এর সাথে আনা হয়েছে ‘আর রাহিম’ নাম। অর্থাৎ আল্লাহপাক তাঁর দয়া ও করুণার কারণে বান্দার তওবা বারবার কবুল করেন।
তো এই আয়াতে আল্লাহপাক আমাদের জন্যে, আমাদের বাস্তব জীবনের জন্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি দান করেছেন। গোনাহকে সামান্য মনে না করা। অন্তরে গোনাহর ভাব সৃষ্টি হওয়ামাত্র সাবধান হওয়া। আর কখনো গোনাহ হয়ে গেলে হতাশ না হওয়া। আল্লাহপাকের রহমত থেকে তো ওই ব্যক্তি হতাশ হয়, যে আল্লাহপাকের রহমতকে ছোট মনে করে।

আল্লাহপাক এক হাদিসে কুদসিতে তাঁর মাগফিরাতের প্রশস্ততা বর্ণনা করেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ বলেনÑ ‘হে আদম সন্তান! তোমার পক্ষ হতে যা-ই প্রকাশ পাক, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে আশা করতে থাকবে আমি তোমাকে ক্ষমা করতে থাকব এবং আমি কোনো পরোয়া করব না। তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, (পৃথিবীর সব শূন্যতা ভরাট করে) আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরপর তুমি ইসতিগফার করো, তো আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো এবং কোনো পরোয়াই করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি আমার কাছে আসো পৃথিবী-ভরা ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আর আসো কোনো কিছুকে আমার সাথে শরিক না করে তাহলে আমি তোমার সাথে সাক্ষাৎ করব পৃথিবী-ভরা মাগফিরাত নিয়ে।’ (জামে তিরমিজি-৩৫৪০)

আল্লাহপাক এত বেনিয়াজ, এত অমুখাপেক্ষী যে, বান্দাকে ক্ষমা করার জন্যে কোনো কিছুর পরোয়া করার দরকার পড়ে না। ‘এত বড় গোনাহগার এতো বড় পাপী! কীভাবে আপনি তাকে ক্ষমা করলেন’- এমন প্রশ্ন করার কেউ নেই। সে জন্য আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘আমি তোমাকে মাফ করে দেবো এবং কোনো পরোয়াই করব না।’ তো যে মালিক এভাবে বান্দাকে ক্ষমা করতে প্রস্তুত সেই মালিকের কাছ থেকে কেন আমি ক্ষমা নেবো না? কেন তাঁর কাছে ছুটে যাবো না?

কুরআন পাকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় বান্দাকে তওবার দিকে ডেকেছেন। আল্লাহর দিকে ফিরে আসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। সে জন্য আমাদের কর্তব্য, গোনাহ হয়ে গেলেই তওবা করা। সেই রহমান ও রাহিম আল্লাহর কাছে ফিরে আসা এবং তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করা। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। সবাইকে কবুল করুন। সবাইকে তাঁর নৈকট্যশীল ও প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ

সেনাবাহিনী যেতেই রাস্তা ছেড়ে পালালেন রিকশাচালকরা!

সেনাবাহিনী যেতেই রাস্তা ছেড়ে পালালেন রিকশাচালকরা!

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে কোরিয়া

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে কোরিয়া

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ তাদের মতামত জোর করে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিতো

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ তাদের মতামত জোর করে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিতো

ফরিদপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল মা ও মেয়ের

ফরিদপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল মা ও মেয়ের

পতিত স্বৈরাচারের দোসর বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়া আলাউদ্দিন নাসিম এখন কোথায়?

পতিত স্বৈরাচারের দোসর বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়া আলাউদ্দিন নাসিম এখন কোথায়?

টঙ্গীবাড়ীতে সার ও বীজ আলু ডিলাদের সাথে ইউএনওর মত বিনিময় সভা

টঙ্গীবাড়ীতে সার ও বীজ আলু ডিলাদের সাথে ইউএনওর মত বিনিময় সভা

বরিশাল মহানগরীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল দেশীয় অস্ত্র সহ দুজন আটক

বরিশাল মহানগরীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল দেশীয় অস্ত্র সহ দুজন আটক

জনগনকে সেবা দিতে হবে গফরগাঁওয়ে - ময়মনসিংহ নবাগত জেলা প্রশাসক

জনগনকে সেবা দিতে হবে গফরগাঁওয়ে - ময়মনসিংহ নবাগত জেলা প্রশাসক

খুলনা বিভাগীয় বইমেলা ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু

খুলনা বিভাগীয় বইমেলা ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু

সালথায় স্কুলের যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল প্রধান শিক্ষকের

সালথায় স্কুলের যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল প্রধান শিক্ষকের

জাতির উন্নতিতে কোনো নেতাই কাজ করেনি: শিবির সভাপতি

জাতির উন্নতিতে কোনো নেতাই কাজ করেনি: শিবির সভাপতি

দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্যাং-শাসিত অবৈধ স্বর্ণখনির ঝুঁকির জীবন

দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্যাং-শাসিত অবৈধ স্বর্ণখনির ঝুঁকির জীবন

নির্বাচন কমিশন গঠিত, নতুন সিইসি নাসির উদ্দীন

নির্বাচন কমিশন গঠিত, নতুন সিইসি নাসির উদ্দীন

সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা পেলেন সাফজয়ী ৩ খেলোয়াড়

সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা পেলেন সাফজয়ী ৩ খেলোয়াড়

সকাল থেকে স্থবির মহাখালী, ভোগান্তি চরমে

সকাল থেকে স্থবির মহাখালী, ভোগান্তি চরমে

নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে মিললো যুবকের গলাকাটা লাশ

নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে মিললো যুবকের গলাকাটা লাশ

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আপিলের বিধান রাখার কারণ জানালেন আইন উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আপিলের বিধান রাখার কারণ জানালেন আইন উপদেষ্টা

ট্রাম্পের এ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট গেটজের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল!

ট্রাম্পের এ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট গেটজের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল!

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি মেহেদীর জামিন স্থগিত

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি মেহেদীর জামিন স্থগিত

Veet